২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

গোপন তথ্য ফাঁসে জন-বিচ্ছিন্ন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইকবাল

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৫০ পূর্বাহ্ণ, ১৬ মার্চ ২০১৯

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আলোচিত জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু হত্যা মামলার গোপন তথ্য ফাঁসে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা।

হত্যাকান্ডের প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর জানা গেছে নিহত চেয়ারম্যান নান্টুর সাথে ওই আওয়ামী লীগ নেতার সাথে অন্তকোন্দল ছিলো। তাদের মধ্যে কোটি টাকা মূল্যের দুটি কষ্টি পাথরের মূর্তি নিয়ে গোপন বিরোধ চলে আসছিলো।

সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান নান্টুকে খুন করা হতে পারে এমন জবানবন্দি দিয়েছেন হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত জেল হাজতে থাকা আসামী জল্লা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন শাহ ও ছাত্রলীগ নেতা কাওসার সেরনিয়াবাত।

এই দুই আসামী গ্রেপ্তার হওয়ার পরে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলো তা প্রত্যাহার চেয়ে নতুন করে জবানবন্দি দিয়েছে। আর সেই জবানবন্দিতে নান্টু হত্যার তদন্তে আসতে পারে নতুন মোড়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে পূর্বের জবানবন্দি প্রত্যাহার এবং একই সথে নতুন জবানবন্দি দিয়ে আবেদন করেছেন এজাহারভ‚ক্ত ৬ আসামী। তারা সকলেই জেল হাজতে রয়েছে। আদালতের বিচারক আসামীদের দেওয়া আবেদনপত্রগুলো আমলে নিয়ে মামলার নথিতে অর্ন্তভূক্ত করার নির্দেশ দেন।

আসামি মামুন শাহ ও কাওসার তাদের আবেদনে চেয়ারম্যান নান্টু হত্যার পিছনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

আসামী মামুন শাহ লিখিত জবানবন্দিতে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার খুন হওয়ার কিছুদিন আগে বিশ্বজিৎ হালদার কুলের বাজারের বাসিন্দা লাবাই বাড়ৈ’র মাধ্যমে কষ্টি পাথরের দুটি মূর্তি হাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান একটি মূর্তি বিক্রির টাকা ও আরেকটি মূর্তি আত্মসাত করেন। পরবর্তি হাফিজুর রহমান বিশ্বজিৎ হালদারের কাছ থেকে মূর্তি নেওয়ার কথা অস্বীকার করলে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের গোপন বিরোধ শুরু হয় এবং দীঘদিন ধরে গোপন বিরোধ চলে আসছিল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. হেলাল উদ্দিন আমাকে হাত, পা ও চোখ বেঁধে নির্যাতন করে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারউক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করেন।

একই কথা উল্লেখ করেন আদালতে দেওয়া জাবনবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন আরেক আসামি জল্লা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য আসামী কাওসার সেরনিয়াবাত।

আসামী দীপক বালা তার লিখিত জবানবন্দীতে বলেন, চেয়ারম্যান নান্টু হত্যার ঘটনায় আমি কিছুই জানিনা। উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের প্ররোচনায় উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পাল আটক করে বরিশাল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে ইকবাল চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে জল্লা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন শাহ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য কাওসার সেরনিয়াবাত, দীপক বালা, সাকিল ইসলাম রাব্বি, হাদিরুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুসের নাম বলতে বলেন।

এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যা আমাকে বলেন, উল্লেখিত আসামিরা হত্যাকান্ড জড়িত এইমর্মে লেখা কাগজে পুলিশ স্বক্ষর চাইলে স্বাক্ষর করবি। তোর কোন ভয় নাই। তোর জন্য যা কিছু করা দরকার আমি দেখবো। এ কথা বলে ইকবাল আমাকে নগদ ৩ হাজার টাকা এবং একটি লুঙ্গি ও গেঞ্জী কিনে দেন। পরে পুলিশ আমার কাছ থেকে কাগজে স্বাক্ষর নেন এবং আদালতে শেখানো কথা বলতে বলেন।

এদিকে আদালতে আসামীদের দাখিলকৃত আবেদনপত্র গুলোর মাধ্যমে চেয়ারম্যান নান্টু হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তে নতুন করে মোড় নিতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। বেরিয়ে আসতে পারে হত্যার পিছনের অন্য কোনো রহস্য। ফেঁসে যেতে পারে উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল।

যিনি জল্লার জননন্দিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু হত্যার এক ঘন্টার মধ্যেই গনমাধ্যমকর্মীদের ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন হত্যায় কে বা কারা জড়িত। তবে এতো অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কিভাবে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে চেয়ারম্যান নান্টুকে কারা হত্যা করেছিলো আর তিনিই বা কিভাবে জানলেন এমন প্রশ্নের উত্তর আজও সবার কাছে রয়েছে অজানা।

এনিয়ে উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, এক সময় চরমপন্থি সর্বহারা দলের নেতা ছিলেন হাফিজুর রহমান ইকবাল। ওই সময় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুনসহ নানান অপকর্মের জড়িত ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগে যোগদান করে পরবর্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মানুষ ভয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাননি। কিন্তু এবারে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নেতাকর্মীর জনরোষে পড়লে সাধারন মানুষ ইকবালের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন।

উপজেলা যুবলীগের এক নেতা জানান, হাফিজুর রহমান ইকবাল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সমর্থন হারিয়ে এলাকায় জন-বিচ্ছিন্ন ও একাকীত্ব হয়ে পড়েছে। যে কারনে সে (ইকবাল) বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টি করার পায়তারা চালাচ্ছে। এমন কি নিজের সমর্থকের প্রান নাশ করে নির্বাচনী পরিবেশ নিজের অনূকূলে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে করতে নীল নকশা করছে বলে দলীয় একাধিক নেতাকর্মীরা জানান। তবে উজিরপুরের সাধারন মানুষ এবারে সন্ত্রাসী ইকবালের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। হাফিজুর রহমান ইকবালকে সমুচিত জবাব দিতে উজিরপুরবাসি প্রস্তুত।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য এসএম জামাল হোসেন বলেন, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে ইকবাল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পোষ্টার-লিফলেটে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে দলের মায়াকান্না করে তৃনমূল নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে ইকবালকে বয়কট করার ডাক দেন।

উজিরপুর পৌর মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বেপারী বলেন, দক্ষিনাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ উজিরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চুকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচিত করেছেন।

কেন্দ্রীয়ভাবে দলের সভাপতি জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে (বাচ্চু) চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষনা করেছেন। এর পরেও হাফিজুর রহমান ইকবাল সেই সিদ্বান্ত উপেক্ষা করে নৌকার বিরুদ্ধে নেমেছে। ২৪ মার্চ কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হাসানাত ভাইয়ের প্রার্থী বাচ্চু সিকদারকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে ইকবালকে যথাযথ শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি উজিরপুরবাসির প্রতি আহবান জানান।

উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কারফা বাজারে নিজ কাপড়ের দোকানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু। এ ঘটনায় পরের দিন নান্টুর বাবা শুখলাল হালদার বাদি হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখ ও ৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন ।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন