২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

জঙ্গিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ‘কুকি’ বিদ্রোহীরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫৭ অপরাহ্ণ, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক অনলাইন:: আল কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরাম থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, তাঁদের ধারণা সাম্প্রতিক সময়ে আট থেকে দশজন একই গন্তব্যের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। এর আগে ভারতের মণিপুর রাজ্যের কুকি বিদ্রোহীদের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীটির যোগাযোগের তথ্য ছিল পুলিশের কাছে।

আনসার আল ইসলামের গ্রেপ্তার হওয়া দুই সদস্য হলেন মাহমুদ হাসান (২৫) ও মোহাম্মদ সাঈদ হুসেইন (৩০)। মাহমুদ হাসানের বাড়ি নরসিংদীর বাহারচর ও সাঈদের বাড়ি মাগুরায়। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে গত ২৭ জুলাই ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরাম থেকে। মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে গত ৩০ জুলাই দিল্লি ও গুয়াহাটিতে চিঠি দিয়ে এই দুই আসামি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। মিজোরামের মমিত জেলা আদালতে উপস্থাপনের পর দুজনকেই পাঁচ দিনের পুলিশি রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন আইজল ও গুয়াহাটিতে পুলিশের বিশেষ শাখা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র), ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও মিজোরামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও এসবি।

২০১৮ সালে আনসার আল ইসলামের গোয়েন্দা শাখার প্রধান মো. জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সে সময়ই পুলিশকে জানিয়েছিলেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মণিপুরের বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘কুকি বিদ্রোহী’দের কাছ থেকে আনসার আল ইসলাম প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কুকি বিদ্রোহীদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহের একটা চেষ্টাও তাঁদের রয়েছে।

বাংলাদেশে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ থেকে তাঁরা মাহমুদ হাসান সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছেন। মাহমুদকে উদ্ধৃত করে তারা বলছে, তিনি নরসিংদীর বাহেরচরের একটি মাদ্রাসায় চার বছর লেখাপড়া করেছেন। এরপর ছয় বছর লেখাপড়া করেন শেখেরচর জামিয়া মাদ্রাসায়। মাহমুদ কোরআন শরিফ পড়তে পারেন, উর্দু, ইংরেজি ও বাংলায় তাঁর অক্ষরজ্ঞান রয়েছে। মুনির নামের এক ব্যক্তির নির্দেশে তিনি ভারতে আসেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ঢাকা থেকে মুনির তাঁকে একটি ‘আধার কার্ড’ বানিয়ে দেন। ওই কার্ডে তাঁর নাম লেখা হয় শরিফুল ইসলাম।

মোহাম্মদ সাঈদ হুসেইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেননি সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা। মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাঈদ নামে মাগুরার কেউ ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমন কোনো তথ্য এখনো তাঁরা পাননি।

এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতে গ্রেপ্তার হন আনসার আল ইসলামের বিস্ফোরক বিভাগের শীর্ষস্থানীয় দুজন নেতা শামসাদ মিয়া ওরফে তানভীর ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস ও খুলনার কপিলমুনির রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন। কলকাতা পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে জাল আধার কার্ড উদ্ধার করেছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সে সময় খবর বেরিয়েছিল, তাঁদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে এসেছিলেন ভারতীয় নাগরিক মনতোষ দে ওরফে মনাদা। মনতোষ একটি পিস্তল ও একটি একনলা বন্দুক চালান হস্তান্তরের আগে অস্ত্র নমুনা হিসেবে ওই দুজনকে দেখাতে এসেছিলেন। বাংলাদেশের সিটিটিসি কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হওয়া ওই দুজনকে জেরা করতে ভারতে গিয়েছিলেন সে সময়। তাঁদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার ওই দুজনই বোমা বানানোয় পারদর্শী ছিলেন। ঢাকায় বাড্ডার সাঁতারকুল, দক্ষিণখান ও মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে ২০১৬ সালে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়েছিলেন তাঁরা। এর কিছুদিন পরই ওই দুজন ভারতে পালিয়ে যান।

সূত্রগুলো বলছে, পাকিস্তান থেকে বৈধ ভিসায় মজিদ নামের এক কারিগর এসে ১৮ জন বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া ওই দুজন ছিলেন।

‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সেলিম মিয়ানমারে

একের পর এক ব্লগার হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে সিটিটিসি ২০১৬ সালের ১৯ মে ছয়জনের ছবি প্রকাশ করে। ওই তালিকার দুই নম্বরে আছেন সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী–২। বাড়ি উত্তরবঙ্গের কোনো একটি জেলায়। পুলিশ জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন, ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু, নিলাদ্রী নীলয়, নাজিমউদ্দিন সামাদ, কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তানভীর তনয় হত্যাকাণ্ডেও তাঁর উপস্থিতি ও নেতৃত্ব দেওয়ার তথ্য পায়। পুলিশ আরও বলছে, এই সেলিম আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সামরিক, আইটি ও কথিত জিহাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন।

তবে আনসার আল ইসলামের সমন্বয়ক ও সামরিক কমান্ডার ও চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের কোনো খবর নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আনসার আল ইসলামের যত সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের কারও সঙ্গেই মেজর জিয়ার যোগাযোগের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন তাঁরা আর জিয়ার ওপর ঠিক আস্থা পাচ্ছেন না।

সিটিটিসির ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেছেন, গত বছরের জুলাইতে জুলহাস মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় খুনের ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হন মোহাম্মদ জুবায়ের। তাঁর সঙ্গে ওই বছর জানুয়ারিতে জিয়ার যোগাযোগ হয়েছিল।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন