১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ক্রিকেটে হারলেও আইনি লড়াইয়ে বরিশালে ফরচুন’র আপতত জয়

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:১৩ অপরাহ্ণ, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শাকিব বিপ্লব, বরিশাল:: ক্ষমতাসীন দলের প্রতিহিংসায় জন্ম নেওয়া একটি অপহরণ মামলায় ফরচুন ফুটওয়্যার কম্পানির পরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে আদালত স্থায়ী জামিন দিলেন। একই মামলার আসামী তার দুই সহোদরের বিষয়ে বরিশালের আদালত একই আদেশ দেন। আজ রোববার ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বরিশাল জেলা চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে এক জনাকীর্ণ পরিবেশে বিচারক মাসুম বিল্লাহ জামিন শুনানির ধার্য্য দিবসে এই আদেশ দেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। এই আদেশ নিয়ে গত দুদিন ধরে বরিশালের ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশ ও আইনজীবীসহ বিসিকের ব্যবসায়ী মহলে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনায় বিষয়টি প্রাধান্য পায়। মামলার বাদী ক্ষমতাসীন দলের একজন শ্রমিকলীগ নেতা। কিন্তু তার দায়েরকৃত ঘটনাবহুল এই মামলাটি নিয়ে সেই সময়কালে বরিশাল টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছিলো।

গত ২০ জানুয়ারি রাতে কাউনিয়া থানায় একটি নাটকীয় পরিবেশ এবং উত্তেজনার অবসান পরবর্তী ‘মিরাকলের’ ন্যায় এই অপহরণ মামলাটি দায়ের হয়। এর কিছুক্ষণ আগে মামলার বাদী সোহাগ ওরফে মাছ সোহাগ থানা থেকে পুলিশী হেফাজত থেকে মুক্তি পান। তাকে মুক্ত করতে ক্ষমতাসীন দলীয় মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার ডাকে ব্যাপক লোকসমাগম সৃষ্টি করে থানা ঘেরাও করে। সেই সাথে নগরীর দোকান-পাট ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় বরিশাল অচল হয়ে পড়েছিলো। এধরনের একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে থানা ঘেরাও করে চাপ সৃষ্টির ঘটনা বরিশালের ইতিহাসে এই প্রথম বলে অভিমত পাওয়া যায়।

ফরচুন ফুটওয়্যার সু কম্পানির অভিযোগ ছিলো বিপুল অঙ্কের অর্থায়নে বিসিকের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে স্থানীয় মহানগর আ’লীগের শীর্ষ এক নেতার সাথে ব্যবসায়িক নেতা মিজানুর রহমান মিজানের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে যা এখনও চলমান রয়েছে। একসময় ফরচুনের শ্রমিক সোহাগ পক্ষ বদল করে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে এই বিরোধের সাথে যুক্ত হয়ে নানান অঘটনার জন্ম দিয়ে আসছিলেন। গত ২০ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে সোহাগ বিসিকে প্রবেশ করে এবং ফরচুনের দুই নারী শ্রমিককে উত্যক্ত করে। বিক্ষুব্ধ অপরাপর শ্রমিকরা তাকে আটক করে বিসিকে দায়িত্বরত পুলিশের মধ্যস্থতায় কাউনিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দুই নারী শ্রমিক ইভটিজিংয়ের অভিযোগ দিয়ে মামলার আবেদন করেন। এরপরই ঘটনার নাটকীয়তা সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়িয়ে পরিবেশ পাল্টে গেলে পুলিশ উল্টো মিজানুর রহমানসহ তার অপর দুই ভাই রবিউল রহমান ও শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে সোহাগকে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা গ্রহণ করে। সেই সাথে উত্যক্তের শিকার নারী শ্রমিকদ্বয়ের অভিযোগ চাপা পড়ে যায়।

জানা যায়, ঘটনার পরদিনই মিজানুর রহমান স্থানীয় পুলিশের অসহযোগিতার কারণ মূল্যায়ন করে ঢাকায় চলে যান এবং পুলিশের হেডকোয়ার্টারকে গোটা বিষয়টি অবহিত করেন। অন্যদিকে আইনগত সহায়তা নিতে উচ্চআদালতে স্মরণাপন্ন হন। আদালত তাকে অন্তবর্তীকালীন জামিন অর্থাৎ পুলিশী হয়রানি থেকে মুক্ত থেকে নি¤œ আদালতে আত্মসমর্পণে একমাসের সময় দেন। সেই অনুযায়ী আজ রবিবার মিজানুর রহমান ও মামলার অপর দুই আসামী বরিশাল জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আগে থেকেই জানাজানি হয়ে যায় সময়ের আলোচিত শিল্প উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান বরিশালের নিম্ন আদালতে যাচ্ছেন।

ফরচুনের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য, অন্তত মিজানুর রহমানের জামিন বাতিলের জন্য মহানগর আ’লীগের একটি প্রভাবশালী অংশ বেশ তৎপর ছিলেন। এমনকি শীর্ষ এক নেতা সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের ওপর প্রভাব সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশে শনিবার গভীর রাতে আদলতের সি.এম.এমের বাসার দরজায় কড়া নাড়েন। কিন্তু এই কর্মকর্তা প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের গভীর রাতের আগমন ভালো চোখে না নেওয়ায় তাকে বাসায় প্রবেশে কৌশলে বিরত রাখেন। অবশ্য এ তথ্যের সত্যতা কতখানি, তা ‘বরিশালটাইমসে’র পক্ষ থেকে চেষ্টা করেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আজ সকালে মিজানুর রহমান ও তার দুই ভাই একটি কালো পাজেরো জিপে তার কোম্পানির শ্রমিকদের নিরাপত্তা সহায়তা নিয়ে আত্মসমর্পণের লক্ষে আদালত আঙিনায় আসেন । এর আগে তিনি সোজা চলে যান তার আইনি সহায়তাকারী অ্যাডভোকেট ও সাবেক সাংসদ টিপু সুলতানের চেম্বারে। দুপুর ১২টার পর তিনিসহ তার দুইভাই চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের কাঠগোড়ায় দাড়ালে বাদীর পক্ষে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকনসহ আ’লীগ সমর্থিত প্রভাবশালী আইনজীবীরা জোটগতভাবে অবস্থান নেন এবং জামিন শুনানীর যুক্তিতর্কে ঘোর বিরোধিতা করেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি জাহাঙ্গীর হোসেনও ছিলেন। তিনি আইনপেশার পাশাপাশি নগর আ’লীগের সভাপতি।

অন্যদিকে মিজানের পক্ষে অ্যাড. টিপু সুলতান, মোহনসহ অপর একজন আইনজীবী মোট তিনজন লড়াই করে বিচারককে মামলার সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে জামিনপ্রাপ্তির আবেদন রাখেন।

ফরচুন চেয়ারম্যানের ভাষ্য, এত বিপুলসংখ্যক আইনজীবীর বিরোধিতাই প্রমাণ করে তাকে আইনীভাবে দমনে এবং কারাগারে পাঠাতে প্রতিপক্ষদের প্রস্তুতি ছিলো পরিকল্পিত। প্রায় ২০ মিনিট দীর্ঘ জামিন নিয়ে যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক মামলার তিন আসামীকে স্থায়ী জামিনের আদেশ দেন। এসময় আদালত আঙিনায় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় মিজানুর রহমানের আইনি লড়াইয়ের ভাগ্য দেখার অতি উৎসাহিতায়। তবে আদালত আঙিনায় একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছিলো মিজানুর রহমানের পক্ষে আসা সমর্থিতদের মধ্যে। কারও কারও ভাষ্য সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় ক্রিকেটে বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার লীগ বিপিএলে ফরচুন অংশ নিয়ে মিজানুর রহমান দেশব্যাপী পরিচিতি পান এবং তার দল মোটামুটি ভালো অবস্থানও সৃষ্টি করেছিলো। কিন্তু সেমি ফাইনালের আগেই বিদায় নেয়। অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আইনী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দুইধাপ পার করলেন সফলতার সাথে। সঙ্গত কারণে মিজানের আদালতে উপস্থিতি ও জামিন প্রাপ্তির বিষয়টি সারাদিন নগরজুড়ে আলোচনায় ছিলো।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন