২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

করোনাভাইরাস ও স্বাস্থ্যখাতের করুন চিত্র

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৪৩ অপরাহ্ণ, ০৭ মে ২০২০

এসএম মনিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিবেদক::  পৃথিবীতে মানবসভ্যতার ইতিহাসে মহামারীর প্রাদুর্ভাব এর পূর্বেও দেখা গিয়েছে। কারও কারও মতানুযায়ী প্রতি একশত বছর পর পর মহামারী দেখা দেয়। যাহা ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে। কলেরা, সার্স, মার্স, ইবোলা, প্লেগ এগুলো সবই মহামারী আকারে দেখা দিয়েছিল। আর আজ আমরা বিশ্বব্যাপী যে মহামারী দেখছি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ভাষায় এটার নামকরণ করা হয়েছে করোনা ভাইরাস, আর এর ফলে যে রোগটি দেখা দেয় সেটি হলো COVID-19. পৃথিবীর ইতিহাসে সকল মহামারী এক সময় মানুষের বুদ্ধির কাছে হার মানে। হয়তো ভ্যাকসিন কিংবা ইনজেকশন বা কোন ঔষধের মাধ্যমে মহামারী কে করেছে বশীভূত। ডিসেম্বর-২০১৯ এর শেষ নাগাদ চীনের উহান প্রদেশের একটি পশু পাখির বাজার থেকে প্রথম ভাইরাস টি শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে বিশ্বের প্রায় ২১০ টি রাষ্ট্রে এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে আরও আগে। এটি মূলত প্রচারিত তথ্য এর বাহিরে যে আরও মরেনি তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

সমগ্র বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩৪ লক্ষ। দিনের শেষে সংখ্যাটা পরিবর্তিত হয়ে আরো ন্যূনতম ২০ হাজার যোগ হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। মৃত্যু ১৮০ জনের মতো। এগুলো সরকারি তথ্য থেকে গৃহীত। কিন্তু সঠিক তথ্য বলাটা একটু দুরূহ ব্যাপার। যেহেতু টেস্ট করার সংখ্যা কম আক্রান্তের সংখ্যা ও কম। মহামারী করোনার প্রভাব ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠতেছে। আজ আক্রান্তের সাতান্ন তম দিন। এর মাঝেই জনজীবনে চরম বিষাদের ছাপ স্পষ্টত। আাসলে আমরা যতই গলা চেচিয়ে উন্নয়নের দাবি করছি বাস্তবতা অন্য রকম। করোনায় আক্রান্তের সাথে সাথেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রকৃত চিত্র। এ মূহূর্তে করোনা মোকাবেলায় যারা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছেন তারা হলেন ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, সেনাবাহিনী, সাংবাদিক। তাদেরকে আমরা সম্মুখ যোদ্ধা বলে অভিহিত করছি। কিন্তু তাদেরকে যুদ্ধের রসদ সামগ্রী না দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ছেড়ে দিয়ে আমরা শীতল রুমে বসে জাবর কাটছি। টিভিতে দাঁত কেলিয়ে তাদের মৃত্যু সংবাদ গণনা করছি। এখন পর্যন্ত (১লা মে) ডাক্তার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯২, স্বাস্থ্যকর্মী ২৯৮, পুলিশ ৪০০, সংবাদকর্মীর সংখ্যা ৩৯ জন। আমরা তাদের জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম?

ডাক্তার মঈনউদ্দীন আহমদ এর করুন কান্না আমাদের কানে পৌঁছেনি তাইতো আজ লাশের ওপর দাড়িয়েও অট্টহাসিতে হাসতে কোন কষ্ট হয়না। স্বাস্থ্য খাতের বাস্তব চিত্র এখন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে স্পষ্টত। এ মহামারী প্রাক্কালেও একটা শ্রেণির হীন মানসিকতার পরিচয় স্পষ্টতর। জীবন বাঁচানোর নামে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নকল মাস্ক আর পিপিই নিয়ে যে লেজে গোবরে অবস্থা, এটা কোন রাষ্ট্র যন্ত্রের নিকট থেকে আসা করা যায় না। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বহু বেসরকারি হাসপাতাল এদেশে রয়েছে। সাধারণত দেখা যায় ডাক্তার গণপ্রাইভেট প্রাকটিস করেন সেখানে। যতসামান্য অসুখ বিসুখ নিয়ে রোগী এলেও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হবার পরামর্শ দেন। কিন্তু এ মহামারী লগ্নে কেন তাদেরকে এড়িয়ে চলা হচ্ছে? বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। নামি দামি অনেক হাসপাতাল রয়েছে তারা এ ক্রান্তি লগ্নে অনেক ভূমিকা রাখতে পারতো।

বিশেষায়িত হাসপাতালের সংখ্যা ২৯ টি চিহ্নিত করা হয়েছে, কিন্তু তাদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্নের কোন কমতি নেই। সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় টয়লেটের সামনে রোগী মরে পরে আছে, কখন মরেছে কেউ জানে না। করোনায় আক্রান্ত সন্তান কে কেহ বহন না করায় বাবা নিজেই বহন করে নিয়ে গেছে। রোগীদের সাথে অশালীন আচরণ, রুমের মধ্যে তালা দিয়ে রাখা। নিচতলা থেকে রোগী নিজেই গিয়ে পানি নিয়ে আসা। এগুলোই বলে দেয় আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা।

প্রশ্নটা হলো সরকারি হাসপাতালে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিরা জণগণের টাকায় খেয়ে পরে দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে কি ভূমিকাটা রাখছেন? যদি তারা কোন ভূমিকা না-ই রাখতে পারেন তাহলে সরকার এদের বিদায় করে দিচ্ছেন না কেন? করোনা ভাইরাস এটা একটা বৈশ্বিক বিষয়। আমরা কেহই আশা করিনি এমন পরিস্থিতি হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের ভূমিকা নিয়ে জাতি আজ আশাহত। সমন্বয়হীনতার চিত্র আজ নতুন নয়।
করোনা টেষ্ট কীট নিয়ে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সাথে যে সাংঘর্ষিক অবস্থার অবসান ঘটেছে তাতে জনগণের মাঝে একটু হলেও সান্ত্বনা ফিরে এসেছে।

ই-মেল: s.moniruzzaman99@gmail.com

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন