২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

অসহায় স্কুলছাত্রীর করুণ পরিণতি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:১৬ অপরাহ্ণ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: বাবা-মায়ের আদর-স্নেহ বঞ্চিত একটি শিশুর জীবন যে কতটা বিষিয়ে উঠতে পারে স্কুলছাত্রী নিতি যেন প্রাণ দিয়ে তা আবারো প্রমাণ করে গেলো। ১১ বছরের শিশুটির নিথর দেহ মিলেছে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায়।

তবে মৃত্যুর আগে সে এক চিরকুটে তার মর্মযাতনার কথা লিখেছে। গভীর অভিমান আর খেদ মেশানো সেই লেখায় মেয়েটির অসহায়ত্ব ও বঞ্চনার বিষয়টি সামনে এসেছে। বিষয়টি আত্মহত্যা, নাকি হত্যা, তা নিশ্চিত হতে আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিতির ঘরে পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিল, ‘মা-বাবা তোমরা আমাকে ভালোবাস না। নানি-নানাও ভালোবাসে না। তোমরা কেউ আমার কথা মনে কর না, ভালোবাসও না। তাই তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না।’

এলাকাবাসী বলছেন, মা-বাবার বিচ্ছেদের পর নিতি কার কাছে থাকবে, এ নিয়ে ছিল দ্বন্দ্ব। নিতিকে মা-বাবা, নানা-নানি, কেউ নিতে চাননি বলে একরকম বাধ্য হয়ে দাদি তাকে সঙ্গে রাখেন। এ নিয়ে সব সময় বিষণ্নতায় ভুগত মেয়েটি।

নিতি আক্তারের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামে। স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত সে।

পুলিশ, নিতির পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর আগে আন্ধারুপাড়া গ্রামের মো. আল আমিনের সঙ্গে বিয়ে হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনানী বাজারের ইয়াসমিন আক্তারের। বিয়ের চার বছর পর তাঁদের সংসারে নিতির জন্ম হয়।

২০১৪ সালে নিতির বাবা আল আমিন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এক বছর পর ২০১৫ সালে আল-আমিনের সঙ্গে নিতির মা ইয়াসমিনের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।

পরে নিতির মা আরেকজনকে বিয়ে করে স্বামী নিয়ে রাজধানী ঢাকায় চলে যান। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। নিতির বাবাও দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে রং মিস্ত্রির কাজ করেন।

বিচ্ছেদের পর মা-বাবা তাদের দ্বিতীয় সংসারে নিতিকে সঙ্গে রাখতে না চাইলে সে তিনানী বাজারে নানা-নানির কাছে থাকতে চায়। কিন্তু নানা-নানি রাখতে অপারগতা প্রকাশ করলে নিতির ঠাঁই হয় দাদি লাল বানুর কাছে।

এলাকাবাসী জানান, নিতি মা–বাবার স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ছিল। বাবা মাঝেমধ্যে খোঁজখবর রাখলেও মা কখনো খবর নিতেন না। দাদি ও নাতনি দুজনে বাজার করে নিজেরা রান্না করে খেতেন। দাদি ছাড়া নিতিকে ভালোবাসার কেউ ছিল না। গতকাল সন্ধ্যায় দাদি ঘরের বাইরে ছিলেন। পরে ঘরে ফিরে তিনি দেখতে পান, ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না গলায় প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলছে নিতির লাশ। এ দৃশ্য দেখে দাদি চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে নিতির লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা নিতির লেখা চিরকুট ও তার লেখাপড়ার খাতা মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, চিরকুটটি নিতিই লিখেছে। নিতির চিরকুটের লেখা ধরে তদন্ত চলছে।

ওসি জানান, বুধবার নিতির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন