২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

চরফ্যাসনে কেঁচো সার উৎপাদনে সফল হচ্ছেন কৃষকরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

চরফ্যাসনে কেঁচো সার উৎপাদনে সফল হচ্ছেন কৃষকরা

আকতারুজ্জামান সুজন, চরফ্যাসন:: উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসাবে কেঁচোর বিষ্ঠা বা মলের ব্যবহার নতুন নয়। এর মাধ্যমে যে জৈব সার তৈরী করা হয়, তার কেতাবি নাম ভার্মি কম্পোষ্ট। সেই ভার্মি কম্পোষ্টকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে সফল হচ্ছেন চরফ্যাসন উপজেলার কৃষকরা। স্থানীয়ভাবে এর পরিচিতি রয়েছে কেঁচো কম্পোষ্ট বা কেঁচো সার হিসেবে।

পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) এর সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাই প্রকল্পের মাধ্যমে চরফ্যাসন উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে নিরাপদ দুগ্ধ পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার বাড়ানো ও বড় বাজারে প্রবেশ যোগ্যতা বৃদ্ধি করণ। শীর্ষক উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে মূলধনের ঘাটতি পুরনে উপকার ভোগীদের জন্য রয়েছে স্বল্প লভ্যাংশে ঋণ, প্রশিক্ষণ, ফ্রি সেবা,আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলনসহ বিভিন্ন অনুদান ব্যবস্থা। পরিবার উন্নয়ন সংস্থার (এফডিএ) সাসটেইনেবল এন্টার প্রাইজ প্রকল্পের দেখানো পথ ধরে এই জৈব সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদনের যুক্ত প্রায় ১৯ জন উদ্যোক্তাকে কমার্শিয়ালার মাধ্যমে ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরীর জন্য আর্থিক ও কারিগড়ি সহায়তাসহ অনুদানের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে এই জৈব সার বড় ভূমিকা পালন রাখতে পারে। সে কারণেই প্রান্তিক কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে এই সার ব্যবহার নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে বিষমুক্ত শাক-সবজি তারা উপহার দিতে পারবেন সাধারণ মানুষকে।

এ উদ্যোক্তাদের মধ্যে আতাউর রহমান বাবুল (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য)। সে চরফ্যাসন উপজেলার দুলারহাট থানার নীলকমল ইউনিয়নের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। আগে থেকেই রাসায়নিক সারের প্রতি অনিহা ছিল বাবুলের । তাই চাকরি থেকে অবসরের পর নিজ এলাকার দরিদ্র চাষিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখার উদ্যেশ্যে বানিজ্যিকভাবে কেচোঁ সার উৎপাদনে আগ্রহী হন। ২০১৯ সালে প্রশিক্ষন নেন পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) এর এসএপি প্রকল্পে থেকে। প্রশিক্ষন নিয়ে ২ টি চারি দিয়ে কেঁেচা সার উৎপাদন শুরু করেন। সালমা নামের এক উদ্যোক্তার কাছ থেকেই কেঁচো ও স্থানীয় গো খামারীদের থেকে গোবর নিয়ে প্রথমে চারি, বস্তা, নেট, চালনি সব মিলিয়ে ৪০০০ টাকা খরচ করে শুরু করেন কেঁেচা সার তৈরির কাজ । দ্বিতীয় মাস এ প্রকল্পের সাধারণ সেবা খাত হতে ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ)টাকা ঋন পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে প্রথমে ৫ ফুট বাই ৫ ফুট সাইজের ১৬ টি পাকা সার তৈরির চৌবাচ্চা বানাই, পাশাপাশি গোবর সংরক্ষনের জন্য একটি ঘর এবং ২০০ টি রিং বানাই। কেঁচোর খাদ্য হিসেবে কলা গাছ এবং খড় ব্যবহার করি”। বর্তমানে ১৬ টি চৌবাচ্চা, ২০০ রিং আর ২৫ টি চারিতে মাসে ৩৫ মন সার উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি সারের বর্তমান বাজার মূল্য ২৫ টাকা হিসেবে প্রতি মন ১০০০ টাকা করে বিক্রি করতে পারি। ”গোবর সংগ্রহ, খামার দেখভাল, সার তৈরির জন্য ১৫,০০০ টাকা মাসে বেতনে ১ জন লোক সবসময় কাজ করে। সকল খরচ বাদ দিয়ে এ প্লান্ট থেকে মাসে প্রায় ১৫ হাজারের মত ইনকাম থাকে।” আর এর পরেই বানিজ্যিক ভাবে সার তৈরিতে আগ্রহ জন্মায় বাবুলের। পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) এর এসএপি প্রকল্পের কর্মকতারা বলছে, শাকসবজির ফেলে দেওয়া অংশ, অর্ধ পঁচা গোবর, কালাগাছ ও কচুরিপানা একসঙ্গে মিশিয়ে যেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। কেঁচো সেসব ময়লা খেয়ে মলত্যাগ করে পচিয়ে ফেলে ও বংশবিস্তার করতে থাকে। কেঁচোর পঁচিয় ফেলা দ্রব্যই মূলত জৈব সারে পরিণত হয়। প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয় এই সার। অন্যদিকে এই জৈব স্যার উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেঁচো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা দরে।

চরফ্যাসন উপজেলা কৃষি কর্মতর্কা কৃষিবিদ ওমর ফারুক বলেন, চরফ্যাসন কেঁচো কম্পোষ্ট ছিলোনা। পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) এর এসএপি প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ কিছু কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে অফিসিয়াল ভাবে কেঁচো ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে পরীক্ষামূলক কেঁচো চাষ শুরু করে। কৃষকরা বর্তমানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা কমে দিয়ে নিদিষ্ট পরিমানে জৈব সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত ফসল ফলাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে হলে জৈব সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। এখন আমাদের এই চরফ্যাসন উপজেলাতে সন্তোষজনক বিষমুক্ত আম, ধান ও শাকসবজি চাষ হচ্ছে। ফলে এই জৈব সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে। চরফ্যাশনের কৃষকরা এই সার ব্যবহারের মাধমে উদাহরণ তৈরী করেছেন। আমরা চাইব অন্যরাও এই জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করবে। তা জন্য আমরা সাবির্ক সহযোগিতা করব।’

 

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন