ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া থেকে শুরু করে প্রচারণা পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিধি ভঙ্গের হিড়িক চলছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী-সমর্থকদের নানা হুমকি ও ভয়ভীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক প্রার্থীকেই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী বহু প্রার্থী।
তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এসব অভিযোগের কোনোটাই আমলে না নেয়ায় থামছে না বিধি ভঙ্গের ঘটনা। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব সামসুল আলম সম্প্রতি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সবাই নিজ নিজ কাজের বিষয়ে সচেতন। মাঠ পর্যায়ে আচরণবিধি তদারকিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি ভিজিলেন্স টিম ও কয়েকটি সমন্বয় কমিটি কাজ করছে। কেউ কোনো ব্যত্যয় ঘটালেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, বিভিন্ন স্থানে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও গোলযোগের শঙ্কাও ততই বাড়ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ৭৩২ ইউপির নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার এক মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ তদারকিতে নামেনি ইসি। প্রচারণা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন দুই ডজনেরও বেশি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ছে ইসি সচিবালয়ে। তবে সেগুলো খুলে দেখারও কেউ নেই ।
ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার উপসচিব সামসুল আলম জানান, আগামী ২২ মার্চ ৭৩২ ইউপিতে প্রথম ধাপে ভোট হবে। তবে এরই মধ্যে ৬২ চেয়ারম্যান, ১৭৯ সাধারণ সদস্য ও ৫৪ সংরক্ষিত সদস্যপদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এতে ৩ হাজার ৩৬ চেয়ারম্যান প্রার্থী, সাধারণ সদস্যপদে ২৫ হাজার ৮৪৭ ও সংরক্ষিত পদে ৭ হাজার ৫৭৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন।
প্রসঙ্গত তৃণমূলের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন ইউপিতে এ বছরই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। এ কারণে দলীয় প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ইসির সমন্বয় সভায় হট্টগোলের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
সম্প্রতি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ৪নং নাংলা ইউপির চেয়ারম্যানপ্রার্থী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন নির্বাচন কমিশনে স্থানীয় এক নেতার মোবাইল কথোপকথনের সিডি জমা দিয়ে অভিযোগ করেছেন, তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন ওই নেতা। ভোট কেন্দ্র দখল করে সব ইউপিতে পছন্দের প্রার্থীদের জয়ী করা হবে বলে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
এছাড়া ইসিতে অভিযোগ জমা দিয়েছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ২নং বাকাল ইউনিয়নের মহিলা চেয়ারম্যানপ্রার্থী লাবণ্য আক্তার তালুকদার। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেন, রাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নেয়া হবে, একজন প্রার্থীকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে হবে। তা না হলে কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন। এর আগে ওই এলাকার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই ও এজেন্ট বের করে দেয়ার নজির রয়েছে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ইউপি নির্বাচনে হতে পারে।
একই উপজেলার ৫নং রত্মপুর ইউপির চেয়ারম্যানপ্রার্থী মো. শাহীন আলমও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ইসিতে অভিযোগ করেছেন।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ৫নং বড়ইয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল আবেদীন (জাহিদ) তার অভিযোগপত্রে একজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ওই জনপ্রতিনিধি প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে তার কর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছেন। ওই জনপ্রতিনিধির বাড়ির কাছে থাকা তিনটি ভোট কেন্দ্রে ভোট কারচুপির আশঙ্কা করে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন তিনি।
সাতক্ষীরার কলোরোয়ার ৫নং কেঁড়াগাছি ইউপির এক চেয়ারম্যানপ্রার্থী ইসিতে দেয়া অভিযোগপত্রে লিখেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে বাধা দিচ্ছে, তার এক কর্মীর বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। এরকম শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে কমিশনে।
এদিকে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস ফ্যাক্সযোগে পাঠানো বার্তায় বলেন, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে দ্রুত কোস্টগার্ড নিয়োগের প্রস্তাব দেন তিনি। নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছেও এর অনুলিপি এসেছে।
জাতীয় খবর