২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রীর খুশির জন্য ‘চেহারা বদল’ করলেন স্বামী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৭ অপরাহ্ণ, ১১ নভেম্বর ২০১৮

স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, স্টেজ ফোর-এ পৌঁছে গেছে এই মারণ ব্যাধি। চিকিৎসকদের কাছ থেকে খবরটা জেনে মুষড়ে পড়েছিলেন শান।

কিন্তু সেই আঁচ লাগতে দেননি স্ত্রী শ্রুতির মনে। অভয় দিয়ে গেছেন প্রতি মুহূর্তে। প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করেছেন স্ত্রীকে আরো বেশি খুশি রাখতে।

শ্রুতি নিজেও জানেন, মৃত্যু তার শিয়রে হাজির। কিন্তু তাতে তার পরোয়া নেই। শানের ভালোবাসার বন্ধন যেভাবে আগলে রেখেছে, এর থেকে বড় পাওনা তার জীবনে আর কী-ইবা হতে পারে!

চিকিৎসার কারণে শ্রুতির চুল প্রায় উঠে গেছে। মাথা ন্যাড়া। এক সময় চুলে ফুল লাগিয়ে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো সেই শ্রুতির আজ এই রূপ দেখে মন ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠেছিল শানের।

সে কারণে স্ত্রীকে খুশি করতে নিজেই ন্যাড়া হয়ে যান তিনি। শ্রুতিকে সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলে সেই ছবি শেয়ারও করেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

ভারতের কেরালার বাসিন্দা শান ইব্রাহিম বাদশাহ ও শ্রুতি। কলেজে পড়ার সময় তাদের দু’জনের আলাপ হয়েছিল। কিন্তু সেই আলাপটাও ছিল অদ্ভুত। একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

২০১৪ সালের ঘটনা। ওনাম উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল কলেজে। শান-শ্রুতির আলাপের সূত্রপাত এখান থেকেই। দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ান-কে শান সাক্ষাৎকারে জানান, এক তরুণী কলেজের বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে তাকে দেখিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছোড়েন।

বলেছিলেন, কানে জবা ফুল গুঁজে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। চ্যালেঞ্জটা লুফে নিয়েছিলেন শান, কিন্তু পাল্টা একটা চ্যালেঞ্জও তিনি ছুড়েছিলেন।

শান বলেন, আমি এটা করতে পারি একটা শর্তেই, যদি কলেজেরই কোনো মেয়ে আমার হাত ধরে হাঁটে! এ ভাবেই আলাপের সূত্রপাত শ্রুতি-শানের। তার পর ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দু’জনের।

কিন্তু এ পর্যন্তই ‘হ্যাপি জার্নি’ ছিল তাদের জীবনে। এর পর শুরু হয় সংঘাতের পর্ব। দু’জনে ভিন্ন ধর্মের। শানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টা শ্রুতির বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। ভিন্ন ধর্মের ছেলের সঙ্গে সম্পর্কটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না শ্রুতির পরিবার। হুমকি দিয়েছিলেন, মেলামেশা করলে পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হবে। অশান্তির খবর শান আগেই পেয়েছিলেন।

কিন্তু শ্রুতির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, এটা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না। শ্রুতির বাড়িতে গিয়ে কথাও বলেন শান। কিন্তু তারা নাছোড় ছিলেন। সমস্যা শুরু হয় শানের বাড়িতেও। ভিন্নধর্মী হওয়ায় শ্রুতিকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তারা।

তাদের সম্পর্কে দুই পরিবারের অমত। কলেজের পাট চুকিয়ে শ্রুতির বাড়ি থেকে পাত্র খোঁজা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু শ্রুতি বেঁকে বসেন। সাফ জানিয়ে দেন, বিয়ে করলে শানকেই করবেন। ওদিকে, শানের পরিবার তাকে জানিয়ে দেয়, শ্রুতিকে যদি বিয়ে করতেই হয়, তাহলে তাকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু পরিবারের এই প্রস্তাবে রাজি হননি শান। অবশেষে ২০১৭ সালে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী দু’জনে বিয়ে করেন।

পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছিলেন দু’জনেই। কিন্তু আরো বড় সংঘাত যে তাদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে সেটা ঘুর্ণাক্ষরেও টের পাননি শ্রুতি-শান। কাজ পেয়ে শ্রুতিকে নিয়ে হায়দরাবাদে চলে আসেন শান। সেখানেই সংসার পাতেন। হঠাৎ এক দিন শ্রুতি লক্ষ্য করেন তার ঘাড়ের এক দিকটা ফুলে উঠেছে। প্রথমে খুব একটা আমলে নেননি।

কিন্তু কিছু দিন যেতেই ঘাড়ের অন্য পাশটাও ফুলে উঠতে শুরু করে। চিকিৎসকরা জানান, শ্রুতির যক্ষ্মা হয়েছে। চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। ব্যথায় ক্রমশ কুঁকড়ে যেতে থাকলেন শ্রুতি। চলতি বছরের জুনে কোচিতে চিকিৎসার জন্য শ্রুতিকে নিয়ে যান শান।

তাদের জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিল ভয়ানক এক খবর। পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানিয়ে দিলেন শ্রুতি লিম্ফোমায় আক্রান্ত। স্টেজ ফোর।

খবরটা শুনেই মাথায় বজ্রাঘাত হয় শানের। সমাজ, পরিবারের সঙ্গে লড়াই করেছেন শ্রুতির জন্য। কিন্তু এ তো জীবনের সঙ্গে লড়াই! এই যুদ্ধ জয় করাই শানের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কলেজ জীবনে এই শ্রুতিই তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন।

চার বছর পেরিয়ে আবারও শ্রুতি তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। সেদিন গর্বের সঙ্গে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছিলেন শান। চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি মন জিতে নিয়েছিলেন শ্রুতির। কিন্তু এবার কী করবেন?

যেটুকু সময় পাচ্ছেন, শ্রুতিকে আগলে রাখছেন। শ্রুতির ভালোলাগাটাকে নিজের ভালোলাগায় পরিণত করেছেন। চিকিৎসার কারণে শ্রুতিকে চুল হারাতে হয়েছে। শানও নিজের মাথা মুড়িয়ে দিয়েছেন।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন