২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

গৃহবধূর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে খুনের হুমকি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১১ অপরাহ্ণ, ১৭ জুলাই ২০১৯

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা জল্লা ইউনিয়নের বিভিন্ন জনপদে অবৈধ অস্ত্রধারীদের অপতৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা আবারও নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি ‘সর্বহারা’ আতংকে রয়েছে।

সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের বিল গাববাড়ি গ্রামের খ্রিস্টান ধর্মালম্বী সংখ্যালঘু রিতা জয়ধর (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। রিতা জয়ধর ওই এলাকার রমনী জয়ধরের স্ত্রী।

হুমকির ঘটনায় গৃহবধূ রিতা নিজের ও তার পরিবারের নিরাপত্তার চেয়ে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের সহায়তা না পেয়ে গত ২ জুলাই বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে ৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাসহ মোট ১০ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা চাইলেও দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ তোলা হয়।

অভিযোগ ও ভূক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কাঠালবাড়ি এলাকার সাবেক সর্বহারা নেতা বাদল ডাক্তারের ছেলে পঙ্কজের সাথে সম্পত্তি নিয়ে গৃহবধূ রিতা ও তার পরিবারের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিলো।

এনিয়ে তাদের মধ্যে আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। এই বিরোধের ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষ পঙ্কজ ষড়যন্ত্র করে গৃহবধূ রিতার স্বামী রমনী জয়ধরকে গত কয়েকমাস পূর্বে আলোচিত জল্লা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু হত্যা মামলার এজাহারে ১৪ নং আসামী অন্তভর্‚ক্ত করায়। সেই সাথে পঙ্কজ নিজেই নান্টু হত্যা মামলার দ্বিতীয় স্বাক্ষী হয়।

বর্তমানে নান্টু হত্যা মামলায় গৃহবধূ রিতার স্বামী জামিনে মুক্ত থাকলেও অস্ত্রধারী পঙ্কজ ও তার সহযোগীদের ভয়ে এলাকায় যেতে পাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৯ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে গৃহবধূ রিতার স্বামীকে খুঁজতে দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে একদল সন্ত্রাসীরা অবস্থান নেয়।

বিষয়টি টের পেয়ে গৃহবধূ রিতা বাড়ির সামনে বের হলেই অস্ত্রধারী পঙ্কজ, তার সহযোগী একই এলাকার অশোক বিশ্বাস, লবাই বাড়ৈ, শচীন বিশ্বাস ও রিপন বাড়ৈসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার থেকে পাঁচ জন তাকে ঘেরাও করে।

এ সময় পঙ্কজের প্রধান সহযোগী অশোক বিশ্বাস গৃহবধূ রিতার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয় এবং তার স্বামীকেও খোঁজাখুজি করেছে বলে জানায়।

পরবর্তীতে বিষয়টি উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের ওসি শিশির কুমার পালের কাছে জানিয়ে আইনি সহায়তা চাইলে ভূক্তভোগী গৃহবধূ রিতাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই ভূক্তভোগী রিতা জয়ধর উল্লেখিত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এবং সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভূক্তভোগী রিতা জয়ধর জানান, ‘বর্তমানে তিনি ও তার পরিবার অস্ত্রধারী ওই সকল সন্ত্রাসীদের আতংকে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। তাই সে ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম বিপিএম জানিয়েছেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ দেওয়া হলে অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে এ ঘটনার পর ওই এলাকায় খোঁজ নিলে স্থানীয়রা জানান, হিন্দু অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের এক সময়ের দাপুটে সর্বহারা নেতা বাদল জয়ধর ওরফে বাদল ডাক্তারের ছেলে প্রধান অভিযুক্ত পঙ্কজ। সম্প্রতি সে (পঙ্কজ) দলনেতার ভ‚মিকা নিয়ে তার বাবার মজুদকৃত অস্ত্র-সস্ত্র নিয়েই নয়া রুপে পুন:রায় এলাকায় সর্বহারা গোষ্ঠীকে সু-সংগঠিত করছে।

স্থানীয় বিল গাববাড়ি এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আশির দশকে দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই প্রভাব বিস্তারকারী এই নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে তৎকালীন সময়ে এক রাতে বেশ কিছু লোক গুম হয়েছিলো।

তাদের মধ্যে ছিলেন- উপজেলার বারপাইকার চুন্নু শাহ, ইন্দুরকানির সুশান্ত বাড়ৈ, পাশ্ববর্তী উপজেলার মোল্লাপাড়ার আজিজ। আজও তাদের কোনো খোঁজ না মেলেনি। ওই সকল নিখোঁজদের পরিবার ও এলাকাবাসী ধারণা করেছেন সর্বহারা দলের সদস্যরা তৎকালীন সময়ে তাদেরকে হত্যার পর লাশ গুম করেছে। আর এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন জল্লা এলাকার কাঠালবাড়ি গ্রামের সর্বহারা নেতা বাদল জয়ধর। যিনি দক্ষিনাঞ্চলের তৎকালীন সর্বহারা কামরুল গ্রুপের জল্লা এলাকার নেতৃত্ব দিতেন।

পরবর্তীতে জল্লা এলাকার ইন্দুরকানিতে কামরুল গ্রুপের প্রধান কামরুলকে হত্যা করে স্থানীয় আরেকদল সন্ত্রাসীরা। এরপরই ওই এলাকা ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে আত্মগোপনে যায় সর্বহারা নেতা বাদল ডাক্তার। সেই থেকে আর সর্বহারা বাদলের কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাঠালবাড়ি এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, সাবেক সর্বহারা নেতার পুত্র পঙ্কজ জল্লায় পুন:রায় চরমপন্থি সর্বহারা গ্রুপ সৃষ্টির অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

তারা আরও জানা, পঙ্কজ তার বাবার মজুদকৃত অবৈধ অস্ত্র নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছেন। এমনকি সে (পঙ্কজ) স্থানীয় কিছু যুবকদের নিয়ে অতি-সম্প্রতি একটি গ্রুপের উত্থানও ঘটিয়েছে। তাই এ সকল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন