২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পটুয়াখালী’র রাঙ্গাবালী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৫২ অপরাহ্ণ, ১২ জুন ২০২০

সাইফুল ইসলাম সায়েম, রাঙ্গাবালী:: দৃষ্টি নন্দন সমুদ্রসৈকত; বালুচরে লাল কাঁকড়ার দলবেঁধে ছোটাছুটি, পাখির কলকাকলি, ঢেউয়ের গর্জন, বাতাসের তালে ঘন ম্যানগ্রোভ বনের ঝাউপাতার শোঁ শোঁ শব্দ। সমুদ্রতটে চিকচিকে বালুতে পা ফেলানো আর হঠাৎ সমুদ্রের জলরাশি ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাওয়া। সাজবেলায় পূর্বাকাশে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সূর্যটা।

বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার মতো দৃশ্য যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করার মতো অতুলনীয় স্পটের নাম সোনারচর, জাহাজমারা ও চরতুফানিয়া দ্বীপ। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময়ী এ তিন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় অবস্থিত। এ স্পটগুলো নিয়ে যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমন সমস্যাও রয়েছে। সেখানকার পর্যটনে সবচেয়ে বড় বাঁধা যোগাযোগ ব্যবস্থা।

সোনারচর: সোনারচরে সোনা নেই ঠিকই, কিন্তু আছে সোনার রঙের বালি। সূর্যের রশ্মি যখন বালির ওপর পড়ে তখন দূর থেকে মনে হয়, সত্যি সত্যিই সোনার আবির্ভাব হয়েছে এখানে। সোনারচরে রয়েছে বিশাল বনভূমি।

বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, সুন্দরবনের পরই আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সমুদ্র সৈকত। এটি রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের আওতাধীন। জানা গেছে, সম্প্রতি সোনারচরের ২০ হাজার ২৪ হেক্টর বিস্তৃত বনভূমিসহ ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতজুড়ে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকার।

এসব এলাকাজুড়ে বাস্তবায়ন হবে মহাপরিকল্পনা। আধুনিক অবকাঠামো তৈরি হবে। এর আগে সমীক্ষা করা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকা। এ কাজে ৬৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় করবে সরকার। সোনারচরকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে সমীক্ষা কাজ পরিচালনায় দুই কোটি টাকা মূল্যের কয়েকটি ড্রোন ব্যবহার করা হবে। চলতি সময় থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে সার্ভের কাজ শেষ হবে।

জাহাজমারা থেকে চরতুফানিয়া: নয়নাভিরাম সৌন্দর্যঘেরা সমুদ্রসৈকত ‘জাহাজমারা’। রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রস্তাবিত মৌডুবি ইউনিয়নে এটির অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে পর্যটকরা এসব স্থানে আসেন কিছুটা প্রশান্তির খোঁজে।

অথচ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসব স্থানে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে উঠলে পর্যটকদের যাতায়াত সহজ হতে পারে, আর সরকারও আয় করতে পারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। সরকার এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা না করলেও পর্যটকরা একটু স্বস্তির খোঁজে এখানে ছুটে আসছেন।

জাহাজমারার কাছেই আরেকটি সৌন্দর্য ঘেরা দ্বীপ চরতুফানিয়া। জাহাজমারা স্লুইসগেট কিংবা জাহাজমারা সৈকত থেকে ট্রলারযোগে তুফানিয়ার যেতে হয়। এটি পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ পরিচিত।

যোগাযোগ সমস্যা ও সমাধানঃ পর্যটনের সম্ভাবনাময়ী এলাকা রাঙ্গাবালী। এর চার পাশ নদী ও সাগর দ্বারা বেষ্টিত। সারা দেশের সঙ্গে এখানকার যোগাযোগ মাধ্যম একমাত্র নৌপথ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোড়ালিয়া থেকে পানপট্টি ফেরি সেবা চালু করলে সারা দেশের সঙ্গে রাঙ্গাবালীর সড়ক যোগাযোগ চালু হবে।

এছাড়াও কুয়াকাটা থেকে সোনারচর হয়ে জাহাজমারা থেকে চরতুফানিয়া পর্যন্ত সি-ট্রাক কিংবা লঞ্চ সেবা চালু, সোনারচর-জাহাজমারা ও চরতুফানিয়ায় পন্টুন স্থাপনের দাবি উঠেছে। একই সঙ্গে হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউসসহ আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করলে পর্যটকদের এসব দ্বীপে আসার আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাশফাকুর রহমান বলেন, শুধু যোগাযোগ সমস্যা এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে আমরা ইতোমধ্যে কোড়ালিয়া-পানপট্টি নৌরুটে ফেরি সেবা চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। ফেরি চালু হলে সারা দেশের সঙ্গে রাঙ্গাবালীর সড়ক যোগাযোগ হবে। আর পর্যটন স্পটগুলোয় সরাসরি নৌযানে যাতায়াতের সুযোগ করা হলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন