২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

করোনা ভয়ে অসুস্থ বৃদ্ধকে হাসপাতালে ফেলে পালাল স্বজনরা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৩৪ অপরাহ্ণ, ২৮ মার্চ ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ভয়ে ৭০ বছরের এক মুমূর্ষু বৃদ্ধকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে গেছে স্বজনরা। হাসপাতালে থাকা বৃদ্ধ ব্যক্তি চারদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেজিস্ট্রারে চিকিৎসাধীন এ বৃদ্ধের নাম লেখা হয় প্রদীপ সাহা। বয়স ভুলভাবে দেওয়া হয় ৫৮। পিতার নামের স্থলে লেখা মৃত পরশ চন্দ্র সাহা। রেজিস্ট্রারে তাকে সরারচর পোষ্ট অফিসের অধীনস্থ কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা দেখানো হয়েছে।
শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি থানার পুলিশকে অবহিত করে বৃদ্ধের আত্মীয়দের খুঁজে বের করার তাগিদ দেয়। বাজিতপুর থানার এসআই আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালের রেজিস্ট্রারের ঠিকানামতো থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে পাঠানো হয়েছিল। ঠিকানামতো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর মতে, ভুল ঠিকানা দিয়ে স্বজনরা হয়তো পালিয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি করাতে মাঝবয়েসী এক ব্যক্তি বৃদ্ধের সঙ্গে আসেন। তিনি রেজিস্ট্রার বুকে ইংরেজিতে বিপ্লব সাহা নামে স্বাক্ষরও করেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মুশফিকুর রহমান জানান, মোবাইল নম্বর চাইলে বিপ্লব সাহা দিতে চাননি। ওরা হয়তো ভুল ঠিকানাই দিয়ে গেছে। করোনার ভয়েই পরিবার বৃদ্ধকে ফেলে যেতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

তিনি আরো জানান, সাথে আসা ব্যক্তিটি বৃদ্ধের ছেলে বা ভাই হবেন। বৃদ্ধকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হলে তিনি রাজি না হয়ে রেজিস্ট্রারে অঙ্গীকার করে লিখে গেছেন, রোগী মারা গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।

সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের একটি বেডে বৃদ্ধ কাতরাচ্ছেন। তাঁর পিঠ ও পেছনের দিকে ক্ষত (বেড সোর)। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। নাম বলতে না পারলেও বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে একবার বলছেন, কামালপুর এবং সচারচর বলেন। এদিকে শনিবার বিকালে সরেজমিন কামালপুর ও সরারচরে খোঁজ নিলে প্রদীপ সাহা নামে অসুস্থ কোনো ব্যক্তির হদিস জানাতে পারেনি স্থানীয় কেউ।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, বৃদ্ধ পুরনো স্ট্রোকের রোগী। তাঁর সেপটিক শক থাকায় শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। যে কোনো সময় তিনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁকে ভালো মানের অ্যান্টিবায়োটিক এনে খাওয়ানো দরকার। হাসপাতাল থেকে ওইধরণের ওষুধ সরবরাহ করা হয় না।

আরএমও ডা. মুশফিক জানান, তাঁর নিউমেটিক বেড দরকার। তাঁকে উল্টেপাল্টে দিতে হয়। স্থানীয় কিশোরবয়েসী ছেলেদের ডেকে বৃদ্ধকে গোসল করাতে গিয়ে গাঁটের টাকা খরচ করছেন। এতে বাচ্চাদেরও অসুস্থ হওয়ার আশঙ্ক আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জালাল উদ্দিন আহমেদ জানান, এ বৃদ্ধকে নিয়ে তাঁরা (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) বিপাকে পড়েছেন। এযুগেও এমন অমানবিক মানুষ রয়েছে। মূলত করোনার ভয়ে স্বজনেরা বৃদ্ধকে ফেলে গেছে বলে তিনি জানান।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন