২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

এমপি-মেয়র গ্রুপ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, তাপসের খুনি কে?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:০৮ অপরাহ্ণ, ২৬ মে ২০২০

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক:: পটুয়াখালীর বাউফলে রবিবার আওয়ামী লীগের এমপি আ স ম ফিরোজ ও মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল গ্রুপের সহিংসতায় যুবলীগ কর্মী তাপস দাস হত্যাকান্ডের ঘটনায় এমপি গ্রুপ সোমবার ঈদের দিন জুয়েলের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। ওই হত্যাকন্ডের মামলায় মেয়র জুয়েলকেসহ এবং একজন সাংবাদিককে আসামী করা হয়েছে। এদিকেও জুয়েলও তাপস হত্যাকান্ডের তদন্ত সাপেক্ষে খুনিদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। বাউফলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা আওয়ামী লীগ।

দীর্ঘদিন থেকে বাউফলে এমপি ফিরোজ এবং মেয়র জুয়েলের মধ্যে দলীয় বিরোধ চলে আসছিল। এমপি ফিরোজ বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মেয়র জুয়েল পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দুইজনেরই উপজেলা এবং পৌর শহরের পাল্টাপাল্টি কমিটি রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ জানিয়েছে সমন্বয়ের অভাবে একটি কমিটিও অনুমোদন হয়নি।

মেয়র গ্রুপের সংবাদ সম্মেলন:
তাপস হত্যার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মেয়র জুয়েল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পৌর সভা মিলনায়তনে মেয়র জুয়েলের স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও মেয়র জুয়েল সমর্থিত পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল লতিফ খান বাবুল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা সম্বলিত ব্যানার বাউফল পৌরসভার উদ্যোগে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানোর কাজ শুরু করা হয়। যার অধিকাংশ ব্যানার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ছিড়ে গেছে, ভেঙেও গেছে। আগের দিন ২৪ মে, রবিবার দুপুরে বাউফল থানার পূর্ব পাশে ডাকবাংলোর সামনের খালি জায়গায় সেই ব্যানার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সেই ব্যানার স্থাপনে নাজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক ৩০থেকে৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাধা দেন ও ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে মেয়র জুয়েল ওখানে যান। প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন। তারা বিষয়টি নিস্পত্তি করার জন্য বাউফল থানার মধ্যে একটি কক্ষে মেয়র জুয়েল ও চেয়ারম্যান ফারুককে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলাকালীন সময়ে স্থানীয় এমপি আসম ফিরোজ সাহেবের ভাতিজা কালাইয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে ৩০থেকে ৪০ জনের বহিরাগত একটি সন্ত্রাসী দল এসে ফের ব্যানার স্থাপনের বাঁশ ভাঙচুর করে এবং আমার কর্মীদের ওপর চড়াও হয়। যে দৃশ্য উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দেখেছেন। এরপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিবেশ শান্ত করে। যা সাংবাদিকদের অনেকের ক্যামেরায় ভিডিও ধারন করা হয়েছে। এছাড়াও যেখানে ঘটনা ঘটেছে এর কাছাকাছি একটি বাসায় সিসি ক্যামেরায়ও ওইসব দৃশ্য ধারণ হয়েছে। যা ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসন সংগ্রহ করেছে। মনির মোল্লার আগমনের পর তাপস দাস নামে এক ব্যক্তি আহত এবং পরবর্তীতে তিনি বরিশালে মারা যান। বিষয়টি দিনের বেলা ঘটেছে। যার সাী উপস্থিত পুলিশ ও সাংবাদিক ভাইয়েরা। তাপস আহত হওয়ার ঘটনা স্থলে আমি উপস্থিতই ছিলনা।

তাদের (এমপি গ্রুপ) দাবি ঘটনা ঘটলো রাস্তার ওপর। রাস্তায় কোনো রক্তের চিহ্ন নেই। তাপসকে পুলিশ ডাকবাংলোর মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমার কর্মীরা ছিল থানার পশ্চিম পাশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। মনির মোল্লা ডাকবাংলার মধ্যে অবস্থান নেয়। আমার নেতা কর্মী এবং তাদের মাঝখানে ছিল পুলিশ। পুলিশি বেরিকেট থাকায় আমার কর্মীরা পূর্বদিকে আসতে পারেনি। তারাও পশ্চিম দিকে যেতে পারেনি। তাপস ছিল ডাকবাংলোর মধ্যে আর ডাকবাংলার মধ্য থেকেই নাকি তাপসকে রক্তাক্ত অবস্থায় বের করা হয়। আমিও তাপস হত্যার বিচার চাই। এমপি ফিরোজ সাহেব আমাকে প্রতিপক্ষ মনে করে এমন সব নোংড়া রাজনীতি করছে। খুনের আসল রহস্য উদঘাটন করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এমপি গ্রুপের মিছিল:
এরআগে ঈদের দিন বেলা ১১টায় তাপস হত্যাকান্ডের ঘটনায় জুয়েলকে দায়ী করে বাউফল পৌর শহরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে। তারা দলীয় কার্যালয় জনতাভবন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে ইলিশ চত্তরে গিয়ে সমাবেশে করে। এ সময় তারা তাপস খুনের দায়ে জুয়েলের ফাঁসি দাবি মিছিল করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুলমোতালেব হাওলাদার, উপজেলা যুবলীগ সম্পাদক ও কালাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ মনির মোল্লা, এমপি গ্রুপ সমর্থিত পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফারুক। তারা এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ি বলে মেয়র জুয়েলকে গ্রেপ্তার ও তাঁর ফাঁসির দাবি করেন। সমাবেশ শেষে মিছিলটি আবার জনতা ভবনে ফিরে যায়।

তাপস হত্যায় সাংবাদিক আসামী:
তাপস হত্যা প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এবিএম মিজানুর রহমানকে আসামী করা হয়েছে। সাংবাদিক মিজানকে এ হত্যাকান্ডে জড়িয়ে আসামী করায় তীব্র নিন্দা ওক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ। পটুয়াখালীপ্রেসকাবের সভাপতি কাজী শামসুর রহমান ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদকের এক যৌথ বিবৃত্তি দিয়েছে। বিবৃতি দিয়েছেন দশমিনা প্রেসক্লাবের সভাপতি রিপন কর্মকার।

এতে উল্লেখ করা হয় পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুই গ্রুপের রাজনৈতিক সহিংসতার মামলায় প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি মো. মিজানুর রহমান মিজানকে আসামী করায় পটুয়াখালী প্রেসকাব তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এক যৌথ বিবৃতিতে পটুয়াখালী প্রেসকাবের সভাপতি কাজী শামসুর রহমান ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক মুফতী সালাহউদ্দিন বলেন, প্রকৃত ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা কোন দল বা গ্রুপের প্রতিহিংসার শিকার হওয়া স্বাধীনত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড়ই হুমকি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের নির্ভয়ে লেখনির স্বাধীনতা দিয়েছেন, সেখানে সত্য কথা লিখতে গিয়ে কোন দল বা গ্রুপের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাংবাদিকদের মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে, তা আমাদের কারও কাম্য নয় এবং এটা কারও জন্য মঙ্গলজনকও বয়ে আনতে না। তাই আমরা অতিদ্রুত ওই মামলা থেকে সাংবাদিক মো. মিজানুর রহমান মিজানের নাম প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় গোটা সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং ওই দল কিংবা ওই গ্রুপের সংবাদ প্রেরণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাউফল প্রেসকাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাচ্চু ও ওই উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা।

কামরুজ্জামান বলেন,ঘটনার সময় সাংবাদিক মিজান, অহিদুজ্জামান ডিউক, জসিমসহ আমরা কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম।তখন পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।আমরা ঘটনার ভিডিও ধারন করি।অথচ মিজানকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

সাংবাদিক মিজান বলেন, বাউফলের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি আ.স.ম ফিরোজ ক্রেষ্টের পরিবর্তে ওপেন টাকা চেয়েছিলেন। তখন প্রথম অলোতে ক্রেষ্ট না ক্যাশ চাই’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরে তিনি অনেক সমালোচিত হন। তখন থেকেই তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ। এছাড়া তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের অনিয়মের অসংখ্য সংবাদ প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এমপি ফিরোজ সাহেব থানায় ধরে নিয়ে পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করিয়েছেন।গণধর্ষন, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও লুটপাটের ছয়টি মামলাও করা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। যা সবই আদালতে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে।বেকসুর খালাস পেয়েছি।’ আক্ষেপ করে আরও বলেন, ‘এটাও আরেকটা হয়রানি। এবার শুরু করেছে লাশের রাজনীতি। তবে মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ধমিয়ে রাখা যায় না।’

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বাউফলের বিষযটি দু:খজনক। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র প্রান হানি আমাদের ব্যাথিত করে। বাউফলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রিয় সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’ বাউফল থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি)মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাদির টাইপ করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা গ্রহন করেছি। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই জানতে পারি একজন সাংবাদিককে এ মামলায় আসামী হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করবে। এ মামলায় নিরাপরাধ কারো হয়রানি হওয়ার সুযোগ নাই।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন