২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

করোনা দুর্যোগে বরিশাল বিএনপির ভুমিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৪৮ অপরাহ্ণ, ৩০ এপ্রিল ২০২০

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ২১ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিল ২৬৪ নেতা। এছাড়া একসময় এখানে ২৩ আসনের ১৭টিই ছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটির দখলে। তবে চলমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এসব নেতাদের প্রায় কাউকেই খুঁজে পাচ্ছে না দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

(এই প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে বরিশাল ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহীনের নামে প্রকাশ পেয়েছে।)

চরম বিপদের এ মুহূর্তে অসহায় সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, দলের দরিদ্র কর্মী-সমর্থকরা পর্যন্ত ন্যূনতম সহায়তা পাচ্ছেন ন। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিএনপির জেলা উপজেলার নেতা থেকে শুরু করে কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরাও।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘মনোনয়ন প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের প্রশ্নে যদি বলেন, তাহলে বলব এদের শতকরা ৫ ভাগ নেতাও কাউকে কোনো সহযোগিতা করেননি চরম এই বিপদের মুহূর্তে।’

বরিশাল বিভাগে রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি যথাক্রমে শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব ও মেজর (অব.) হাফিজ।

এদের মধ্যে ওমর, আলতাফ ও হাফিজ বিএনপি আমলে পালন করেছেন মন্ত্রীর দায়িত্ব। এছাড়া বরিশাল সদর আসনের সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার এখন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে উল্লেখিত প্রভাবশালী নেতাদের কেউই বর্তমানে নেই এলাকায়। আর সহায়তা প্রশ্নে আলতাফ হোসেন চৌধুরী ছাড়া অন্যরা আসেননি এগিয়ে।

ঝালকাঠী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, ‘আমাদের জেলায় থাকা দুটি নির্বাচনী এলাকায় গত জাতীয় নির্বাচনের সময় শাহজাহান ওমরসহ মোট ১৪ জন চেয়েছিলেন দলীয় মনোনয়ন। শেষ পর্যন্ত এদের মধ্যে ধানের শীষ হাতে পান শাহজাহান ওমর ও জেবা গাজী। এরা দু’জন তো দূরের কথা মনোনয়ন চাওয়া ১৪ জনের কাউকেই আমরা এখন পাশে পাচ্ছি না। আমাদের ফোন পর্যন্ত ধরেন না অনেকে। তবে স্থানীয়ভাবে দরিদ্রদের কিছুটা সহায়তা করেছি আমরা। এটা করা হয়েছে নিজস্ব উদ্যোগে।’

বরিশাল জেলার ৬ নির্বাচনী এলাকার মধ্যে একমাত্র বরিশাল-২ নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় সহায়তা দিয়েছেন গত জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি নেতা সরফুদ্দিন সান্টু। দরিদ্রদের জন্য ১০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। এছাড়া জেলার অপর ৫ আসনে মনোনয়ন পাওয়া বাকিদের কোনো কার্যক্রম নেই।

বুধবার পর্যন্ত বরিশালে আসেননি সদর আসনের সাবেক এমপি সাবেক মেয়র দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। অসহায় দরিদ্র এমনকি দলের নেতাকর্মীদের পর্যন্ত কোনোরকম সহায়তা করেননি তিনি। যদিও এই অভিযোগ স্বীকার করেননি দলের বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাপকভাবে ত্রাণ দেয়া না হলেও বিকাশের মাধ্যমে কিছু নেতাকর্মীকে অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছেন মজিবর রহমান সরোয়ার।’ সরোয়ার না এলেও বরিশালে দরিদ্রদের ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে মহানগর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আফরোজা নাসরিন, জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা পারভেজ আকন বিপ্লব।

নির্বাচনের পর থেকে বিগত সোয়া দুই বছরে একবারও এলাকায় আসেননি বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) ও বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি জহিরুদ্দিন স্বপন ও নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর। করোনা সংকটেও কোনোরকম সহায়তা দেয়ার নজির নেই তাদের।

বরিশাল (উত্তর) জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘কেউ না এলেও আমরা স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। অনেককে নগদ অর্থ সহায়তাও দেয়া হয়েছে।’

বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘অসুস্থ থাকায় এলাকায় আসা বা কোনোরকম ত্রাণ সহায়তা দিতে পারেননি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান। তবে আমরা স্থানীয়ভাবে বিএনপির উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি।’

ভোলা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির স্বপন বলেন, ‘চরফ্যাশন-মনপুরায় ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন সাবেক এমপি নাজিমউদ্দিন আলম। এছাড়া ভোলা সদরে ১৫ রমজানের পর সহায়তা দেব আমরা। তবে অন্য নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-তজুমদ্দিন) নির্বাচনী এলাকায় সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিনের উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও কোনো খবর নেই সাবেক মন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মেজর (অব.) হাফিজের।

তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উনি তো কেবল নির্বাচন করতে এলাকায় আসেন। এছাড়া উনাকে আর কখনও দেখি না আমরা।’

পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘নির্বাচনের সময় এই জেলার ৩টি নির্বাচনী এলাকায় দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিল ১৯ জন নেতা। এদের মধ্যে কেবলমাত্র পিরোজপুর সদর আসনেই মনোনয়ন চাওয়া নেতার সংখ্যা ছিল ১২। কিন্তু চলমান করোনা সংকটে কেবলমাত্র মঠবাড়িয়ার রুহুল আমিন দুলাল ও ভাণ্ডারিয়ায় সুমন মঞ্জুর ছাড়া আর কেউ কোনো সহায়তা বা ত্রাণ দিয়েছে এমনটা আমার জানা নেই।’

বরগুনা জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জানা মতে এই জেলার দুটি নির্বাচনী এলাকায় দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করা সাবেক এমপি মতিউর রহমান তালুকদার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব কোনোরকম ত্রাণ দেননি। স্থানীয়ভাবে দলের কিছু নেতা দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা দিলেও সাবেক এমপি কিংবা দলীয় মনোনয়ন চাওয়া নেতাদের প্রায় কেউই দেননি কোনো সহযোগিতা।’

দলের প্রভাবশালী নেতাদের সহযোগিতা না পাওয়ায় বিএনপির তৃণমূলে বিরাজ করছে ক্ষোভ।

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘মাঠের রাজনীতির খবর না নিয়ে কেন্দ্র যাদেরকে মনোনয়ন দেয় তাদের খবর কেন্দ্রই ভালো বলতে পারবে। আমাদের আলতাফ চৌধুরী তো এখন কেবল ভোটের সময়ই এলাকায় আসেন। পটুয়াখালী-৩ আসনে উড়ে এসে জুড়ে বসা গোলাম মাওলা রনি এখন কোথায়? আমরা যারা এলাকায় থাকি তারা বুঝি তৃণমূলের কর্মীদের ক্ষোভ।’

পুরো বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে যে কারা ত্রাণ দিচ্ছেন আর কারা দিচ্ছেন না। আমরা সেই রিপোর্ট তৈরি করছি। আশা করি খুব শিগগিরই তা কেন্দ্রে জমা দিতে পারব। এরপর বাকি ব্যবস্থা নেবেন দলের নীতি নির্ধারকরা।’

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন