১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

করোনাকালে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা এনজিওর কিস্তি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৪৩ অপরাহ্ণ, ১৯ জুন ২০২০

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক :: মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ এখন জীবনের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটির কারনে গত কয়েক মাস কোনো আয় রোজগার না থাকায় অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে এসব মানুষের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে এনজিওর ঋণের কিস্তি। এই দুঃসময়েও এনজিওগুলো ঋণের কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। এমনকি বিভিন্ন এনজিওকর্মীদের বিরুদ্ধে ঋণগ্রহীতাদের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বর্তমান সরকার এই সঙ্কটকালে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এনজিওগুলোকে সব ধরনের কিস্তি আদায় পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বলেছে। তারপরও এনজিওগুলোর এই তৎপরতায় সরকারের নির্দেশনা অমান্য করার প্রমাণ দেয়। সেই সাথে সাধারন মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকার বহু অসহায় নারী-পুরুষ কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন। সরকার লকডাউন তুলে নিয়েছে এমন খবরের পরপরই কর্মহীন ঘরবন্দী মানুষের মাথার ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি।

করোনা পরিস্থিতির শুরুতে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখির পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে কিছু দিন কিস্তি আদায় বন্ধ রাখলেও জুনের শুরুতে সরকারি ছুটি উঠিয়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনজিওগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে কিস্তি আদায়ের জন্য। তারা তাদের মাঠকর্মীদের ঋণের টাকা আদায়ের জন্য মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। আর মাঠকর্মীরাও চাকরি বাঁচাতে কিস্তির টাকার জন্য গ্রাহকদের নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন এবং নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের খালেদা আক্তার জানান, স্বামীর ব্যবসার জন্য কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে গত বছর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। মাসিক কিস্তি হিসেবে ৪৪ কিস্তিতে গ্রামীণ ব্যাংকের লভ্যাংশসহ পরিশোধের শর্তে এ ঋণ নেন তিনি। ইতিমধ্যে ১০ কিস্তি পরিশোধ করেছেন। এর মধ্যে মার্চ মাসের মাঝখানে সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়লে আমার স্বামীর মাছ ব্যবসায় ধস নামে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনায় মার্চ মাস থেকে কিস্তি নেয়া স্থগিত ছিলো তারপরেও প্রতিমাসেই তার স্বামীর ব্যবসায় মোটা অংকের লোকসান হচ্ছে। সন্তানদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনই কষ্টকর হচ্ছে। তার মধ্যে জুন মাসের ১০ দিন যেতে না যেতেই গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ফোন করে তাকে জুন মাসের কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ রাজিয়া বেগম। তিনি জানান, পাঁচ মাস আগে গত জানুয়ারি মাসে মাসিক কিস্তিতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার ঋণ নেন। তিনটি কিস্তি পরিশোধ করার পরেই মহামারি করোনা দুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামী আইনজীবী সহকারী মো. শাহজাহান। এপ্রিল ও মে মাসে ঋণের কিস্তির জন্য চাপ না দিলেও জুন মাসের কয়েকদিন গেলেই তাকে অফিসে গিয়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য মুঠোফোনে কল দিয়ে চাপ দেন সংশ্লিষ্ট কিস্তি গ্রহীতা গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়োজিত অফিসার। এতে তিনি কিস্তি দিতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তাদের চাপ ও এক ধরনের হুমকিতে বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিস্তি পরিশোধের জন্য ঋণ নিয়েছেন।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের জেলা ম্যানেজার আব্দুস সামাদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমরা যে নির্দেশনা পেয়েছি তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে জোর করে কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করা যাবে না। তবে ১০ মে থেকে স্বল্পপরিসরে সীমিত আকারে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। এজন্য যাদের কিস্তি শেষের দিকে তারা ২-১টি কিস্তি পরিশোধ করলেই ঋণ পরিশোধ করা হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ২০ শতাংশ গ্রাহকের কাছ থেকেও কিস্তির টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহক নিজের ইচ্ছায় দিতে চাইলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন