২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

করোনায় মৃত্যু: শ্রীলঙ্কায় পোড়ানো হচ্ছে মুসলিমদের মরদেহ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২২ পূর্বাহ্ণ, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কায় ১০ শতাংশই মুসলিম। সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায় আগে অন্তহীন সমস্যায় থাকলেও ২০১৯ সালের এপ্রিলে কলম্বোর একাধিক চার্চে সন্ত্রাসী হামলার পর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে কয়েকগুণ। ভয়াবহ সেই ঘটনার পর থেকেই ইসলামভীতি এক আতঙ্করুপে ভর করেছে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অভিযোগ আছে, দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস মহামারির জন্যে মুসলিমদের দায়ী করে প্রচারণা চালাচ্ছে স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম। ফলে লঙ্কান সরকারের কর্মকাণ্ডগুলোও হয়ে উঠেছে ইসলাম বা মুসলিম বিদ্বেষী। মুসলমানদের ধর্মীয় রীতি ও অনুভূতির তোয়াক্কা না করেই করোনায় মৃত সকলের দেহ পোড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর প্রচার করেছে।

সংবাদে জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে শ্রীলঙ্কায় হু হু করে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই সেখানে অন্তত ২৯ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ১৪২ জন।

দেশটিতে করোনায় মৃতদের মধ্যে ১৯ মুসলিমের দেহ নিতে আবেদন করেনি তাদের পরিবারগুলো। রাজধানী কলম্বোর একটি মর্গে রয়েছে মরদেহগুলো। এখন কোয়ারেন্টিন নীতির কথা বলে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন লঙ্কান অ্যাটর্নি জেনারেল দাপ্পুলা ডি লিভেরা।

সেখানকার পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে গত বুধবারই (৯ ডিসেম্বর) পাঁচটি মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাকিগুলোও পোড়ানো হবে।

তবে সরকারের এমন নীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন স্থানীয় মুসলিমরা। লঙ্কান সুপ্রিম কোর্টে মরদেহ পোড়ানো আটকানোর জন্য অন্তত ১২টি আবেদন করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও একাধিক নাগরিক অধিকার সংস্থা। তবে কোনো কারণ উল্লেখ না করেই আবেদনগুলো খারিজ করে দেয় শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ আদালত।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা সহায়ক রিহাব মাহামুর আল-জাজিরাকে বলেন, মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে মরদেহ পোড়ানো খুবই অন্যায়।

তার মতে, আন্তর্জাতিক নির্দেশিকায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, করোনায় আক্রান্তদের মরদেহ মাটিচাপা বা দাহ করা যেতে পারে। শ্রীলঙ্কা মুসলিম সম্প্রদায়কে আরও কোণঠাসা করতে এই মহামারিকে ব্যবহার করছে।

শ্রীলঙ্কান মুসলিম কাউন্সিলের সহ-সভাপতি হিলমি আহামেদ সাংবাদিকদের বলেন, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, অ্যাটর্নি জেনারেল এই স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুসলিমদের সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিবার কোয়ারেন্টিনে থাকে এবং ওই অবস্থায় মরদেহ শনাক্ত করারও সুযোগ থাকে না। কোনো ময়নাতদন্ত হয় না। এর কারণে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।

গত মাসে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) শ্রীলঙ্কাকে মুসলিমদের মরদেহ কবর দিতে পরিবারগুলোকে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। যদিও সেই আহ্বানে শ্রীলঙ্কা সাড়া দেবে তেমন কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন