২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর: ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নিয়েছিল ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২২ পূর্বাহ্ণ, ১২ নভেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ভোলা:: আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। এটি উপকূলবাসীর জন্য একটি শোকের দিন। ১৯৭০ বাংলার উপকূলের ওপর বয়ে গেছে পৃথিবীর শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। যার নাম ছিল ‘ভোলা’ সাইক্লোন।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সারা দেশের সাথে সাথে রামগতি-কমলনগরে শোকের সঙ্গে এ দিনটি পালিত হবে।

উপকূল সন্ধানী সাংবাদিক ও কোস্টাল জার্নালিজম এর সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম মন্টু জানান, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভোলা সাইক্লোন নামে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। সেদিন প্রায় ১০ লক্ষাধিক উপকূলীয় মানুষ প্রাণ হারান। এ ভয়াবহ দিনটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে উপকূল দিবস ঘোষণা দিলে সমগ্র উপকূলবাসী সুরক্ষিত হবে।

এই ঘূর্ণিঝড় সমগ্র উপকূল লণ্ডভণ্ড করে দেয়। প্রাণ হারানোর পাশাপাশি, ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেন বহু মানুষ। এই ঘূর্ণিঝড় কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকেও।

এটি সিম্পসন স্কেলে ক্যাটাগরি ৩ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল। ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। ওই রাতেই ১২ নভেম্বর উপকূলে আঘাত হানে ‘ভোলা সাইক্লোন’।

জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ বন্যায় প্লাবিত হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা। ওই সময়ে সেখানকার ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। একটি এলাকার প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারানোর ঘটনা ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।

৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ে মনপুরা উপকূলে প্রায় ৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। তখন সেখানে আবহাওয়া পূর্বাভাস শোনার জন্য বেতার ও টেলিভিশন ছিল না। এমনকি ছিল না কোনো আশ্রয়কেন্দ্রও। নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকলে হয়ত এত মানুষের প্রাণহানি হতো না বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দরা।

ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মনপুরাবাসীকে সমবেদনা জানাতে হেলিকাপ্টারে উড়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ভোলা সাইক্লোনের আগে এবং পরে উপকূলের ওপর দিয়ে অনেকগুলো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির বিচারে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে ভয়ংকর বলে প্রমাণিত।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৭০-এর আগে ১৮৭৬ সালে ‘বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন’ ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২ লাখ লোক প্রাণ হারিয়ে ছিল। এরমধ্যে এক লাখ লোকের মৃত্যু হয় দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে। ১৫৮২ সালেও বাকেরগঞ্জ তথা বর্তমান বরিশাল অঞ্চলে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা জানা যায়। ওই ঘূর্ণিঝড়েও প্রাণ হারান ২ লাখ লোক।

১৯৭০-এর পরের ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ছিল ভয়াবহ। এতে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডর, ২০০৮ সালের ৩ মে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর নিলোফার, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৯ সালের এপ্রিলে ফণি, একই বছর চলতি নভেম্বর মাসে বুলবুলসহ বেশকিছু ছোটবড় ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে। তবে ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা অন্যকোনো ঝড় অতিক্রম করতে পারেনি।

উপকূল সুরক্ষায় করণীয় ১৪ দাবি

বাংলাদেশের উপকূল সুরক্ষার জন্য ১৪টি জরুরি বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়ার দাবি উঠেছে উপকূলীয় স্থানীয়দের মধ্য থেকে। বিষয়গুলো হচ্ছে-

১) জনসংখ্যার অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

২) আশ্রয়কেন্দ্রের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

৩) আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে।

৪) আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সড়ক ভালো থাকতে হবে।

৫) সতর্ক সংকেত বিষয়ে মানুষদের আরও সচেতন করতে হবে।

৬) আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে যথাযথ সংকেত দিতে হবে।

৭) শক্ত ও উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

৮) মাঠ পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আরও আগে থেকে সক্রিয় হতে হবে।

৯) উৎপত্তিস্থল থেকে ঘূর্ণিঝড় সংকেত জানানো শুরু করতে হবে।

১০) উপকূলের সব মানুষকে রেডিও নেটওয়ার্ক-এর আওতায় আনতে হবে।

১১) গণমাধ্যমকে সারাবছর উপকূলে নজরদারি রাখতে হবে।

১২) গণমাধ্যমে উপকূলের জন্য বিশেষ স্থান বরাদ্দ করতে হবে।

১৩) জরুরি সময়ে দ্বীপ-চরের তথ্য আদান-প্রদানে তথ্য নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।

১৪) তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা ও সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন