২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

আমতলীতে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ, ১৮ মার্চ ২০১৯

ঝড়ে উড়ে গেছে বিদ্যালয়, তাই খোলা আকাশের নিচেই চলছে পাঠদান। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বাধ্য হয়েই এভাবে পাঠদান চলছে। প্রখর রোধে একসঙ্গে ছয়টি শ্রেণির কোমলমতি ১৫০ শিক্ষার্থী এভাবেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে- ১৯৬১ সালে বরগুনার আমতলী উপজেলার উত্তর-পশ্চিম চিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়।

১৯৯৪ সালে এখানে একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২১ বছরের মধ্যে ভবনটিকে স্থানীয় শিক্ষা অধিদফতর ২০১৫ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। ওই সময় থেকেই স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অধিদফতরের সহায়তায় একটি টিনশেডঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন শিক্ষকরা।

চলতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। এর পর থেকেই খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়টিতে প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রয়েছে ১৫০ জন।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মাহফুজ ও রাশেদুল সাংবাদিকদের জানান, প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে বসে ক্লাস করায় গাছের পাতা ও ডালপালা ভেঙে গায় পড়ে। প্রচণ্ড রোদে ক্লাস করা কষ্টকর। এতে করে পাঠদানে আমরা মনোযোগী হতে পারি না।

এ ছাড়া সব ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে বসিয়ে ক্লাস নেয়ায় কোনো কিছুই আমরা বুঝতে পারি না। বৃষ্টি এলে দৌড়ে কোথাও আশ্রয় নেয়ার আগেই আমাদের জামাকাপড় ও বইখাতা ভিজে যায়।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফারুক গাজী ও সহসভাপতি জসিম মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, প্রতিদিন এভাবে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস চলতে থাকলে আমাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হবে না। কেন না খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করায় রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালের আকস্মিক ঝড়ে বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এর পর থেকেই খোলা আকাশের নিচে আমরা পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চলায় নানামুখী অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসমা সুলতানা বলেন, খোলা আকাশের নিচে পাঠদানে আমাদেরও অসুবিধা হচ্ছে। এখানে সবাইকে একসঙ্গে বসিয়ে পড়ানোর কারণে কোনো শৃঙ্খলা থাকে না। তাই দ্রুত আমাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে পাঠদানের ব্যবস্থা করা না হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পাশের মাদ্রাসায় একটি কক্ষে বসানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই দ্রুত একটি ঘর নির্মাণের দাবি জানান তারা।

উত্তর-পশ্চিম চিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসে সরেজমিন বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে গেছেন। আশা করি শিগগিরই শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য তারা পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ওই বিদ্যালয়ে পাঠদান যাতে ব্যাহত না হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন