১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

উপকূলের লাখো মানুষের গলার কাঁটা ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০১ অপরাহ্ণ, ২৮ মে ২০২০

বার্তা পরিবেশক, পটুয়াখালী :: যত দূর চোখ যায়- পানি আর পানি। শুধু আবাসস্থল ও গ্রামীণ জনপথ নয়, সারা বছরের উৎপাদিত ফসল, মাছের পুকুর ও ঘেরসহ হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধটি এখন উপকূলের লাখো মানুষের গলার কাঁটা।
অমাবস্যার জোয়ের প্রভাবে স্থানীয় নদীগুলোতে হু হু করে বাড়ছে পানির উচ্চতা। বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে দিন-রাত দু’দফা জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষগুলো চরম বিপাকে পরেছে। নদীবেষ্টিত এই অঞ্চলের ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত না হলে কৃষিখাতে চরম বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

গত ২০ মে পটুয়াখালীর উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এর প্রভাবে নদীর পানি বিপদ সীমার ১৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পটুয়াখালী ও কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মির্জাগঞ্জ উপজেলার রামপুর, সুন্দ্রা কালিকাপুর, গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি, রতনদি তালতলি, তুলাতলি, দশমিনা উপজেলার রনগোপালদি, বেতাগি সানকিপুর, বাউফল উপজেলা ভুড়িয়া ও বামনিকাঠি, দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া, শ্রীরামপুর, চরবয়রা এবং সদর উপজেলার লাউকাঠিসহ বিস্তীর্ণ এলাকার অন্তত ১৩ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া উপজেলার দেবপুর, করমজাতলা, নিজামপুর, জালালপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার অন্তত ৭-৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সব বেড়িবাঁধ মেরামত করতে হলে দ্রুত ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন বলে নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে গেছে বাদাম, ফেলন, বিভিন্ন শাক-সবজি, মরিচের ক্ষেত, আউশের বীজতলা, মাছের পুকুর ও ঘেরসহ কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল।

এ দিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে পটুয়াখালী জেলায় ৪ হাজার ৫৫৩ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পটুয়াখালী ও কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় অন্তত ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও জেলায় মোট ৫ হাজার ৭৫৪টি পুকুর এবং ৬২৩টি ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসান উজ্জামান বলেন, পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮২৮ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে নদীর পানি বিপদ সীমার ১৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকার ১৩ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত ভাঙ্গা স্থানগুলোতে কাজ শুরু করা হবে।

কলাপাড়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মুহাম্মদ অলিউজ্জামান বলেন, আম্পানের প্রভাবে অন্তত ৭ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা বাঁধ ভাঙ্গা এলাকার সুন্দ্রা কালিপুর, কলাগাছিয়া, পিপড়াখালী এলাকার বাসিন্দা মিরাজ হোসাইন প্রিন্স, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন মিলন ও শিক্ষক গাজী শাহদাত আমীন বলেন, আম্পানের দিন সন্ধ্যার পর থেকে পায়রা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। রাত ৯টার পর অতিরিক্ত মাত্রায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ওই এলাকার একাধিক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি জানান, আম্পানের প্রভাবে তার এলাকার একাধিক বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত এ সব বাঁধ মেরামত না হলে বর্ষা মৌসুমে উপকূলের জোয়ারে খারাপ অবস্থা হবে।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন