২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

অপেক্ষা আর এক মাসের: ২২ জুন উদ্বোধন পদ্মা সেতু

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:১৪ অপরাহ্ণ, ২৩ মে ২০২২

অপেক্ষা আর এক মাসের: ২২ জুন উদ্বোধন পদ্মা সেতু

হাসান মাহামুদ রিপন:: শেষ হতে চলেছে অপেক্ষা প্রহর। আসছে জুনের শেষ সপ্তাহে বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে পদ্মার দুই পাড়ে। কেউ বলছেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন (২৩ জুন), কেউবা বলছেন ২৩ থেকে ২৫ জুনের মধ্যে যে কোনো দিন হতে পারে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। তবে, নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি— সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং প্রধানমন্ত্রী সময়সূচি নিশ্চিত করলে ২২ জুন হতে পারে বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে এমনটাই জানা গেছে।

সরজমিনে দেখা গেছে- এক এক করে পদ্মা সেতুর সব কাজই শেষের পথে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে স্থাপন করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যুরাল। নদীর এপাড় থেকে ওপাড়ে ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যানকে যুক্ত করে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর মূল অংশে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ। এর আগে ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর পদ্মা সেতুর পিচঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। এখন বাকি আছে কেবল ট্রাফিক সংকেত ও সিগন্যাল বসানো। সেতুর দুই অংশে যানবাহন ওঠা-নামার পথ বা ভায়াডাকের কিছু অংশে পিচঢালাই বাকি আছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে। আগেই শেষ হয়েছে সড়ক বাতি স্থাপনের কাজ। সেতুতে বসানো ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। চলতি মাসের শেষেই পদ্মার ওপর সেতুর সড়ক বাতি জ্বলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতুজুড়ে চলছে রোড মার্কিংয়ের কাজ। সেতুর মাওয়া প্রান্তে এরই মধ্যে মডিউল-২ এর ৭৫ শতাংশেরও বেশি মার্কিং করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টার্গেটের চেয়েও বেশি কাজ হয়েছে। এই অংশের বাকি থাকা প্রায় সাড়ে ৭শ’ মিটার এলাকায় এক লেয়ারে ৫০ মিটার পুরুত্বের এই কার্পেটিং শেষ করা হয়েছে। ২৯ এপ্রিল মূল সেতুতে কার্পেটিংয়ের পর এখন ২২ মে’র মধ্যে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের কার্পেটিং শেষ হতে যাচ্ছে। এছাড়া পদ্মা সেতুর সড়কপথের সবশেষ কাজ রোড মার্কিংও চলছে পুরোদমে। সেতুর ১৩ নম্বর খুঁটির থেকে এই মার্কিং শুরু হয়। মার্কিং করে এখন ৭ নম্বর খুঁটির দিকে এগোচ্ছে। সেতুর ২ নম্বর মডিউলে মার্কিং করা হয়েছে। এই মডিউলের অংশে রোড মার্কিং অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ।

সেতুর দুই প্রান্তে বিদ্যুতের দুটি অস্থায়ী সাব-স্টেশন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন প্রায়। চলতি মাসেই এই সাব-স্টেশনের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা। এই দুই স্টেশন থেকেই ল্যাম্পপোস্টগুলোতে আলো জ্বলে উঠবে। এই সাব-স্টেশনের বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্যও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতুতে এক এক করে ফিনিশিং সব কাজই শেষের পথে এখন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হবে রোড মার্কিংয়ের কাজ। আর পহেলা জুনে সেতু আলোকিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য সেতুর কাজ ২০১৪ সালে শুরু হয়। জুন মাসে সেতুটি যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম জানান, দিন-রাত কাজ চলছে। জুন আমাদের টার্গেট। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

জানা গেছে- মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনের পর গাড়িতে চড়ে জাজিরা প্রান্তে যাবেন পদ্মা সেতুর রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী দিনে পদ্মার দুই পাড়েই আয়োজন করা হবে সুধী সমাবেশের। এতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন আতশবাজিসহ পুরো পদ্মা সেতু নান্দনিক রূপে সাজানোর পরিকল্পনা আছে সংশ্লিষ্টদের। উদ্বোধনের আয়োজন নিখুঁত করতে ১৮টি উপ-কমিটি গঠন করেছে সেতু বিভাগ। দেশের বিশিষ্টজনের পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে কাজ করা বিশ্বের নানা দেশের কূটনীতিককে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেদিন প্রকল্প বাস্তায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিরাও থাকবেন সামনের সারিতে। যাবতীয় কাজ শেষে উদ্বোধনের দুই সপ্তাহ আগে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পদ্মা সেতু বুঝে নেবে সেতু বিভাগ।

এদিকে, পদ্মা সেতুর খরচ ওঠাতে কত সময় লাগতে পারে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে বলেন, পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হার সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যেমন ছিল যে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে। কারণ মোংলা পোর্ট যে এত শক্তিশালী হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে সেগুলো কিন্তু ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি। তিনি বলেন, ধারণা ছিল পদ্মা সেতু ১ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আনবে। এখন দেখা যাচ্ছে, এটা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ২ এর কাছাকাছি চলে যাবে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জুন মাসের শেষ সপ্তাহের আগেই সেতু যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। পদ্মা সেতু নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও কথা হয়েছে, যেটা আলোচনা হয়েছে, আমার মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিজেই কিছু দিনের মধ্যে উদ্বোধনের বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন