২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

করোনায় মহিলাদের কম মারা যাওয়ার রহস্য উম্মোচন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৫১ অপরাহ্ণ, ২৭ মার্চ ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বিশ্বের ১৯৬টি দেশ ও অঞ্চলে। এটা এমন এক শক্তিশালী অণুজীব যেটা রাষ্ট্রের কাঁটাতার, জাতীয়তা কিছুই মানছে না। সুনামির গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। তবে সংক্রমণের ক্ষেত্রে আশ্চর্য একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ভাইরাস মেয়েদের খুব বেশি আক্রমণ করছে না। দেখা যাচ্ছে করোনার শিকার আধিকাংশ মধ্যবয়স্ক ও বয়স্ক পুরুষরা। ইতালিতে করোনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ৭১ শতাংশই পুরুষ। কিন্তু করোনা কেন মেয়েদের তুলনামূলক কম আক্রমণ করছে? মহিলাদের ক্ষেত্রে কি প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি? না-কি অন্যকিছু। এতদিন এটা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও এবার সেই রহস্য উম্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন একদল মার্কিন বিজ্ঞানী।

গত সপ্তাহেই চীনের সরকারি সংস্থা করোনাভাইরাসের সাম্প্রতিকতম ঘটনার বৃহত্তম বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। সেখানে মহিলা এবং পুরুষ, উভয়ের মধ্যে এর সংক্রমণ প্রায় সমান হলেও, গবেষকরা দেখেছেন পুরুষদের মধ্যে মৃত্যুহার (২.৮ শতাংশ) মহিলাদের মৃত্যুহারের (১.৭ শতাংশ) চেয়ে বেশি।

গ্লোবাল হেলথ সর্বাধিক সংখ্যক কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটেছে এমন ২৫টি দেশ থেকে তথ্য নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে। সেখানেই রহস্য উম্মোচন হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

কোভিড -১৯ আক্রান্ত হলে রোগীর মৃত্যু তখনই হয় যখন আগে থেকেই তিনি অন্য কোন রোগে ভুগতে থাকেন। মৃত্যু হওয়া অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা আগে থেকেই হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে এ ধরণের দীর্ষস্থায়ী রোগ তুলনামূলক কম হয়। আর সে কারণে করোনাও সুবিধা করতে পারে না।
স্মোকিং এবং অ্যালকোহল পান করেন এমন ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের মধ্যে ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবনের মাত্রা মহিলাদের তুলনায় অনেক বেশি। এই অভ্যাসগুলির কারণে অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সৃষ্টি হয়। ফলে পুরুষদের ক্ষেত্রে করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে, হেপাটাইটিস সি এবং এইচআইভি সহ বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য পুরুষদের সহজাত কম অ্যান্টিভাইরাল প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। অন্য প্রাণীদের উপর চালানো গবেষণায়ও একই তথ্য উঠে এসেছে।

ইস্ট্রোজেন প্রতিরোধক কোষগুলি থেকে অ্যান্টিভাইরাল প্রতিক্রিয়া বাড়ানোর জন্য হরমোনগুলিও প্রধান ভূমিকা পালন করে বলে বিশ্বাস করা হয়। বিজ্ঞানীরা অনেকগুলি জিন আবিষ্কার করেছেন যেগুলোকে এক্স ক্রোমোসোম প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করে। পুরুষের দেহে একটি এক্স ক্রোমোসোম রয়েছে। নারীদের রয়েছে দুটি। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই নারীদেহ বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে।

গবেষকরা দেখেছেন, পুরুষের তুলনায় নারীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এ ক্ষেত্রে বেশি ভুমিকা রেখেছে। এই ‘সহজাত’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি শক্তিশালী হওয়ায় সংক্রমিত নারীরা ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে ফেলতে পারেন।

ইউসি ডেভিসের ফুসফুসবিষয়ক গবেষক কেন্ট ই পিঙ্কারটন বলেন, ‘নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষদের তুলনায় ভালো কাজ করছে জেনে আমি মোটেই অবাক হইনি। বহু বছর ধরে ইমিউনোলজিস্টরা কেবল পুরুষদের নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কারণ, নারীর হরমোনের ভিন্নতা তাদের গবেষণার ফলাফলকে জটিল করে তুলছিল।’

উল্লেখ্য, করোনায় বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এদের মাঝে মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ১৪৫ জনের। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৪ জন।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন