২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

করোনাকালে মশা দমনে যা করণীয়

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০০ অপরাহ্ণ, ২৬ জুন ২০২০

ড. মোঃ আসাদুজ্জামান মিয়া:: ১. বৈশ্বিক কোভিড-১৯ এর ভয়ানক ছোবল এখন আমাদের ওপর পড়েছে। জীবন বাচাঁতে সবকিছু প্রায় অচল। সকলের দৃষ্টি এখন করোনার দিকে। আমাদের হাসপাতালগুলো করোনা রোগী নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। এরই মধ্যে আবার বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু। সারা দেশে মশার উৎপাত বাড়তে শুরু করেছে। আর এসময়ে মশা মানেই ডেঙ্গুর হাতছানি। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। সময় বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ৪-৫ গুণ। বর্ষা মৌসুম চলছে। বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এই বৃষ্টির পানি যেখানেই (পরিত্যাক্ত টায়ার, পানির ট্যাংকি, বালতি, টব, গাছের গুড়ির ফাঁকা জায়গা, আবদ্ধ নালা ইত্যাদি) ২-৩ দিন পর্যন্ত জমা থাকছে সেখান থেকেই মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে এবং তা থেকে তৈরী হচ্ছে মশা। গত বছর মশা আমাদেরকে অনেক ভুগিয়েছে। প্রায় এক লাখেরও বেশী মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। অনেক প্রাণহানী (১৬৪ জন) ঘটেছিল। ২০১৯’র জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই ৩টি মাস দেশে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সর্ব্বোচ্চ। গতবছর মশা নিয়ন্ত্রণে আগাম ও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং অনেক চেষ্টা করেও উল্লেখযোগ্য সফলতা আমরা পাইনি। তাই মশা নিয়ে আমাদেরকে এখনই ভাবতে হবে। করেনা দুর্যোগের এই সময়ে ডেঙ্গুুর প্রতিকার নয় বরং করতে হবে মশার শক্ত প্রতিরোধ। মশা নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. বর্ষা মৌসুমের এসময়টাতে ২-১ দিন পর পর থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টি হবে। বৃষ্টির পানি আমাদের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে এবং অনেক জায়গায় জমে থাকবে। আর এই জমা পানিতে জন্ম নিবে মশার লার্ভা। সুতরাং বর্ষার শুরুতে জন্ম নেয়া এই লার্ভা ধ্বংস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য প্রয়োজন বিশেষ ব্যাবস্থাপনা। লার্ভা ধ্বংস করতে এর উৎস ধ্বংসকরণ (সোর্র্স রিডাকশন) ও লার্ভিসাইডিং (কীটনাশক) কার্যক্রম বিশেষভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও সাধারন মানুষের করণীয় নিশ্চিত করা দরকার। মশার লার্ভা যাতে আমাদের বাসায় বা আঙিনায় জন্ম নিতে না পারে সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে। ব্যক্তিগত স্থাপনা বা বাসাবাড়ি পরিস্কার পরিছন্ন রাখার দায়িত্ব স্ব-স্ব মালিককে বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা এখন একটা কঠিন সময় পার করছি। ব্যক্তিগত প্রোটেকশন নেওয়া এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিকও বটে।

৩. বৈশি^ক কোভিড-১৯ দুর্যোগে দেশে এখন সরকারী/বেসরকারী বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান, অফিস, বিল্ডিং, স্থাপনা বা পরিত্যাক্ত স্থানগুলো বন্ধ। হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও তালাবদ্ধ। তাই এসব জায়গায় মশা এবং এর লার্ভারা নির্বিঘ্নে জন্ম নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং এসব জায়গায় বেশী নজর দিতে হবে। তাছাড়া করোনাকালীন এই সময়ে আমদেরকে বেশিরভাগ সময় বাসাতেই থাকতে হচ্ছে এবং এতে মশারাও আমাদেরকে কামড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে বেশি। করোনাকাল দীর্ঘ হলে এই সুযোগ আরও বাড়বে এবং ডেঙ্গুর ঝুঁকিও বাড়বে। মশা করোনাভাইরাস না ছড়ালেও ডেঙ্গু ঠিকই ছড়াবে। তাই আমাদেরকে মশা থেকে সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এসময়গুলোতে ফুল স্লিভস জামা পরিধান, ঘুমের সময় মশারী টানানো, দরজা-জানালায় নেট স্থাপন বা অপ্রয়োজনে না খোলা, বাজারের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ক্রিম, স্প্রে বা কয়েল ব্যাবহার করা যেতে পারে।

৪. সরকার অবশ্য এ বছর মশা দমনে আগাম কার্যক্রম শুরু করেছে। সিটি কর্পোরেশনগুলো বেশ সজাগ আছে। মিডিয়াও যথারীতি সোচ্চার। গতবছর মিডিয়া ডেঙ্গু মহামারী নিয়ে ব্যাপক কাভারেজ দিয়েছিল। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে মিডিয়াগুলোকে আরও বেশি সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন, বিশেষকরে বৃষ্টির পানি জমতে না দেয়া বা লার্ভা না জন্মানোর ব্যাপারে। কারণ ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ঠেকাতে মশা নিয়ন্ত্রণ পূর্বশর্ত। ঠিকমতো মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গুর মহামারী ঠেকানো যাবে না। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদেরকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই মশাকে রুখতে হবে। তবে মশা সামলাতে গিয়ে করোনার কথা ভুলে গেলে মহাবিপদ হবে।’

লেখক-

ড. মোঃ আসাদুজ্জামান মিয়া

সহযোগী অধ্যাপক (কীটতত্ত্ব), পবিপ্রবি, বাংলাদেশ

ভিজিটিং সায়েনটিস্ট, এনাসটাশিয়া মসকিটো কন্ট্রোল, ফ্লোরিডা, আমেরিকা।

ইমেল:  mamiah81@yahoo.com

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন