২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

এ মাসের মধ্যেই বিদ্যুত সমস্যার সমাধান: সংসদে প্রতিমন্ত্রী

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩২ অপরাহ্ণ, ০৬ জুন ২০২৩

এ মাসের মধ্যেই বিদ্যুত সমস্যার সমাধান: সংসদে প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: দেশজুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের জন্য দু:খ প্রকাশ করে একটু ধৈর্য ধরতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুত, জ্বালানী ও খনিজ সম্পাদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেছেন, লোডশেডিংটা আকস্মিক। এটা বেশিদিন থাকবে না। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই সমস্যার সমাধান করতে পারব। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাটাই প্রস্তাবের ওপর বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

চলতি অর্থবছরে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ৩২ কোটি ৪৬ লাখ চার হাজার টাকা মঞ্জুরি দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তার এই দাবিতে ছাটাই প্রস্তাব দেন ১০ জন সংসদ সদস্য। তবে আলোচনায় অংশ নেন ছয়জন। বাকীরা অনুপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আমাদের ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার, কিন্তু করে ফেলেছি ২৬ হাজার মেগাওয়াট। আর আজকে উৎপাদন হচ্ছে ৭ হাজার মেগাওয়াট।

একই দলের আরেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এখন কমবেশি এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। এই লোডশেডিং আরও বাড়বে। বিল পরিশোধ না করার কারণে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

কিন্তু বিদ্যুত বিল তো মানুষের বাকি নেই। গ্রাহকরা তো সবাই বিল দিচ্ছেন। তাহলে এই বিল কেন বাকি থাকছে? একটা হতে পারে ক্যাপাসিটি চার্জ। গণমাধ্যমে দেখেছি ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ এসেছে।

২০ হাজার কোটি টাকা নাকি এখনও বাকি আছে। কেন এত ক্যাপাসিটি চার্জ হয়? কেন চুক্তিটা এভাবে করা হলো যে, ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে। কেন বিদ্যুত উৎপাদনের সঙ্গে খাম্বা ও সঞ্চালন লাইন করা হলো না।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির আমলে বিদ্যুত ছিলো না, খাম্বা ছিলো। এখন বিদ্যুত আছে খাম্বা নেই। ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। টাকা সর্টেজ। মানুষ গরমে কষ্ট পাচ্ছে। শামীম হায়দার বলেন, ১৫৩ টি কেন্দ্রের সবগুলোতে কম উৎপাদন হচ্ছে। সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের একটি জায়গা ছিলো বিদ্যুত। সেটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেল। এ থেকেতো আমি মনে করি জনরোষের সৃষ্টি হবে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা ও বিদ্যুত বিভাগ হুমকির মধ্যে পড়েছে। কবে যে আবার লোডশেডিং কমবে! এখন যেভাবে বিদ্যুত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আগামী ১০ বছর পরে আমাদের গ্যাসও শেষ হয়ে যাবে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে না। বিদ্যুত না থাকলে দেশের অগ্রগতি থেমে যাবে। কৃষি উৎপাদন কমে যাবে। সব জায়গায় স্থবিরতা তৈরি হবে।

বিদ্যুতমন্ত্রী গোটা বাংলাদেশে বিদ্যুত দিয়েছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এখন বিদ্যুৎ নেই। হঠাৎ করে কী হলো যে বিদ্যুত চলে গেল। আগেই যদি কয়লা বা ডিজেল আমদানি করা যেতো আজকের এই অবস্থা হতো না।

তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তড়িৎ গতিতে আমাদের কয়লা আমদানি করে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালু করতে হবে। একই দলের আরেক সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, শতভাগ বিদ্যুত দিয়েছে সরকার। বিদ্যুত চলে যাচ্ছে, কিন্তু মন্ত্রীর কোন কথা নেই। কেন? জনগণকে কনভিন্স করতে হবে।

গণশুনানি করে বিষয়টি জানাতে হবে। লোডশেডিংয়ের তথ্য জানাতে হবে। কোথায় অব্যবস্থাপনা রয়েছে সেটা দেখতে হবে। কর্মকর্তাদের ভেতর, না অন্য যায়গায় সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। এখানে কিন্তু অনেক ঘষেটি বেগম থাকতে পারে। তারা যাতে সরকারের সুনাম নষ্ট করতে না পারে, খেয়াল রাখতে হবে।

বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কোভিড আমাদের অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে। একেতো জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আর যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন স্বাস্থ্যগতভাবে তাদের মেমোরিটা লস করে দিয়েছে। কারণ আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই। ১৬ ঘণ্টা, ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। সেখান থেকে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে দিনের বেলায় ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারি। পিক আওয়ারে সন্ধ্যা বেলায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি।

দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং বর্তমানে চলছে। আরেক সংসদ সদস্য বলছেন আমরা প্রচার করছি না। কিন্তু আমি বারবার আসছি, প্রচার করছি। ওয়েবসাইটে দিয়েছি, বিজ্ঞাপন প্রচার করছি। আমরা কষ্টটা সবার সঙ্গে ভাগ করতে চেয়েছি। সবাইকে জানিয়েছি কোথায়, কীভাবে হবে। এবং মিড়িয়াতে বলা হয়েছে বার বার। লোডশেডটা আকস্মিক, এটা বেশিদিন থাকবে না। এই আকস্মিকতার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি।

বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, আমরা সময়মতো কয়লার জন্য এলসি করতে পারিনি। বৈশ্বিক ব্যবস্থা ও বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুর ওপর চিন্তা করে সময়মতো কয়লাটা আনতে পারি নাই। যার কারণে পায়রার এ অবস্থা হয়েছে। আগামি ১৫ দিনের মধ্যে প্ল্যান্ট চালু করে দেব।

তিনি বলেন, আমাদের নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু হবে, পায়রা চালু হবে। রামপাল চলছে। এসএস পাওয়ার চালু হয়ে যাবে। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনছি। আরও নিয়ে আসব। কিন্তু কিছু কিছু জায়গা আমাদের যে সমস্যা হচ্ছে সেটা হচ্ছে বৈশ্বিক জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের অর্থের যোগানে সমস্যা হয়ে গেছে।

এটা বেশি দিনের জন্য না। আমরা মনে করি ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আপনারা সবাই একটু ধৈর্য্য ধরেন। বিশ্বের দিকে ও নিজের দেশের দিকে তাকিয়ে যদি আমরা ধৈর্য্য ধরি তাহলে যে সমস্যাটা দেখতে পারছি সেটা পার হতে পারব।

মধ্যরাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আগে ছিল না। অটো রিকশা সাড়ে তিনহাজার মেগাওয়াটের মত বিদ্যুৎ নিয়ে যায়। আমরাতো বন্ধ করিনি। সেগুলোও চালু রেখেছি। সাধারণ মানুষ যাতে সেটা ব্যবহার করতে পারে। ৪০ লাখের মতো অটো রিকশা আছে দেশে। আমরা তাদের ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ করছি। সবাইকে বলছি একটু ধৈর্য্য ধারণ করুন। এই মাসের মধ্যে সমাধান করতে পারব।

11 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন