১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

আদালতের নির্দেশ পেয়েও বরগুনার ভাড়ানি খাল উদ্ধারে তৎপরতা নেই

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আদালতের নির্দেশের এক মাস পার হলেও বরগুনার ভাড়ানি খাল সংরক্ষণে কাজ শুরু করেনি প্রশাসন। ৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালত এ নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বরগুনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বরগুনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ভাড়ানি খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৬০ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার ভূমি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আনিচুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এক মাসের প্রশিক্ষণে ঢাকায় ছিলাম। আজই (রবিবার) প্রথম অফিস করেছি। এ বিষয়ে আমি পুরোপুরি অবহিত নই। বিষয়টি জেনে আমি পরবর্তীতে আপনাদের জানাতে পারবো।’

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি উল্টো সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদক্ষেপ নিতে তো সময় লাগবে। সময় তো শেষ হয়ে যায়নি, যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যে তারিখে আদেশ হয়েছে, তারপর তারা আমাদের কাছে পাঠাবে, আমরা যে তারিখ থেকে রিসিভ করবো, তারপর থেকে ৬০ দিন। এরমধ্যে অনেক কাজ হয়েছে। ওখানে যারা আছে, তাদের বলা হয়েছে। ডিসি সাহেব, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র আমরা বসে বলে দিয়েছি, যে হাইকোর্টের আদেশ কার্যকর করতে হবে। ওখানে যারা আছে দোকান-মালিকরাও যাতে হঠাৎ করে বিপদগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছে। যদি তারা সরে না যায়, তবে ডিসি সাহেব আমার কাছে পুলিশ চাইবে, আমি পুলিশ দিয়ে সহায়তা করবো।’

হাইকোর্টের নির্দেশনা অফিসিয়ালি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন- ‘আমি জানি না এসেছে কিনা। আমি পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকায় গিয়েছিলাম, এরমধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশনা এসেছে কিনা বলতে পারবো না। তবে হয়তো এরমধ্যে এসেছে। আমি কাল (সোমবার) অফিসে গিয়ে জানাতে পারবো।’

পুনরায় তার কাছে বিষয়টি কনফার্ম হয়ে জানানো যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘আপনার তো এতো কিছু দরকার নাই, আমি পাইছি কিনা আদেশ? আপনি বলেন, এ ব্যাপারে কাজ চলছে।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ অমান্য করার কোনও সুযোগ নেই। অফিসিয়ালি নির্দেশনা পেলে খালটি উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডেলটা প্লানের অংশ হিসেবে খালটি সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেবো ও খালটির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কাজ করা হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- বরগুনা থেকে পটুয়াখালী জেলার সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগের পাশাপাশি বরগুনার তালতলী ও আমতলী উপজেলার সঙ্গে নৌপথে ব্যবসায়িক যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম ভাড়ানি খাল।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) বরগুনা টিম মেম্বার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন- ‘স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির পর বেলা উচ্চ আদালতে খালটিকে সংরক্ষণের জন্য একটি রিট আবেদন করা হয়। আদালত খালটিকে সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। খালটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে বরগুনা পৌরসভা ও স্থানীয় ভূমি অফিস ১৩৫ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে।’

তিনি জানান, ভাড়ানি খালটি বরগুনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ নদীর (পায়রা ও খাকদোন) সংযোগ সৃষ্টিকারী। কয়েক বছর আগেও এই খালটি দিয়ে ছোট-ছোট যাত্রীবাহী নৌকা, মালবোঝাই কার্গো, ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করতো। অবৈধ দখলদার ও পলি পড়ার কারণে এখন এই খালটি মৃতপ্রায়।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালটিকে দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় বরগুনার সামাজিক সংগঠনগুলো আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হলে কয়েকদিন প্রশাসনও একটু নড়েচড়ে বসে। কিছুদিন পর আবার দখল শুরু হয়।’

উচ্চ আদালতের রুলে ভাড়ানি খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খালটির স্বাভাবিক গতিপথ বজায় রাখার ব্যর্থতা কেন জনস্বার্থবিরোধী ও আইনবহির্ভূত হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভাড়ানি খাল থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে খালটিকে কেন পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানাতে বলা হয়েছে।

সেই সঙ্গে ভূমি সচিব, পরিবেশ সচিব, বন ও জলবায়ু সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বরগুনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্নিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।”

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন