২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

কর্ণফুলীর তীরে কাফকোর প্রতারণা, চট্টগ্রামের সামাজিক খাতের বরাদ্দ অর্থ বরিশালে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:২৪ অপরাহ্ণ, ০৬ আগস্ট ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কম্পানির (কাফকো) পক্ষ থেকে বরিশালের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে গত দুই অর্থবছরে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে প্রায় এক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে আনোয়ারা উপজেলায় কাফকোর অবস্থান হলেও করপোরেট সামাজিক খাত থেকে একটি টাকাও ওই এলাকার মানুষের ভাগ্যে জোটেনি। সকল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। এমনকি ওই খাত থেকে কবরস্থানের উন্নয়ন থেকে শুরু করে উড়োজাহাজে বরিশালে যাওয়া-আসা এবং বরিশালের রেস্তোরাঁয় খাওয়ার বিলও পরিশোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে আনোয়ারা উপজেলায় কাফকোর অবস্থান হলেও কাফকোর সদ্য অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাড়ি বরিশালে হওয়ার সুবাদেই করপোরেট সামাজিক খাত থেকে ওই টাকা বরিশালে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ কাফকোতে সার উৎপাদন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হয়ে থাকে কারখানার আশপাশের মানুষ ও পরিবেশ। এনিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পেশাজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাফকোর সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হালিমের বাড়ি বরিশালে। এই সাবেক শিল্পসচিব গত মে মাসে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী শিল্পসচিব কাফকোর চেয়ারম্যান থাকবেন। কাফকোর চিফ করপোরেট অফিসার (সিসিও) এমডি রবিউল হক চৌধুরীর হাত দিয়েই এই পুরো টাকার বরাদ্দ বরিশালে গেছে। যদিও কাফকোর আইনে ১০০ ইউএস ডলার কিংবা সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রার বেশি অর্থের পণ্য নগদে কেনার সুযোগ নেই। এর বেশি কেনাকাটা করতে হলে তাতে কাফকোর ক্রয় কমিটির অনুমোদন লাগবে কিংবা ওই কমিটিই তা কিনবে। রবিউল হক চৌধুরী এই আইনের ধার ধারেননি। তিনি নিজেই সব কিছু কিনেছেন করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার টাকায়। আর বিলটি ধরিয়ে দিয়েছেন কাফকোকে। করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার এক কোটি টাকার মধ্যে ৮৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬১ টাকা তিনি এভাবেই ব্যয় করেছেন।

এসব ব্যাপারে জানতে চেয়ে রবিউল হক চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বারবার ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে পরিচয় দিয়ে তাঁকে এসএমএস পাঠালেও কোনো জবাব মেলেনি।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরিশালের ফজলুল হক স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে সাড়ে ১২ হাজার, কম্পিউটার ও সায়েন্স ল্যাবের জন্য ১৫ লাখ ৬৮ হাজার, ল্যাপটপ বাবদ তিন লাখ ৯৪ হাজার, আইসিটি ল্যাবের জন্য এক লাখ ১২ হাজার ১৬৬, কম্পিউটার সেটআপের জন্য দুই লাখ ২১ হাজার ৬৮৬ ও সায়েন্স ল্যাবের জন্য দুই লাখ ১৩ হাজার ৬৬০ টাকা; ছারগরিয়া মসজিদে অনুদান হিসেবে দুই লাখ, ঢাকা থেকে বরিশালে যাওয়া-আসার উড়োজাহাজ ভাড়া ৬৮ হাজার ৪০০, বরিশালের আরেকটি স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবের জন্য পাঁচ লাখ, আরেক স্কুলের ল্যাপটপ কিনতে আট লাখ ১৪ হাজার ১১৩, শেরেবাংলা স্মৃতি বৃত্তির জন্য পাঁচ লাখ, হালতা হাজিবাড়ী কবরস্থান উন্নয়নে ৯ লাখ, এ হাশেম বালিকা মাদরাসায় দেড় লাখ, ঢাকার সুরের ধারা স্কুলের জন্য সাত লাখ, হালতা স্কুলের জন্য ডোনেশন পাঁচ লাখ, ওই স্কুলে ল্যাপটপের জন্য সাত লাখ ৬৪ হাজার ৩১০, নামহীন প্রতিষ্ঠানের ল্যাবের যন্ত্রপাতি কিনতে এক লাখ ১২ হাজার ৭৫২, বরিশালে হোটেলে থাকার বিল এক লাখ ৫৮ হাজার ২৫৪, বরিশাল আলতাফ স্কুলে পাঁচ লাখ এবং মুকুল স্মৃতি স্কুলে সাত লাখ টাকা ডোনেশন দেখানো হয়েছে।

টিআইবির সাধারণ পর্ষদ সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, কাফকো প্রতিষ্ঠার পর আশপাশের এলাকায় মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ হয়। ফলে কাফকোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সেখানে আছে। এছাড়া কাফকো এলাকায় অনেক গরিব মানুষের বাস। বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানের সিএসআর খাতের বরাদ্দ অর্থের দাবিদার তারাই। কিন্তু তাদের পাশ কাটিয়ে পুরো টাকা বরিশালে বরাদ্দ দেওয়াটা শুধু অন্যায় নয়, দুর্নীতিও।

উল্লেখ্য, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কাফফোর ৪৯ শতাংশ শেয়ার বাংলাদেশ সরকারের। আর ৫১ শতাংশ শেয়ার বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। গত তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও প্রধান করপোরেট কর্মকর্তা (সিসিও) মিলেই মূলত কাফকোর মূল সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকেন।

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন