২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

জামিনের পর এলাকায় সাবেক সাংসদ আউয়ালের মহড়া

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

বার্তা প্রতিবেদক, পিরোজপুর:: দুর্নীতির মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরেছেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সড়কপথে তিনি পিরোজপুরে পৌঁছান। শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বক্তব্য দেন।

অর্পিত সম্পত্তি ও খাসজমিতে ভবন নির্মাণ, পুকুর দখলের অভিযোগে গত ৩০ ডিসেম্বর এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একটি মামলায় আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আলী আকবর বাদী হয়ে দুদক বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তিনটি মামলা করেন। ৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে এসব মামলায় জামিন পান আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন।

দল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসনের বর্তমান সাংসদ গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। শ ম রেজাউল করিম ও আউয়ালের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে নিজের শক্তি প্রদর্শন ও নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে আউয়ালের পিরোজপুরে ফেরা উপলক্ষে মহড়ার আয়োজন করে তাঁর পরিবার। আউয়ালের মেজ ভাই হাবিবুর রহমান পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র ও সেজ ভাই মজিবর রহমান পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আউয়াল ২০০৮ সালে প্রথম ও ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার সাংসদ হন। ২০১৫ সালে আউয়ালের সঙ্গে তিন ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও ছোট ভাই জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মশিউর রহমানের বিরোধে দেখা দেয়। এরপর থেকে আউয়াল দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০১৫ সালের পর তাঁর বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিও পালন করতে দেখা যায়নি।

গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় আউয়াল পিরোজপুর সদরের বেকুটিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছান। এরপর তাঁকে নিয়ে দুই সহস্রাধিক মোটরসাইকেল, অর্ধশত গাড়ি ছয় কিলোমিটার শোভাযাত্রা করে পিরোজপুর শহরে আসেন নেতা-কর্মীরা। পরে শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন এ কে এম এ আউয়াল, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান।

সমাবেশে এ কে এম এ আউয়াল বলেন, ‘অনেক দিন পর আপনাদের একত্র হতে দেখে এবং এত বড় সমাবেশ দেখে ভালো লেগেছে। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করব। এই বয়সেও আমার প্রতি আপনাদের ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।’

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাহান খান তালুকদার বলেন, ‘আউয়াল সাহেবের পিরোজপুর সফরের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলের নেতারা অবগত নন। শুনেছি তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মোটর শোভাযাত্রা করেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের ছয়জন নেতা বলেন, সামনে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনে আউয়াল যাতে পুনরায় সভাপতি হতে না পারেন, সে জন্য তাঁর প্রতিপক্ষ চেষ্টা করবে। দুদকের মামলার কারণে তিনি কিছুটা বেকায়দায় আছেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আউয়াল মহড়া দিয়ে পিরোজপুরে ফিরেছেন। গত কয়েক বছরে তিনি এ রকম কোনো মহড়া দেননি।

দুই মেয়াদে সাংসদ থাকাকালে ১০ বছরে আউয়াল এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারদের কাছ কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্ত, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাজ থেকে এসব কমিশন নেওয়া হতো। আউয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বুশরা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স সুভাস এন্টারপ্রাইজ প্রভাব খাটিয়ে কাজ বাগিয়ে নিত। ওই দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে আউয়ালের প্রভাব খাটিয়ে বেকুটিয়া ফেরিঘাট ও বলেশ্বর সেতুর ইজারা নেওয়ার পাঁয়তারা চালায়। এ সময় ফেরি ও সেতুর টোল ইজারা নিয়ে আউয়ালের সঙ্গে বিরোধ দেখা যায় তাঁর ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমানের। হাবিবুর রহমানও ইজারা নিতে দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। পরে হাবিবুর রহমান ইজারা পান। আউয়াল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন