২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

আশরাফুলের কোচের ছাত্রই নতুন সাকিব!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৫৬ অপরাহ্ণ, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: মোহাম্মদ আশরাফুল এবং সাকিব আল হাসান। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এখন পর্যন্ত যতগুলো স্মরণীয় মুহূর্ত, তার প্রায় সবকটির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এই দুজনের নাম। তাঁদের সেরা গুণগুলো যদি একজনের ভেতরে খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা? অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে বাংলাদেশের জয়সূচক রানটা এসেছে যাঁর ব্যাট থেকে, সেই রাকিবুল হাসানের ভেতর আছে সেই সম্ভাবনার ছাপ। আশরাফুলের কোচ ওয়াহিদুল গণির কাছেই তাঁর ক্রিকেটের প্রাথমিক পাঠ; বাঁহাতি ব্যাটিং-বোলিংয়ে অনুকরণ করেন সাকিবকে। আবির্ভাবেই হৈচৈ ফেলা দেওয়া আশরাফুলের মতো যুব বিশ্বকাপেও নজরকাড়া পারফরম্যান্স রাকিবুলের, এখন সাকিবের মতো অধ্যবসায় আর পেশাদারি দেখাতে পারলে তাঁর জন্যও অপেক্ষা করছে সোনালি ভবিষ্যৎ।

খিলগাঁও সরকারি বিদ্যালয়ে পড়তেন রাকিবুল। কিন্তু বইখাতার চেয়ে কিশোর রাকিবুলকে বেশি টানে ক্রিকেটই, বাংলাদেশের অভিভাবক সম্প্রদায়ের কাছে যেটা রীতিমতো অপরাধ! অঙ্ক আর ইংরেজিতে কাঁচা রাকিবুলকে বাবা পড়তে পাঠালেন এক শিক্ষকের কাছে। সেই শিক্ষকের ফি দিয়ে রাকিবুল ভর্তি হয়ে গেলেন ক্রিকেটের পাঠশালায়। তারপর, বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জেতার জন্য ১৭০ রানের অঙ্ক মেলালেন আর টিভিতে সাক্ষাৎকার দিলেন ইংরেজিতে! এই দুইয়ের মাঝে অবশ্য ঘটে গেছে অনেক কিছুই। খেলার ভূত নামাতে বাবা মারতে এসেছেন, সময়মতো দেওয়া হয়নি এসএসসি পরীক্ষা। ক্রিকেট মাঠে সাফল্যের দেখা না পেলে হয়তো ‘বংশের কলঙ্ক’ হিসেবেই মুখ লুকিয়ে থাকতে হতো রাকিবুলকে। এ জন্যই কি আইসিসির ফেসবুক লাইভে বলেছেন, ‘পরিবারের সদস্যরা এখন বোধহয় আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারেন।’

ফেসবুকে পরিচিতি অংশে রাকিবুল লিখে রেখেছেন ‘ডোন্ট গিভ আপ’। ফাইনালে ব্যাট করতে নামার সময়ও যে এই মন্ত্রটাই জপেছেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই। বিশ্বকাপ শুরুর আগে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যদি কোনো সেট ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকে বোলারদের তাদের সাপোর্টিং রোল প্লে করে ব্যাটিং করতে হবে। হয়তো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমরা পারিনি। বড় দুটি টুর্নামেন্টে এমন হয়েছে। এই ভুল থেকে আমরা শিখেছি। বিশ্বকাপে এমন পরিস্থিতি হলে আশা করি আর ভুল হবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুত আছি।’ ভুল হয়নি রাকিবুলের, আকবর আলীকে সঙ্গ দিয়ে জয়ের খুব কাছে দলকে নিয়ে যাওয়ার পর অর্থব আনকোলেকারের বলে এগিয়ে এসে মিড উইকেটে বল উড়িয়ে মেরে হয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট রূপকথার অংশ।

শেষ দৃশ্যে রাকিবুলের উপস্থিতি এতটাই চোখ-ধাঁধানো যে তাতে আড়ালে চলে যাচ্ছে বল হাতে রাকিবুলের কৃতিত্ব। অথচ বোলিংটাই তো রাকিবুলের মূল শক্তি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন হ্যাটট্রিক, স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিয়েছেন ৫ উইকেট। আসরে শিকার ১২ উইকেট, ওভারপ্রতি গড়ে রান খরচ করেছেন ৩.০৫। রাকিবুলের বোলিংয়েই ভাটার টান ধরা বাঁহাতি স্পিনের ঐতিহ্যে নতুন স্রোত। মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাকদের সঙ্গে তরুণ সাকিব আল হাসান মিলেই ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্যের ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের দেখানো পথে হেঁটেছেন অনেকেই, কিন্তু সাকিব ছাড়া কেউই পাননি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। পরবর্তী প্রজন্মের তাইজুল ইসলাম টেস্টে কার্যকর হলেও সীমিত ওভারের খেলায় ব্রাত্য, নাজমুল অপুও পারেননি প্রত্যাশা পূরণ করতে। পারবেন কি রাকিবুল? তরুণ এই দলটা বাছাই করার প্রক্রিয়ায় নিবিড়ভাবে সংযুক্ত ছিলেন গেম ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ। রাকিবুল সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, ‘ছেলেটার সাহস আছে। ভালো বোলার, তবে ওকে নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে।’ রাকিবুলেরও চোখ দেশসেরার গন্ডি ছাড়িয়ে,‘ছোটবেলায় অনেকের খেলা ভালো লাগতো। যুবরাজ সিংকে ভালো লাগতো। তার ব্যাটিং, ফিল্ডিং অনেক ভালো লাগতো। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতেও শুরু করলাম। তখন সাকিব আল হাসান ও রবীন্দ্র জাদেজার খেলা ভালো লাগা শুরু করে। তাদের বোলিং, ফিল্ডিং, ব্যাটসম্যানদের রিড করা, গেম সেন্স এগুলো খুব ভালো। ফলে তাদের আইডল মেনেই আমি এগিয়ে যাচ্ছি।’

বিশ্বের অন্যতম সেরা বাঁহাতি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে বিসিবি বোলিং পরামর্শক বানিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁর পাঠশালায় ছাত্র কোথায়? ওয়াহিদুল গণির অঙ্কুর ক্রিকেট একাডেমি থেকে অঙ্কুরিত রাকিবুল যেন সত্যিকারের মহীরুহ হয়ে উঠতে পারে,সময়ে ছাড়িয়ে যেতে পারে আইডলদেরও সেই ব্যবস্থাটা কিন্তু করতে হবে ক্রিকেট কর্তাদের।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন