২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ঐক্যফ্রন্টে মেনন?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:০০ অপরাহ্ণ, ২০ অক্টোবর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কাস পার্টির রাশেদ খান মেনন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ২০১৮–এর নির্বাচনের পর তাকে আর মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। গতকাল ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি সাক্ষী দিয়ে বলছি,‌ ‌‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আমিও নির্বাচিত হয়েছি, কিন্তু জনগণ ভোট দিতে পারেনি।’

মেননের এ বক্তব্যের জেরে টিপ্পনী কেটেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, মন্ত্রী হলে কি রাশেদ খান মেনন এ কথা বলতেন?

এদিকে রাশেদ খান মেনন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে পারেন এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। গত কয়েকদিন ধরেই ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তার দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এর আগে অবশ্য তিনি বাম মোর্চার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু বাম গণতান্ত্রিক জোট রাশেদ খান মেননকে নেওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাকে একজন সুবিধাবাদী হিসাবে মনে করে বাম মোর্চার নেতারা। তিনি মন্ত্রীত্ব না পেয়েই ভোল পাল্টে ফেলেছেন বলে মনে করে বাম মোর্চার নেতারা। একারণেই তারা তাকে জোটে নেওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছেন। এরপরই রাশেদ খান মেনন ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। ক্যাসিনোর ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে। এমতাবস্থায় তিনি ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দিচ্ছেন বলে গুঞ্জন ওঠেছে।

অন্যদিকে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ওরফে ক্যাসিনো সম্রাট তথ্য দিয়েছেন, ক্যাসিনো থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত মাসোহারা না পেলে অকথ্য ভাষায় যুবলীগের নেতাদের গালিগালাজ করতেন সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। জুয়ার টাকায় তিনি ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণসহ বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন। ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে র‌্যাবের উদ্ধার করা চাঁদাবাজির খাতায় মেননের নাম রয়েছে ৫ নং সিরিয়ালে। প্রতি মাসে সম্রাটের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানান, গত সংসদ নির্বাচনের আগে রাশেদ খান মেনন এককালীন কয়েক কোটি টাকা নেন। পার্টি ফান্ডে নির্বাচনী ডোনেশন হিসেবে এই টাকা নেন তিনি। এছাড়া পোস্টার ছাপানো থেকে শুরু করে নির্বাচনী ক্যাম্প বানানো ও মাইকে প্রচারের সবকিছুই আয়োজন করে দেন সম্রাট। খালেদের মাধ্যমে এসব নির্বাচনী আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কিত খরচের বিল দেয়া হতো।

সম্রাট আরো বলেন, তিনি নিজেও ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাশেদ খান মেনন তাকে নির্বাচনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। সম্রাটকে বিশেষ স্নেহ করতেন রাশেদ খান মেনন। রাজনৈতিক মহলে সম্রাটের অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যেই বলতেন ‘সম্রাটের হৃদয় আকাশের মতো উদার। সে একদিন অনেক বড় নেতা হবে’।

সূত্র জানায়, রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদও তথ্য প্রমাণ দিয়ে মেননের চাঁদাবাজির ফিরিস্তি তুলে ধরে।

খালেদ জানান, মেনন ভাইকে বিভিন্ন টেন্ডার থেকেও টাকা পয়সা দিতে হত। বড় বড় অনেক ঠিকাদারি কাজের টেন্ডার পাওয়ার পর ৫ পার্সেন্ট হারেও কমিশন নিয়েছেন মেনন। জিকে শামীমের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্যতা গড়ে ওঠে।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে বামপন্থী নেতা রাশেদ খান মেননের নাম উঠে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ক্যাসিনোর সঙ্গে যারাই জড়িত ছিলেন তাদের সবাইকেই আইনের মুখোমুখি করা হবে। সেক্ষেত্রে কে বাম নেতা বা কে ডানপন্থী নেতা তা আমাদের বিবেচ্য নয়।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন