২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

গৌরনদীতে দু’জন নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা, গ্রেপ্তার ৩

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৭ অপরাহ্ণ, ২২ জুন ২০২১

গৌরনদীতে দু’জন নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা, গ্রেপ্তার ৩

গৌরনদী প্রতিনিধি >> প্রথম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থী আরজ আলী সরদারের সমর্থকদের বোমা হামলায় বিজয়ী গিয়াস মৃধার সমর্থক যুবলীগ নেতা আবু বকর ফকির নিহতসহ ১০ জন আহত হয়। একই দিন একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বোমা হামলায় বিজয়ী প্রার্থী ফিরোজ মৃধার চাচাতো ভাই মৌজে আলী মৃধা নিহতসহ ১০ জন আহত হয়। এ দুটি ঘটনায় মঙ্গলবার গৌরনদী মডেল থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৯নং ওয়ার্ডের ঘটনায় বিজয়ী ও পরাজিত দুই প্রার্থীকেই হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ জানান, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে সদস্য পদে বিজয়ী প্রার্থী খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ গিয়াস মৃধাকে (৪০) বিজয়ী ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থী খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরজ আলী সরদারের (৫০) সমর্থকরা সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বোমা হামলা চালালে বিজয়ী প্রার্থী গিয়াস মৃধার সমর্থক ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবু বকর ফকির (২৭) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এতে আরও ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোঃ আঞ্জু ফকির বাদী হয়ে পরাজিত প্রার্থী আরজ আলী সরদারকে প্রধান আসামি, তার জামাতা কালকিনি উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নাসির উদ্দিন, পুত্র রাব্বি সরদারসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামিরা পলাতক রয়েছে।

আপরদিকে একই দিন গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ৫নং কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় ৭নং পুরুষ বুথে ইউপি সদস্য প্রার্থী মোঃ ফিরোজ মৃধার সমর্থক নয়ন মৃধার জাল ভোট দিতে যান। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মন্টু হাওলাদারের পুত্র এজেন্ট সাইফুল ইসলাম জাল ভোট প্রদানকারী মোঃ নয়নকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র সদস্য প্রার্থী মোঃ ফিরোজ মৃধা ও মন্টু হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে সোমবার দুপুরে সংঘর্ষ বোমাবাজির ঘটনায় ফিরোজ মৃধার চাচাতো ভাই মৌজে আলী মৃধা (৬৪) নিহতসহ ১০ জন আহত হয়। ভোটের ফলাফলে ফিরোজ মৃধা বিজয় লাভ করে। হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবার নিহতের ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম মৃধা (৩২) বাদী হয়ে নির্বাচিত প্রার্থী ও চাচা ফিরোজ মৃধাকে প্রধান, পরাজিত প্রার্থী মন্টু হাওলাদার (২নং নম্বর আসামি) তার ছেলে শাওন হাওলাদার (২২), মন্টু হাওলাদারের সমর্থক টুটল হাওলাদার (২২), সবুজ হাওলাদার (২৪), সুজন হাওলাদার (২৪), সুমন হাওলাদার (২১), দিদারুল মৃধা (২৫) মাইনুদ্দীন ইসলাম (৩০), জাহাঙ্গীর ঘরামী (৪৫), সহিদুল ইসলামসহ (৩৫) ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৮০ জনসহ ১০১ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

মৌজে আলী মৃধা হত্যা মামলার বাদী নিহতের পুত্র মোঃ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমার চাচা ফিরোজ মৃধা প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। চাচার সমর্থক আমার বাবা মৌজে আলী মৃধা প্রতিপক্ষের বোমা হামলায় মারা গেছেন। চাচা ফিরোজ মৃধাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এটা খুবই অমানবিক ঘটনা। আপনার বাবা হত্যায় আপনার দায়ের করা মামলায় কি ১নং আসামি করেছেন চাচা ফিরোজ মৃধাকে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, আমিতো এজাহারের ১নং আসামি করেছি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মন্টু হাওলাদারকে। চাচাকে আমি কোন আসামি করি নাই। সে কি করে মামলার ১নং আসামি হয়।

এ প্রসঙ্গে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ তৌহীদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ভোট কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়া নিয়ে বিরোধ ও কেন্দ্রে বোমা হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে ফিরোজ মৃধা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাদী নজরুল ইসলাম তার চাচাকে ১নং আসামি দিয়েই মামলা করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর, খাঞ্জাপুর, পশ্চিম খাঞ্জাপুর, গিয়ে দেখা গেছে এক ধরনের নিরবতা। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে গ্রামের মানুষ। পাশাপাশি গ্রামগুলোতে চলছে এক ধরনের আতংক। গ্রামের যুব কিশোরসহ অধিকাংশ পুরুষ এলাকাছাড়া। এ সময় গ্রামের মোঃ সৈজদ্দিন (৮০), মমতাজ বেগম (৪৫), চাহেরন বেগম (৫০) বলেন, বাবা মোগো এ্যাহানে ভোট দিতে যাইয়া মানুষ খুন অইছে হেইয়ার লাইঘ্যা পোলাপান ভয়ে বাড়ি ছাইড়া গেছে। উত্তর কমলাপুর, ইল্লা গ্রামের নুসরাত বেগম (৩৮) বলেন, মোগো গ্রামে ভোটের লাইগ্যা দুইটা পরান চইললা গেল। মোরা সবাই ভয়ে আছি। আতংকের কথা স্বীকার করে ৮নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য মোঃ গিয়াস মৃধা বলেন, গ্রামে আতংক আছে কিন্তু আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাই আশস্ত করার চেষ্টা করেছি। যাতে ভীতি কেটে যায়।

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, ৯নং ওয়ার্ডের ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদি হয়ে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ ১০১ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি বিজয়ী প্রার্থী ফিরোজ মৃধা, তার সমর্থক নয়ন মৃধা, পরাজিত প্রার্থী মন্টু মৃধার সমর্থক মাহফুজুর রহমান ওরফে ইমনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছে। ৮নং ওয়ার্ডের ঘটনায় নিহত আবু বকর ফকিরের বাবা আঞ্জু ফকির বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও ২৫ জন অজ্ঞতনামাসহ ৫৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন