নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: দলের দুঃসময়ের প্রকৃত ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে চিহ্নিত ও তালিকাভূক্ত রাজাকার পুত্র এবং বিএনপি থেকে সদ্য আ’লীগে যোগদানকারী এক নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ লুফে নেয়ায় স্থানীয় আ’লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অতিসম্প্রতি বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে হাবিবুর রহমান উজির সিকদারকে সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ এমাদুল হক মনিরকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়। দীর্ঘ ১০ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তোড়জোর শুরু হলে গোটা উপজেলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে।

অতিসম্প্রতি কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে চিহ্নিত ও তালিকাভূক্ত এক রাজাকার পুত্র এবং বিএনপি থেকে সদ্য আ’লীগে যোগদানকারী আরেক নেতাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা আ’লীগের গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদে দলের নিবেদিতদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নেতা-কর্মীরা। এনিয়ে রাজনীতির বাহিরেও সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজাকার পুত্র এবং বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করা এক বির্তকিত নেতাকে কাঠালিয়া উপজেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে। ফলে কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন দলের ত্যাগী নেতারা। নবগঠিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে উপজেলার চিহ্নিত ও তালিকাভূক্ত রাজাকার শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পিচ কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদের পুত্র তরিকুল ইসলাম বুলবুলকে। তার বাবাকে এলাকাবাসী রশিদ রাজাকার নামেই চেনেন। অপরদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আলাউদ্দিন আল আজাদ বাদল একসময়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সম্প্রতি কৌশলে পাল্টি দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগে যোগদান করে তিনি পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ নেতা জানিয়েছেন, সদ্য ঘোষিত উপজেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যে আলাউদ্দিন আজাদ স্থান পেয়েছে সে পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির একজন সক্রিয় নেতা এবং রাজাকার পুত্র তরিকুল ইসলাম বুলবুলকে দলের দুঃসময়ে কখনও আন্দোলন-সংগ্রামে পাওয়া যায়নি। আগামীতেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে নয়, বরং তারা নিজেদের অতীত কর্মকান্ডকে লুকিয়ে কৌশলে আ’লীগে বিরোধ সৃষ্টি করছে। এদের বিরুদ্ধে দলের হাইকমান্ড থেকে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এদের জন্য ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে চরম খেসারত দিতে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান উজির সিকদার বরিশালটাইমসকে জানিয়েছেন, বুলবুল রাজাকারের পুত্র কিনা আমি জানিনা। যদি রাজাকারের পুত্র হয় তাহলে অবশ্যই আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বাদ পড়বে। এছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মোঃ শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বরিশালটাইমসকে জানান, বাবা রাজাকার হলে ছেলেও কি রাজাকার? কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগকে বির্তকিত করতে কিছু নেতা-কর্মী মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন জেলার শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা।