২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

কলেজছাত্র তৈরি করলেন উড়জাহাজ! তাও উড়ছে আকাশে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:২৩ অপরাহ্ণ, ০১ জানুয়ারি ২০২৩

কলেজছাত্র তৈরি করলেন উড়জাহাজ! তাও উড়ছে আকাশে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: উভয়ে কলেজ শিক্ষার্থী, বসবাস খুলনা বিভাগের পাশাপাশি দুই জেলায়। সম্প্রতি তাদের ভিন্ন ভিন্ন আবিষ্কার তোলপাড় তুলেছে। যে-সে আবিষ্কার নয়, তাদের তৈরি উড়োজাহাজ রীতিমতো উড়ছে আকাশে। যা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষ। এ দুই তরুণ হলেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের মিন্টু সরদার এবং পার্শ্ববর্তী উপজেলা সাতক্ষীরার তালার আলাদিপুর গ্রামের বোরহান মোড়ল। মিন্টু খুলনার বিএল কলেজে গণিতে অনার্স প্রথমবর্ষের ছাত্র। আর সবেমাত্র স্কুলজীবন শেষ করে কলেজে পা রেখেছেন বোরহান।

ডুমুরিয়ার শোভনা ইউনিয়ন পরিদের চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্য সাংবাদিকদের বলেন, অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী মিন্টু। তার তৈরি উড়োজাহাজ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষ। আরও বড় কিছু করার জন্য তাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি।

মিন্টু সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালে মাটিকাটার গাড়ি ও পরের বছর পানিসেচের পাম্প তৈরি করে উপজেলার বিজ্ঞান মেলায় সাড়া ফেলে ছিলেন বলে জানান বাবা দেবপ্রসাদ মণ্ডল।

কলেজে পড়ার সময় টেলিভিশনে উড়োজাহাজ তৈরির খবর দেখে নিজেই তৈরির ইচ্ছা পোষণ করে মিন্টু। দেবপ্রসাদ বলেন, অভাব-অনটনের সংসারে টাকা জোগাড় করতে পারছিল না মিন্টু। তারপর আমার ও ওর মায়ের দেয়া কিছু টাকা এবং বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধারদেনা করে চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

মিন্টু জানান, নিজে কখনো উড়োজাহাজে চড়তে না পারলেও ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রথমবার ককশিট দিয়ে অবয়ব তৈরি করেন। কিন্তু তিনি তা ওড়াতে পারেননি। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় উড়োজাহাজ আকাশে উড়লেও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে গত ১৫ ডিসেম্বর নিজের তৈরি সফলভাবে বেশ কয়েক মিনিট আকাশে উড়াতে সক্ষম হন।

এ তরুণ বলেন, বাংলাদেশ বিমানের আদলে ককশিটে তৈরি তার আকাশযানটির দৈর্ঘ্য ৬৬ ইঞ্চি। আর দু’পাশের ডানা ৬৫ ইঞ্চি লম্বা। ওজন দেড় কেজি। এতে ৯৪০ গ্রাম ওজনের দুটি ড্রোন ও মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। এটি তিন কেজি ওজন বহন করে আকাশে টানা সাত মিনিট এবং দেড় কিলোমিটার উড়তে পারে। গতি আরো বাড়ানো সম্ভব।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চীন ও আমেরিকার মতো উন্নত প্রযুক্তির মানুষবিহীন উড়ন্ত যান বানাতে চান তিনি।

মিন্টু আরো বলেন, সামনে উড়োজাহাজের বডি তৈরিতে ককশিটের পরিবর্তে ডেফরন বোর্ড ব্যবহার করবেন। দু-তিনজন মানুষ নিয়ে চলাচলের উপযোগী করেও তৈরি করবেন তিনি।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান বলেন, উড়োজাহাজ তৈরি কোনো সহজ বিষয় নয়। ছেলেটি অসাধারণ কাজ করেছে। তাকে সবরকম সহায়তা করা হবে।

অন্যদিকে ইউটিউবে ভিডিও দেখে ঘরে বসেই বিমান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ডুমুরিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা তালার কলেজছাত্র বোরহান মোড়ল।

করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতে অলস সময় কাটছিল বোরহানের। এ সময় ইউটিউবে উড়োজাহাজ তৈরির ভিডিও দেখতেন। এসব দেখে ককশিট, মোটর, ব্যাটারি ও বিভিন্ন ডিভাইস দিয়ে তৈরি করেন উড়োজাহাজ। কিন্তু ৩০-৩৫ বার ওড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আট মাসের প্রচেষ্টা অবশেষে বাস্তবে রূপ নেয় গত ১০ অক্টোবর। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত আকাশযানটি আকাশে উড্ডয়ন করে।

বোরহানের আবিষ্কার মিন্টুর চেয়ে খানিকটা ভিন্ন। তার তৈরি উড়োজাহাজ শত্রুপক্ষের নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসতে সক্ষম। দ্রুতগামী যুদ্ধবিমানের আদলে তৈরি বাহনটির ওজন মাত্র ১ কেজি। এখন ১২ কেজি ওজনের বোমারু তৈরির কাজ করছেন তিনি। এরপর বড় আকারের যুদ্ধবিমান তৈরি করতে চান। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা চান বোরহান।

সহায়তার চেষ্টা করবেন জানিয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বোরহান তার উড়োজাহাজটি উড়িয়ে দেখিয়েছেন। এর আগেও উপজেলা বিজ্ঞান মেলাতে তিনি ভিন্ন ধরনের একটি প্রদর্শনী করেছিলেন।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকেই এ ধরনের কাজ করছে। কিন্তু দেখা যায়, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তারা আর সামনে অগ্রসর হতে পারে না। ওই দুইছাত্র যদি আরও ভালো কিছু করতে চাইলে আমাদের ল্যাব সহযোগিতাসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন