২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

জীবন নাকি জীবিকা! কোনটা বেশি জরুরী?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, ১৯ মে ২০২০

এসএম মনিরুজ্জামান:: সমাজ বিজ্ঞানী টোলে তার  Common Human Needs গ্রন্থে মানুষের ছয়টি মৌল মানবিক চাহিদার কথা উল্লেখ করেছেন। যেগুলো একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক। তার মধ্যে খাদ্য হলো সর্বাগ্রে গুরুত্ববহ। মানুষের খাদ্য  চাহিদা, যে কোন ভাবেই হোক সে পুরন করবেই। এটা স্বভাবসুলভ মানবিক আচরন।  অন্যান্য উপাদান গুলো হলো বস্ত্র, বাসস্থান,  শিক্ষা,  চিকিৎসা ও চিত্তোবিনোদন। মহামারী করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে ঝাঁকুনি দিয়ে দেখিয়ে দিল মানুষ কতটা অসহায়। বাংলাদেশ হলো জনসংখ্যা অধিক্য একটি দেশ, হয়তো বিশ্বের অনেক দেশ আমাদের সম্পর্কে জানেই না। আমরা কেমন সভ্যতায় আছি? প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নগদ আর্থিক সহায়তার আওতায় পঞ্চাশ লাখ পরিবারে পঁচিশ শত করে টাকা প্রদানের লক্ষে তালিকা করে জমা দিতে বললে, জমাও দিয়ে দেন প্রতিনিধিগন। শুধু নাম্বারগুলো বেশির ভাগ নিজের কিংবা আত্মীয় পরিজনদের দেওয়া হয়েছে অনেক জায়গায়। অবশ্যক এসকল দুর্নীতির যথাযথ বিচার হবে নিশ্চয়ই আমরা আশা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসৃত হচ্ছে,  আমরা সেটা জানি।
জীবন বাঁচাতে সবাই চেষ্টায় মত্ত। মরিতে চাহি না এ সুন্দর ধরাধামে এটা প্রতিটি মানুষেরই একমাত্র চাওয়া। কদাচিৎ ক্ষুদার যন্ত্রণায় আত্বহুতি দিতেও দেখা যায়। জীবন বাঁচাতে জীবিকার্জন অত্যাবশ্যক। তাইতো কর্মমূখী মানুষের উপচে পড়া ভীড়। রাস্তায়,  গাড়ীতে,  ফেরীতে, পথে পথে।  অদৃশ্য মৃত্যুদূত সামনে দাড়িয়ে আছে, জানা সত্বেও থেমে নেই মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ। প্রশাসন এত করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অথচ মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। একটাই কারন জীবিকা নির্বাহ। শুধু কি জীবিকা নির্বাহের জন্যই বের হওয়া?  না, তা কিন্তু নয়, কিছু স্বভাব সূলভ আচরন ঘর মূখী না হয়ে, বাহির মূখী হয়। আর তারাই মূলত লকডাউন কে বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে।  সরকারের যতটা না দায়িত্ব তার চেয়ে জনগনের কর্তব্য অনেক বেশি। কিন্তু আমরা এখনোও ভালো মানুষের পরিচয় দিতে পারিনি অনেক ক্ষেত্রেই।
এক্ষেত্রে জীবিকার চেয়ে জীবনটাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত বলে মনে করি। কিন্তু কি দেখছি আমরা।  করোনা ভাইরাস কে কোন গুরুত্ব না দিয়ে জীবিকা নিয়েই বেশি ভাবছি।  আসলে জীবন থাকলেই তো জীবিকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। জীবনই যদি না থাকে তাহলে জীবিকার প্রয়োজনীয়তা কি? সারা জীবন ঈদের শপিং করা হয়েছে মহানন্দে, এবার কি একটি বছরের জন্য ঈদের শপিং না করলেই নয়? অবশ্যক কি ই বা বলার আছে শপিংমল খোলা না থাকলে তো আর শপিংএ যাওয়া হতো না।  জানিনা সরকার কার বুদ্ধিতে কখন কি সিদ্ধান্ত নেয়।ত্রান সামগ্রী বিতরন হচ্ছে সবাই দেখছে কিন্তু সবাই পাচ্ছে না। কেন পাচ্ছে না?
তাহার সঠিক খতিয়ান সরকারি দপ্তরে হয়তো নথিভুক্ত আছে। সে জন্যই নতুন নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে।  আর নতুন সিদ্ধান্তের পাশাপাশি চোরেরাও তাদের চুরির কৌশল বদলে নিচ্ছে। কি হতভাগা জাতি আমরা।
 এক ফেস বুক বন্ধুর একটি পোস্ট দৃষ্টি গোচর হয়েছে। তা হলো এমন সরকারি ভাবে যদি ঘোষিত হয় প্রত্যেক পতিতাকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়া হবে। তাহলে দেখা যাবে অনেক প্রতিনিধি তার স্ত্রী, বোন,  মা, ভাবি সহ অনেক আত্মীয়ের নাম তালিকাভুক্ত করতেও দ্বিধা করবে না। এটা থেকেই বুঝতে বাকি নেই আমাদের নীতি নৈতিকতার অবস্থান কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। অবশ্যক জীবিকার তাগিদেই হয়তো এ কাজ গুলো করবে। অভুক্ত হায়েনার কাছে সিংহও হার মেনে জীবন দিতে দেখা যায়।
জীবিকার তাগিদে ভারতের পরিযায়ী শ্রমিকগন এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে পারি জমায়। লকডাউনে বাড়ি ফেরার পথে ক্লান্ত দেহ নিয়ে রেললাইনের উপরে শুয়ে পরে। ঘুমন্ত দেহের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যায় বিশ জনের মধ্যে পনেরো জন নিহত বাকি পাঁচ জন আহত হয়ে বেঁচে ফিরে। তাদের কাছে জীবনের চেয়ে জীবিকার তাগিদটা অনেক বড় ছিল।
কেহ স্বভাব সূলভ আবার কেহ দায় থেকেই অনেক কাজ করে থাকে। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ কত শত পেশাকে গ্রহন করে। কিন্তু জীবনের জন্য সামান্য লকডাউন কে মেনে নিতে পারছেন না।
গণপরিবহন বন্ধ হওয়া সত্বেও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পায়ে হেঁটে কিংবা অটো রিক্সা বা অন্য যে কোন ভাবে। কিন্তু জীবনের জন্য শুধু ঘরে থাকার জন্যই বলা হয়েছিল, তা কিন্তু মানতে পারেনি অধিকাংশ জনগন। যার খেসারত গুনতে হবে হয়ত অনেক গুলো প্রান দিয়ে।
জীবন বাঁচানোর জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জীবিকা অনেক উপায়েই নির্বাহ করা যাবে কিন্তু জীবন ফিরিয়ে আনার কোন পদ্ধতিই জানা নেই।  জীবনের জন্যই নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন সুন্দর আগামীর জন্য।
—- এস এম মনিরুজ্জামান
8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন