২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঈদে নতুন পোশাক চায় বাউফলের জারিন ও উমামা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:০৩ অপরাহ্ণ, ০৯ মে ২০২১

ঈদে নতুন পোশাক চায় বাউফলের জারিন ও উমামা

মোঃ জসীম উদ্দিন, বাউফল >> পটুয়াখালীর বাউফলে পিতৃস্নেহ ও খাওন খরচ থেকে বঞ্চিত জারিন তাসনিম (৯) ও উমামা তাইয়েবা (৭) নামের দুই শিশু কন্যা ঈদে নতুন পোশাক চাইছে। মা’র বয়স বেশি এই অযুহাতে বাবা মাকে একতরফা তালাক দিয়ে দাদা দাদুকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। মাকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই আমরা দু বোন থাকি। বাবা কোন খোঁজ-খবর নেয় না এবং টাকা পয়সা দেয় না। বাড়ির লোকজন যা দেয় তা দিয়ে কোন রকম বেচে আছি। ঈদে সবাই নতুন জামা কাপড় কিনলেও আমদের দুবোনের ভাগ্যে জোটেনি। আমাদের কে দিবে। আমাদের ও মনচায় নতুন জামা কাপড় কিনতে। এই কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে দেন জারিন তাসনিম ও উমামা তাইয়েবা। ওদের সাথে ওদের মাও কেঁদে দেন।
এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার বাউফল সদর ইউনিয়নের বিলবিলাস গ্রামের আমির মোল্লা বাড়িতে।

জারিন তাসনিম ৯৭ নং মিয়াবাড়ি সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি ও ছোট বোন উমামা তাইয়েবা একই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। দু বোনেরই মেধাবী ছাত্রী। ক্লাসে প্রথম স্থান ও উপজেলা পর্যায়ে পুরুস্কৃত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বগা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের আব্দুল রাজ্জাক মাস্টার মেয়ে রাহানি জান্নাত টুলু’র সাথে বাউফল ইউনিয়নের বিলবিলাস গ্রামের আব্দুস সত্তার মোল্লার ছেলে সাইফুল্লাহ’র সাথে প্রায় ১১ বছর পূর্বে পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর সুখে শান্তিতে তাদের সংসার চলে। তাদের ঘরে জারিন (৯) ও উমামা (৭) নামের দুটি শিশু কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। রাহানি জান্নাত টুলুর বাবা প্রায় ১ বছর পূর্বে মারা যান। আর তখন সাইফুল্লাহ তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। স্ত্রী টুলু বেগম সুখে শান্তিতে বসবাসের কথা চিন্তা করে ভাইদের বুঝিয়ে ২লাখ টাকা নগদ এনে দেয়। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি টুলু বেগমের। স্বামী সাইফুল্লাহ হাইকোটের আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এ সুবাধে ঢাকাতেই থাকতে হয় সাইফুল্লাহকে। একপর্যায়ে সাইফুল্লাহ দ্বিতীয় বিয়ে করে বয়স বেশি এই অযুহাতে প্রথম স্ত্রী রাহানি জান্নাত টুলুকে একতরফা তালাক দিয়ে দুটি শিশু সন্তানসহ বাড়ি থেকে তারিয়ে দেন। কোন উপায় না পেয়ে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয় টুলু বেগম। রাহানী জান্নাত টুলু বেগম তালাকের বিপক্ষে আদালতে মামলা করেল সাইফুল্লাহর জেল হয়। তালাক প্রত্যাহার ও স্ত্রী টুলুকে নিয়ে ঘর সংসার করবে বিজ্ঞ আদালতে অঙ্গীকার করে সাইফুল্লাহ জামিনে এসে স্ত্রী ও দুটি শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে আসে। সাইফুল্লাহ ঢাকায় কর্মস্থলে যান। পরবর্তী তারিখে মামলা তোলার জন্য রাহানি জান্নাত টুলু তার ভাসুর আবুবক্কর সিদ্দিককে নিয়ে আদালোতে যান। আইনি জটিলতার কারণে ওই দিন মামলা নিস্পতি করা সম্ভব হয়নি টুলু বেগমের।

এদিকে আদালোত থেকে বাড়িতে এসে দেখতে পান ঘরে তালা লাগানো। অত্যন্ত চতুর সাইফুল্লাহ ঘরে তালা লাগিয়ে তার মা বাবাকে অন্যত্র সরিয়ে রাখেন। দুটি শিশু সন্তান তার মাকে নিয়ে তালাবদ্ধ ঘরের সামানে অবস্থান করেন। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হলে বাড়ির লোকজনের সহায়তায় তার বড় মেয়ে জারিন তাসনিম তালা ভেঙে মাকে নিয়ে ঘরে অবস্থান করেন। বাড়ির লোকজনের দেয়া সহায়তায় দুই শিশু সন্তান কোন রকম খেয়ে না খেয়ে বাবার ঘরেই আছেন।

জারিন তাসনিম বলেন, বাবা তাদের কোন খোঁজ-খবর নেয় না এমনকি কোন খাওন খরচও দেয় না। বাড়ির লোকজন যা দেয় তাদিয়েই মাকে নিয়ে কোন রকম দিন পার করছি। সব ঘরের ছেলে মেয়েরা নতুন পোশাক কিনলেও আমরা বঞ্চিত। আমরা নতুন জামা কাপড় চাই। এ ব্যাপারে সাইফুল্লাহর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন