১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ গেল ১৮৭ বাংলাদেশির

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩২ অপরাহ্ণ, ২২ এপ্রিল ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে এবার প্রাণ হারিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ দাস। দীর্ঘ ২৮ দিন হাসপাতালে করোনার সাথে যুদ্ধ করে গত মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) তিনি মারা যান। এনিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় নিউইয়র্কে আরও আট বাংলাদেশি মারা গেলেন। এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ১৮৭ জন বাংলাদেশি।

মঙ্গলবার নিউইয়র্কে করোনায় মারা গেছেন বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শফি হায়দার খান। এর আগে চলতি মাসের ৪ তারিখে করোনার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তার ছোট ভাই সায়ফুর হায়দার খান। মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে পুরো বাংলাদেশি কমুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসের প্রকোপ এবং মৃত্যু কমলেও বাংলাদেশি কমুনিটিতে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না।

মঙ্গলবার গত ২৪ ঘন্টায় নিউইয়র্কে যে আট বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন-বাবুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুস সালাম খান, শফি হায়দার খান, ডা. আবদুজ জাহের, আতাউর রহমান চৌধুরী, আব্দুল খালেক ও বিদ্যুৎ দাস।

নিউইয়র্কের কুইন্সের লংআইল্যান্ডে বসবাসকারী বাবুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহে… রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এবং ২ কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।

জানা গেছে, জনাব বাবুল প্রায় ১৫ দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি গত ২১ এপ্রিল সকালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য, তার দেশের বাড়ি ঢাকার মগবাজারের মিরবাগ। তিনি নিউইয়র্কে ট্যাক্সি চালাতেন। তার মৃত্যুতে গাজিপুর জেলা সমিতির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

নিউইয়র্কের ব্রুকলীনে বসবাসকারী কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রবীণ সদস্য সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ সারেং) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। এ বিষয়ে গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন।

উল্লেখ্য, তার দেশের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়।

নিউইয়র্কের ব্রুকলীন নিবাসী আব্দুল খালেক করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২১ এপ্রিল সকালে ব্রুকলীনের ব্রুকডেল হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। জানা গেছে, আব্দুল খালেক প্রায় দেড় বছর আগে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন। তার মেয়ে তার জন্য আবেদন করেছিলেন।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ৩ টায় লংআইল্যান্ডের নর্থ সোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি এবং কম্যুনিটি বোর্ড মেম্বার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের শ্বশুর আব্দুস সালাম খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। তার দেশের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারের আংগারজোর।

টাঙ্গাইল জেলা সমিতির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ খান রাজেসের বড় ভাই শফি হায়দার খান গত ২১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৪ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।

তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ মার্চ ম্যানহাটানের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল তার ছোট ভাই সায়ফুর হায়দার খান করোনায় আক্রান্ত হয়ে জ্যামাইকা হাসপাতালে মারা যান।

গোলাপগঞ্জ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুহীন চৌধুরীর বাবা আতাউর রহমান চৌধুরী আলতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুইন্সের একটি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। তিনি তার ছেলের সাথে এস্টোরিয়ার ডিটমার্স এলাকায় থাকতেন।

বাফেলো নিবাসী ডা. আবদুজ জাহের করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাফেলোর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর।

যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৮ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তার সম্পর্কে ঐক্য পরিষদের নেতা এবং কলামিস্ট শিতাংশু গুহ জানান, তিনি প্রায় ২৮ দিন করোনার সাথে যুদ্ধ করে মারা যান। তার মৃত্যুতে পুরো বাংলাদেশি কমুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কারণ তিনি ছিলেন সবার প্রিয়, মিষ্টিভাষী এবং পরোপকারী একজন মানুষ।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে এবং এতে প্রাণ হারিয়েছে দেশটির প্রায় ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে নিউইয়র্কেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার এবং মারা গেছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন