১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

কিশোরগঞ্জের হাওরের বুক চিড়ে চলল গাড়ির বহর

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩০ অপরাহ্ণ, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: বৈঠা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাই ছিল হাওরাঞ্চলের লোকজনের একমাত্র ভরসা। যোগাযোগ ও পরিবহন কাজে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনের চিন্তাও করা যেত না।

বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস নৌকাযোগে কোনরকমে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা চললেও শুকনো মৌসুমের ছয় মাস যোগাযোগ ও পরিবহন ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার হতে হতো এ হাওরবাসীকে।

অবস্থা এতটাই দুর্গম ছিল যে, সেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি করতে অনীহা প্রকাশ করতো। তাদেরকে প্রণোদনা দিতে সরকার তাদের জন্য ‘হাওর এ্যালাউন্স’ প্রবর্তন করতে বাধ্য হয়।

ভৌগোলিক কারণে এ অবস্থার পরিবর্তনের চিন্তাও করতো না হাওরবাসী। কিন্তু সেই দুঃস্বপ্নই অবশেষে বাস্তব হয়ে ধরা দিলো কিশোরগঞ্জের হাওরবাসীর কাছে।

রোববার দুপুর থেকে হাওরের সড়কপথে হুঁইসেল বাজিয়ে চলাচল শুরু করেছে চার চাকার যানবাহন।

রোববার দুপুরে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের চামড়ার নৌ-বন্দর, বালিখলা ঘাট, বলদা ঘাট,শান্তিপুর ও বড়িবাড়ি ঘাটসহ পাঁচটি ঘাটের ধনু এবং বাউলাই নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু হয়।

ওইদিন দুপুরে সড়ক জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে এ সার্ভিসের উদ্বোধন করেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, কিশোরগঞ্জ- ৪ (ইটনা -মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাংসদ রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম সোপান, মিঠামইন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাষ্ট্রপতির বোন আছিয়া আলম, করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা প্রমূখ।

জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গণ্যমান্য লোকজনসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নেয়।

এ পাঁচটি ফেরিসার্ভিস চালুর পরপরই কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী সরাসরি সড়কপথে যানবাহনে যোগাযোগ ও পরিবহন সুবিধার আওতায় আসে। শুরু হয় চার চাকার মোটরযান চলাচল। অবশ্য এর আগে হাওরের বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণের পাশাপাশি ‘অলওয়েদার’ আবুরা সড়ক ও ‘ডুবো সড়কপথ’ নির্মাণ করা হয়।

সর্বশেষ এ পাঁচটি নদী ঘাটে উন্নতমানের ফেরি সার্ভিস চালু হাওর জনপদের বিপুল জনগোষ্ঠীর সামনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। এখন থেকে বর্ষা ও শুকনো দুই মৌসুমেই এ হাওর জনপাদের অধিকাংশ মানুষ এ সুবিধাভোগ করতে পারবে।

এ ব্যাপারে কথা হলে জেলার হাওর উপজেলা ইটনার ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল যুগান্তরকে বলেন, হাওরে এমন সড়কপথ হবে এবং এসব সড়কপথে একদিন চার চাকার মোটরযান চলবে তা কোনোদিন আমরা কল্পনা করার সুযোগ পাইনি। এখন থেকে আমরা শুকনো ও বর্ষা দুই মৌসুমেই যাতায়াত ও পরিবহন ক্ষেত্রে সড়কপথে মোটরযান সুবিধা পাবো।

তিনটি হাওর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ- ৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাংসদ রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক বলেন, ‘আমার বাবা (রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ) দুর্গম হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত এ আসনের মিঠামইন উপজেলার কামালপুরের সন্তান। তিনি এ অঞ্চলের কাদামাটি জলে বড় হয়েছেন। তিনি এ আসন থেকে সাত সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

‘জীবনের দীর্ঘ সময় এ দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন। তাই আমার বাবা সব সময় এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের এবং সুন্দর ও বসবাসযোগ্য হাওরাঞ্চলের স্বপ্ন দেখতেন। তিনিই হাওরবাসীর শত বছরের স্বপ্নপূরণের কাজ শুরু করেছেন। আমাকেও এ অঞ্চলের মানুষ তিন তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন।’

‘বাবা রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বপালন করার পর থেকে এ দায়িত্ব আমার ওপর বর্তায়। আজকে হাওরবাসীর স্বপ্ন পূরণের বড় কাজটি সম্পন্ন হওয়ায় আমরা যারপরনাই আনন্দিত।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন