২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

আরেক আবরারের মৃত্যু নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:৩০ পূর্বাহ্ণ, ০৩ নভেম্বর ২০১৯

দৈনিক প্রথম আলোর ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী নাইমুল আবরার রাহাত (১৫)। তার মৃত্যুর ঘটনায় নিহতর সহপাঠিসহ স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রথম আলোর কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেছে । ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খুলে তারা এসব দাবি জানিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে তূর্য নামের একজন এই তথ্য দেয়।

শিক্ষার্থীরা যা লিখেছে তা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো−

“একটা ছেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। দুঃখিত মৃত্যু না, তাহসান অর্ণবের সুরের মূর্ছনার ভিড়ে একটা ঠান্ডা মাথায় খুন হয়ে গিয়েছে। পনেরো বছরের একটা বাচ্চা হারিয়ে গিয়েছে, এই জরুরি খবর জানানোর চেয়ে গান চালানোই জরুরি মনে হয়েছে তাঁদের। একটা মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে, কোনও বিজ্ঞপ্তি নেই। নামেমাত্র দায়সারা ‘আমরা দুঃখিত’ বলে প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে ভুলে ভরা একটা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পর্যন্তই। (এমনকি ইভেন্ট পেজ ও মূল পেজ থেকে দুইবার পোস্ট ডিলিট করে নতুন করে দেওয়া, একের পর এক কমেন্ট ডিলিট করা চলছেই।) ১২ ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও যখন আনিসুল হক নামক ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া যায় না, বরং, ‘ধাতস্থ হলে বলবো’ উত্তর আসে, তখন বোঝাই যায়, তাদের ধাতস্থ হওয়ার অর্থ ঘটনা ধামাচাপা পড়া। ১২ ঘণ্টা পরেও উত্তর না পাওয়ার পর আমরা উত্তর চাইও না। এবার এসেছি নিজেদের দাবি-দাওয়া জানাতে। কিছু সুস্পষ্ট দাবির জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারপর আমরা পিছু হটার কথা ভাববো, তার আগে পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই।”
রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

দাবি তুলে ধরে বলা হয়−

দাবি ১:
‘কিশোর আলো’ ২৯ অক্টোবর তাদের পেজ থেকে দেওয়া পোস্টে জানিয়েছিল ‘সিকিউরিটি ফার্স্ট। সিসিটিভি থাকবে। চেক করা হবে’। অন্য আরেকটি পোস্টে ছিল ‘প্রথম আলো সকল ছবি ধারণ ও সংরক্ষণ করবে’। অর্থাৎ তাদের পুরো অনুষ্ঠানের ছবি এখনও তাদের কাছেই আছে। সেই অনুষ্ঠানের সব ছবি, কীভাবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কতটা কী হয়েছে, সবকিছুর ছবি মুক্ত করতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া অথবা কোনও ন্যাশনাল টিভি চ্যানেলে।

দাবি ২:
কিশোর আলোর গতকাল দেওয়া পোস্ট থেকে ‘নাইমুল আবরার যখন তড়িতাহত হয়, কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবকেরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যায় পাশে থাকা মেডিক্যাল ক্যাম্প স্টলে। মেডিক্যাল ক্যাম্পে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসক আবরারকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন’। অর্থাৎ সেখানে থাকা ডাক্তারদের কথা ছিল তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হোক। তবুও তাকে কাছের সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতাল ছেড়ে ইউনিভারসাল মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলো।

সেই ডাক্তাররা কেন তাকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিলো, সে বিবৃতি জানতে চাই। এমনকি তাদের এই মৃত্যুর দায় স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের প্রকাশ্য ক্ষমা চাইতে হবে। কিশোর আলোকে (বিশেষ করে আনিসুল হককে) বলতে হবে কেন তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলো না। কেন রাহাতের মৃত্যুর সংবাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতে হলো কলেজকে কিংবা তার পরিবারকে?

দাবি ৩:
প্রথম আলো ও কিশোর আলোকে প্রকাশ্যে প্রেস ব্রিফিং করে ক্ষমা চাইতে হবে। এই মৃত্যুর পুরো দায় স্বীকার করে সেখানে কিশোর আলোর সম্পাদক, সহ-সম্পাদকদের বিবৃতি দিতে হবে। তাদের কারণ দর্শাতে হবে যে, কেন তারা এতো বড় ইভেন্টের দায়িত্ব কিছু টিন-এজ ভলান্টিয়ারের (বেশিরভাগেরই কোনও ট্রেনিং নেই। জরুরি অবস্থায় কী করতে হবে, সে সম্পর্কে ট্রেনিং নেই।

এমনকি রাহাতকে বিদ্যুতায়িত হওয়া থেকেও ছাড়িয়েছেন একজন সিভিলিয়ান, কোনও ভলান্টিয়ার নয়।) হাতে দেওয়া কতোটুকু যুক্তিযুক্ত। জোন ২ ও জোন ৩ এর কাছে এই ঘটনা ঘটে। এমনকি অনেকে অভিযোগও করেন বিদ্যুতের লাইন খোলা। কিন্তু এর পরেও কেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি? জোন ৪ নিয়ে কিশোর আলোর ইভেন্ট পেজে দেওয়া অভিযোগ কেন ডিলিট করে দেওয়া হলো? জোন ২, ৩ ও ৪ এর লিডারদের কারণ দর্শাতে হবে।

দাবি ৪:
শুক্রবার রাতেই তাদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নামেমাত্র তদন্ত কমিটিতে কে কে আছেন, সেখানে আমাদের কলেজ কমিটির কিছু আছে কিনা, নাকি লোক দেখানো কমিটি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না। তবে মিডিয়ার সামনে তদন্ত কমিটির সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক।

আমাদের সব দাবি এর মধ্যেই টিভি মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। তবে সেখানে একটি ভিত্তিহীন কথা বলা হয়েছে, সেটি হলো কলেজ কর্তৃপক্ষ নাকি আমাদের সঙ্গে নেই। তাদের বলতে চাই কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গেই আছেন।

আমাদের সম্মানীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ তার সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন আমাদের প্রতি। যেখানে অধ্যক্ষের সম্মতি আছে সেখানে শিক্ষকদের বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। সময় নিউজের করা নিউজের এই অংশের সঙ্গে আমরা দ্বিমত প্রকাশ করছি। তারা আমাদের পুরো কার্যক্রমে আমাদের পাশেই আছেন।

আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষের এখানে কোনও গাফিলতি বা কোনও সমস্যা নেই। বরং আমাদের দাবি সম্পূর্ণ কিশোর আলো ও প্রথম আলোর প্রতি, তারা সকলে এই দাবি মেনে নিলে আমরা আমাদের কার্যক্রমের পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন