২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

উজিরপুরে ২ সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করলেন মেম্বর!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৪১ অপরাহ্ণ, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

জহির খান উজিরপুর:: বরিশালের উজিরপুরের শোলক ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দুই কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ওই দুই কর্মকর্তার সাথে থাকা সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ছিনতাই করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শোলক ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রামেরকাঠি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে লাঞ্চিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ওই ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার (ইউএনও) নিকট পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ভর্তূকির আওতায় একটি ধানমাড়াইয়ের যন্ত্র (পাওয়ার থ্রেসার) ক্রয়ের জন্য গত ২৩ এপ্রিল উপজেলার শোলক ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ধামুরা ব্লকে রামেরকাঠি গ্রামের বিপুল হালদার নামের এক ব্যক্তি কৃষি কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন।

তবে আবেদনটিতে সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সুপারিশ নেই। এজন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন তালুকদার আবেদন পত্রটির সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেন।

সেই অনুযায়ী বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে বিষয়টি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও জল্লা ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাইনুল ইসলাম আবেদনপত্র নিয়ে আবেদনকারী বিপুলের বাড়িতে যায়।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আবেদনকারী বিপুল জানায়, ‘সে পাওয়ার থ্রেসার মেশিন সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং তিনি কোনো আবেদন করেননি। তাছাড়া সে কৃষি কাজ করেন না এবং পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রী।

বিপুল আরও জানান, ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে ওই মেশিনটি এনে দেওয়ার শর্তে তাদের পাশের ব্লকের উপ-সহকারি কর্মকর্তা মো: সাইয়েদুর রহমান তার নাম ব্যবহার করে আবেদনটি করেছেন। টাকার বিনিময়ে মেশিনটি আনার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম ও পাশের ব্লকের আরেকজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান।’

আবেদনকারী বিপুলের নিকট থেকে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজ ও মাইনুল এ সকল তথ্য সংগ্রহের খবর পেয়ে হঠাৎ স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল ইসলামসহ ৪/৫ জন দুর্বৃত্তরা বিপুলের বাড়িতে হাজির হয়ে প্রথমে তাদেরকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করে।

তার (ইউপি সদস্য) কথা না শোনায় এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য রবিউল ও তার সাথে থাকা সন্ত্রাসীরা ওই দুই সরকারি কর্মকর্তার ওপর হামলা চালিয়ে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় তাদের সাথে থাকা তদন্ত প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় তাদের ব্যবহারের দুটি মোবাইল ফোন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রবিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি সরকারি কাজে বাধা দিয়ে আবার সরকারি কর্মকর্তাদের মারধর করবে এটা কোনো ভাবেই প্রত্যাশিত নয়। তাছাড়া বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই এই ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু অভিযোগ পেয়েছেন নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনও’কে বলা হয়েছে। ওই ইউপি সদস্য যদি অপরাধী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার জানান, ‘অভিযুক্ত ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’

এ ঘটনার পরে ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি এক সময়ের নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এর বাইরেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন