২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

“ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ”

✪ আরিফ আহমেদ মুন্না।
আজ ১৭ এপ্রিল। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের পথে একটি ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কারাগারে আটক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক করে গঠিত বিপ্লবী সরকার মেহেরপুর জেলাধীন বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে শপথ গ্রহণ করে। শপথ গ্রহণের এই স্থানটির নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর’ এবং এই দিনটি ইতিহাসে স্থান পায় ‘মুজিবনগর দিবস’ হিসেবে।

মুক্তিসংগ্রামের ধারাবাহিকতায় দিনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই বিপ্লবী সরকারই হচ্ছে বাংলাদেশের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের বৈধ সরকার, যাদের কৃতিত্ব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে সংঘটিত করা এবং বিজয় অর্জন পর্যন্ত যথাযথ নেতৃত্বদান। এই সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, কূটনৈতিক ও প্রচার ক্ষেত্রে বিশ্ব জনমত গঠন এবং এক কোটি উদ্বাস্তুর পুনর্বাসন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছিল। আজকের এই দিনে মুজিবনগর বিপ্লবী সরকারের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় ৪ নেতাসহ ওই সরকার পরিচালনা ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং কূটনীতিক সবার প্রতি রইলো আমার গভীর শ্রদ্ধা।

১৭ এপ্রিল ১৯৭১ যে সরকার শপথ গ্রহণ করে সে সরকার গঠিত হয়েছিল ১০ এপ্রিল ১৯৭১ জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র মোতাবেক। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল। ওই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলেই ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্র প্রণীত ও জারি হয়েছিল। কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের এমএনএ এবং এমপিএদের অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। এই মন্ত্রিপরিষদ এবং এমএনএ ও এমপিএ-রা ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেন।

সে সরকারে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নিয়োগ করা হয়। ১১ এপ্রিল এমএজি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। এরপর ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রূপে ঘোষণা করা হয়। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি একে একে প্রধানমন্ত্রী ও তার তিন সহকর্মীকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং নতুন রাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল আবদুর রবের নাম ঘোষণা করেন। এরপর সে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ পাঠ করা হয়। যে ঘোষণাপত্রটি ১০ এপ্রিল প্রচার করা হয়েছিল এবং এর কার্যকারিতা ঘোষণা করা হয়েছিল ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে।

বাংলাদেশ কী কারণে স্বাধীনতা ঘোষণা করে তার ব্যাখ্যা দেয়া হয় ওই ঘোষণাপত্রে। ওই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়- “বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। এই ঘোষণাপত্রেই বলা হয়, ‘সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন”।

যতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছে ততদিন মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে এই ঘোষণাপত্র কার্যকর ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পরও নতুন সংবিধান প্রণীত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ঘোষণাপত্র সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ২৩ মে ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশের গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং সংবিধান প্রণয়নের পর এর অংশে পরিণত হয়। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হলো পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের সূচনা করা হয়। সম্প্রতি দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে- এ নিয়েও বিতর্কের অবতারণা করা হচ্ছে।

পঁচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে দেশে যে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব শুরু হয়, স্বাধীনতা বিরোধীদের সরকারের অংশ বানিয়ে জাতীয় ইতিহাসের প্রকৃত নায়কদের কৃতিত্ব মুছে ফেলার যে অপপ্রয়াস চলে, এখনো তা বর্তমান। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতাসহ যারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন মুক্তি সংগ্রামে, যুদ্ধক্ষেত্রে আর জাতিগঠনে ইতিহাস তাঁদের যে স্থান দিয়েছে সে মতোই তাঁদের সম্মান দিতে হবে। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারীরাই একদিন ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের মাইলফলক ঘটনা ও দিবসগুলোকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ, তাৎপর্য অনুধাবন এবং নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন আমাদের ঐতিহাসিক দায়। এর মাধ্যমেই উদ্ভাসিত হবে সঠিক ইতিহাস আর মূল্যায়িত হবেন জাতির প্রকৃত নায়করা। #

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন