২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

কাউন্সিল ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে কোন্দল প্রকাশ্যে!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:০৫ অপরাহ্ণ, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। কাউন্সিলকে সামনে রেখে সারাদেশে আওয়ামী লীগের জেলা- উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এই সম্মেলনগুলোকে ঘিরে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্য কোন্দলে জড়িয়েছে।

খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালির কাউন্সিলের পর সেখানে গোলযোগের খবর পাওয়া গেছে। কমিটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগের একাংশ। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানেও আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের প্রকাশ্য কোন্দলের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগরীর উত্তর দক্ষিণের সম্মেলন ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ২৯ নভেম্বর। এই সম্মেলনটি ঘিরেও অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের পাহাড় জমেছে। বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার কাজে ব্যস্ত। এরকম চিত্র সারাদেশে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা , বরিশাল, খুলনাসহ দেশের সব জেলাতেই কাউন্সিলকে ঘিরে দলীয় কোন্দলের খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। দলের মধ্যে নানা পদে নানা মত থাকবেই। কাউন্সিলকে ঘিরে নানা রকম প্রতিযোগিতা হতেই পারে। এই সমস্ত প্রতিযোগিতাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। এটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য দরকার। তিনি মনে করেন যে, দলের মধ্যে কোন আত্মঘাতি কোন্দল নেই। যে কোন্দল দলকে বিনষ্ট করতে পারে।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন যে, আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। যে সংগঠনে সকলেই তাদের অবদানের স্বীকৃতি চান। কাজ করতে চান। কাজেই এ ধরনের প্রতিযোগিতা অযৌক্তিক নয়। তিনি মনে করেন, সম্মেলন হয়ে গেলে কাউন্সিলের পরেই সকলে এক হয়ে যাবে এবং মিলেমিশে কাজ করবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক যেটাই বলুক না কেন, নানা কারণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল এখন প্রকাশ্য কোন্দল। এর মধ্যে নানা কারণও রয়েছে;

শুদ্ধি অভিযান:

শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ স্পষ্টতই বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের এক পক্ষ যারা মনে করছে যে, আওয়ামী লীগের কিছু লোক যারা গত দশ এগারো বছরে ফুলে ফেপে উঠেছে এবং তারা দলকে ব্যবহার করে নানা রকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের জড়িয়েছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। কাজেই যখনই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তখনই আওয়ামী লীগে যারা না পাওয়াদের দলে, তারা প্রকাশ্য হয়েছে। প্রকাশ্যেই গত ১০ বছরে যারা বিভিন্ন পদ-পদবীতে ছিলেন, তারা সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। তারা কি কি অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছেন, তার ফিরিস্তি দিচ্ছেন।

অনুপ্রবেশকারী:

আওয়ামী লীগে গত ১০ বছরে প্রায় দেড় হাজারের মতো বহিরাগত ঢুকেছে, যারা মূলত বিএনপি জামাত থেকে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারীরা দলে ঢুকে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তারা পরিকল্পিতভাবে তারা এমন কিছু কর্মকাণ্ড করছে যাতে দলের বদনাম হচ্ছে। যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে দলের এসব অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে হবে এবং তিনি যখন তাদেরকে চিহ্নিত করেছেন তখন দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী, পরীক্ষিতরা কোণঠাসা অবস্থা থেকে প্রকাশ্য হয়েছে। কিন্তু সুবিধাবাদী বা অনুপ্রবেশকারীরা দলের মধ্যে এমনভাবে ঘাটি গেড়ে বসেছে যে তাদেরকে হুটহাট করে সরিয়ে দেওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী এবং হাইব্রিডদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য আকার ধারণ করেছে।

তরুণ-প্রবীণদের দ্বন্দ্ব:

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থানে প্রবীণদের সঙ্গে তরুণদের দ্বন্দ্বের খবর পাওয়া গেছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে, ৮, ১০ বা ১২ বছর ধরে স্থানীয় পর্যায়ের পদ দখল করে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখন প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করছেন নবীনরা। বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে যারা এখন আওয়ামী লীগ করতে প্রত্যাশী, তারা মনে করছে যে প্রবীণদের জন্য তারা দলে কোনো জায়গা পাচ্ছে না, কাজও করতে পারছে না। এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগে প্রবীণ-নবীনদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব:

আওয়ামী লীগে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা বা এমপি হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা স্থানীয় পর্যায়ে একটি আলাদা প্রভাব বলয় তৈরি করেছেন। তাদের একটি নিজস্ব কর্মী এবং অনুগত বাহিনী তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে দলে যারা ত্যাগী ও পরীক্ষিত তাদের পাশ কাটিয়ে তারা পৃথক একটি আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করে। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগে যখন কাউন্সিল হচ্ছে তখন দলে যারা কোনো পদ পদবি পাননি তারা মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে একটা শো ডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, এর মূল কারণ হচ্ছে ভবিষতে তারা যেন মন্ত্রী-এমপিদের জায়গাটা দখল করতে পারে।

তবে আওয়ামী লীগ বলছে এই সমস্ত বিভক্তি বিভাজন আওয়ামী লীগের চিরন্তন সৌন্দর্য। সব সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে এ রকম অভ্যন্তরীণ মত বিরোধ থাকে। কিন্তু চূড়ান্ত ভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেই সিদ্ধান্তেই অটল থাকে দলের আবহমান নেতা-কর্মীরা।

আওয়ামী লীগের অন্য একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের কোন্দল হতে পারে কিন্তু তৃণমূল শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের জন্য একাট্ট। তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কাজেই কাউন্সিল ঘিরে এই বিরোধগুলো শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন