২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

জল্পনার অবসান: সেতুর নাম পদ্মা সেতুই থাকছে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৪৪ অপরাহ্ণ, ১৯ মে ২০২২

বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিসভা সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ক্লিয়ার করবেন আগামী ৫/৬ দিনের মধ্যে জিনিসটা। পদ্মা সেতু জুন শেষে উদ্বোধন হচ্ছে- এটা তো উনি বলেই দিয়েছেন। আমরাও রেডি আছি।’

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: জুনের শেষ সপ্তাহে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এই সেতু কার নামে হবে, এমন প্রশ্নে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন সেতুর নাম নদীর নামেই হতে পারে।

সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রিসভা বৈঠক-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বসে মন্ত্রিসভা বৈঠক। এতে নির্ধারিত বিষয়ের বাইরেও নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিসভা সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ক্লিয়ার করবেন আগামী ৫/৬ দিনের মধ্যে জিনিসটা। পদ্মা সেতু জুন শেষে উদ্বোধন হচ্ছে- এটা তো উনি বলেই দিয়েছেন। আমরাও রেডি আছি।’

এক দশক ধরে দেশের দক্ষিণের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এই সেতুর জন্য। এটি দেশের সবচেয়ে বড় সেতু- বিষয়টি কেবল এমন নয়, এর সঙ্গে জড়িয়েছে রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বহু ঘটনাপ্রবাহ। যে কারণে সেতুটি নিয়ে আলোচনা আরও বেশি। এর প্রতিটি স্প্যান বসানো সংবাদ হয়ে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, প্রতিটি বাধাবিঘ্ন গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে তুলেছে তোলপাড়।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর পরই জানানে হয় চলতি বছরের জুনে যান চলাচল শুরু করা হবে। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেন, ডিসেম্বরের শেষে সেতুর কাজ শেষ হবে।

তার এই বক্তব্যে দেখা দেয় বিভ্রান্তি। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরে একাধিকবার নিশ্চিত করে বলেন, জুনেই যান চলাচল শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী ওই মাসে যেদিন সময় দেবেন, সেদিনই যান চলাচল শুরু হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আশা করি জুনের শেষ সপ্তাহের আগেই ব্রিজ রেডি হয়ে যাবে। উদ্বোধনের তারিখটা এখনও নির্ধারিত হয়নি। ডেটটা ধরে রাখেন জুনের শেষের দিকের কোনো একদিন যেদিন উনি (প্রধানমন্ত্রী) কমফোর্ট ফিল করবেন। অনেক জিনিস দেখতে হয়, সেগুলো দেখে আমরা আশা করি শেষ সপ্তাহের আগেই আমরা ব্রিজ রেডি করে দিতে পারব।’

সেতুর নামকরণ প্রসঙ্গ

পদ্মা সেতু হওয়ার পর এটি কার নামে হবে, সেটি নিয়েও তুমুল আলোচনা চলছে। পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক এই সেতু থেকে সরে যাওয়ার পর অর্থায়ন জটিলতায় সেতুটি আদৌ হবে কি না, এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন নিজ অর্থে সেতু করার।

তার এই সিদ্ধান্তের পর দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, এত বড় প্রকল্প নিজে নিজে করার মতো আর্থিক সামর্থ্য বাংলাদেশের হয়নি। এতে রিজার্ভ চাপে পড়বে, অন্য উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে।

বিশ্বব্যাংক এই অভিযোগ তোলার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভিযোগকে মিথ্যা বলে আসছিলেন। বিশ্বব্যাংক সে সময়ের যাতায়াতমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি জানানোর পর আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমিক আখ্যা দেন শেখ হাসিনা।

বিশ্বব্যাংক সে সময় কানাডার একটি আদালতে পদ্মা সেতু নিয়ে মামলা করে। সে দেশের কোম্পানি এসএমসি লাভালিন এই দুর্নীতি চেষ্টায় জড়িত ছিল- এমন অভিযোগে করা মামলাটি ২০১৭ সালে উড়িয়ে দেয় অন্টারিওর একটি আদালত। বিচারক বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ বলেও উড়িয়ে দেন।

শেখ হাসিনার অমনীয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তার নামে এই সেতু করার চেষ্টা করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে শেখ হাসিনা এতে রাজি হচ্ছেন না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুই হবে। প্রধানমন্ত্রী হয়তো আগামী ৫/৬ দিনের মধ্যে যেকোনো সময় ক্লিয়ার করবেন।’

টোল নির্ধারণ কোন নীতিতে

সেতু উদ্বোধনের আগের মাসে পারাপারে যে টোল ঠিক করা হয়েছে, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, টোল বেশি ধরা হয়েছে।

সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলকে ১০০, প্রাইভেট কার ৭৫০ ও বড় বাসকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে।

সেতুর টোল নির্ধারণের বিষয়টিও স্পষ্ট করে সচিব বলেন, ‘যখনই যেখানে ব্রিজ করে স্ট্যান্ডার্ড হলো ফেরির ১ দশমিক ৫ গুণ ধরা হয়। সেটা ধরেই করা হয়েছে। এর পরও সরকার যদি মনে করে এটা বেশি হয়েছে…।

‘অনেকে পদ্মা সেতুকে বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে তুলনা করেন। বঙ্গবন্ধু সেতু হলো পাঁচ কিলোমিটার, আর পদ্মা সেতু হলো ৯ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। প্রায় দ্বিগুণ।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হার সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। সুতরাং সেতু কর্তৃপক্ষকে ওই জায়গা থেকে টাকা উপার্জন করতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের স্থাপনার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় পয়সা না দিয়ে যাওয়ার কোনো সিস্টেম নেই।’

এই সেতু নির্মাণে সেতু বিভাগকে মোট ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ১ শতাংশ সুদহারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

সেতুর নির্মাণ ব্যয় তুলতে ধারণার চেয়ে কম সময় লাগবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্টাডিতে ছিল যে ২৪-২৫ বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬-১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে।

‘ওই পাড়ের যেসব কাজকর্ম এবং যেগুলো আছে, সেগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি। মোংলা পোর্ট যে এত স্ট্রং হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে- এগুলো কিন্তু আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘ধারণা ছিল পদ্মা সেতু ১ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আনবে। এটা ২-এর কাছাকাছি চলে যাবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন