২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শক্তি দিনে দিনে বাড়ছে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:০৫ অপরাহ্ণ, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য:: ঢাকা সিটি নির্বাচনের দৌড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপস্থিতি মোটেই জোরালো ছিল না। প্রচারের ক্ষেত্রে তাদের সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল একটি দলের মতো মনে হয়েছে।

তবুও, শনিবারের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে দলটি যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল এবার তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছে। যা দেখে মনে হয়, তাদের শক্তি দিনে দিনে বাড়ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দলটির মেয়র প্রার্থী আবদুর রহমান ২৬ হাজার ৫২৫ ভোট পেয়েছেন। যেখানে জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন পাঁচ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে আবদুর রহমান পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৭৮৪ ভোট।

ঢাকা উত্তরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ফজলে বারী মাসুদ ২৮ হাজার ২০০ ভোট পেয়েছেন। যেখানে ২০১৫ সালে একই পদের প্রার্থী ১৮ হাজার ৫০ ভোট পেয়েছিলেন। এবারের সিটি নির্বাচনে উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল না।

সর্বশেষ ঢাকা সিটি নির্বাচন সহ গত তিন বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোটের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় দেশের তৃতীয় প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটির উত্থান হয়েছে।

তাদের এই উত্থানের কারণ কী?

আচরণে নমনীয়তা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দাবি করেছে ‘একলা চলো’ নীতি অনুসরণ করে তারা এই ফল পেয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তাদের প্রতি নমনীয় আচরণসহ আরও বেশ কিছু কারণে দলটি এগিয়ে যাচ্ছে।

তবে একটি ধর্মভিত্তিক দলের উত্থানকে তারা অশুভ লক্ষণ হিসেবেই মনে করছেন। কারণ এমন দলগুলোর মতাদর্শ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের পরিপন্থী।

বিশ্লেষকদের মতে আওয়ামী লীগ হয়তো বিএনপির অন্যতম প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামীর পরিবর্তে এই দলটিকে দেখছে।

প্রশাসনের বাধা ছাড়াই গত এক বছরে দলটি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি সমাবেশ করেছে। প্রতিটি সমাবেশেই প্রচুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

অন্যদিকে বিএনপির জন্য সমাবেশের অনুমতি পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পেলেও সেগুলো ছিল শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা চাই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিকল্প হিসাবে উপস্থিত হোক। আমরা জানি যে অদূর ভবিষ্যতে তারা ভোটের রাজনীতির অন্যতম একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে।”

তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিকল্প হতে পারে এবং তা “শান্তিকামী মানুষের জন্য আরও ভালো”।

উত্থান

১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে ‘চরমোনাইর পীর’ হিসেবে পরিচিত ফজলুল করিম প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার সাংগঠনিক দক্ষতার প্রদর্শন করেছে। সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে তারা প্রার্থী দিয়েছিল। একক দল হিসেবে তাদের প্রার্থীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬২, বিএনপি ২৫৮ এবং জাতীয় পার্টি মাত্র ৪৫ টি আসলে প্রার্থী দিয়েছিল।

নির্বাচনে দলটি মোট ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ ভোট পায়।

দলটি ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে সাতটি ইসলামী দলের জোট ‘ইসলামী ঐক্য জোটে’র ব্যানারে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ ভাবে ২০০২ সালের জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সেবার তারা ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

দলটি এককভাবে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। ১৬০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে তারা ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৯ ভোট পায় যা মোট প্রদত্ত ভোটের ১ দশমিক ০৫ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া আর কোনো দল ওই নির্বাচনে মোট ভোটের ১ শতাংশও পায়নি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তারেক শামসুর রহমান বলেন, ইসলামপ্রেমী মানুষদের একটি অংশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতি হতাশ হয়ে ইসলামী আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে।

এই অংশটি উচ্চশিক্ষিত নয় এবং তাদের বেশিরভাগই সাধারণ শ্রমিক শ্রেণির। তাদের মধ্যে আছেন রিকশা চালক, সিএনজি চালক, ছোট ব্যবসায়ী এবং ফুটপাথের বিক্রেতারা।

এ ছাড়া দুটি বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অসহিষ্ণুতা নিয়ে সাধারণ মানুষের হতাশা এবং জাতীয় পার্টির ব্যর্থতাও ইসলামী শক্তির উত্থানে অবদান রেখেছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক তারেক।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলন যেভাবে ধীরে ধীরে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করছে তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আগামী দিনে তারা বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থিত হতে পারে।

তিনি বলেন, “ইসলামী আন্দোলনের উত্থান দেশের জন্য ভালো না। কারণ তাদের আদর্শ ও কৌশল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে সমর্থন করে না।”

পার্টির গঠনতন্ত্র অনুসারে, ইসলামী আন্দোলন ‘ইসলামী খেলাফতে’র মডেল ভিত্তিক একটি সমাজ তৈরি করতে চায়। যাতে বাংলাদেশ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারে।

দলটি অবশ্য অমুসলিম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এটি বৃহত্তরভাবে ইসলাম প্রচার এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ড করতে উত্সাহিত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

অন্যান্য নির্বাচনে ফলাফল

২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা এক হাজার ৮৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তারা চারটিতে জিতেছেন এবং পরাজিত ২০০ জন ভোটের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন।

রংপুর সিটি নির্বাচনে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দলটির মেয়র প্রার্থী ২৩ হাজার ৭১৮ ভোট পেয়েছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৬২ হাজার ৪০০ এবং বিএনপি প্রার্থী ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট পেয়েছেন।

২০১৮ সালের মে মাসে খুলনা সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২ ভোট।

২০১৮ সালের জুনে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলটির মেয়র প্রার্থী ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট নিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিল।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েব-ই-আমির ফয়জুল করিম বলেছেন, দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রতি আস্থার অভাব মানুষকে তাদের উপর আস্থা রাখতে বাধ্য করছে।

তিনি বলেন, “জনগণ এখন তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি চায় কারণ তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর হতাশ হয়ে পড়েছে।”

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন