১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

জেলা প্রশাসকদের অত:পর `স্যার’ বলবেন এমপিরা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, ১৭ মে ২০২০

বিশেষ বার্তা পরিবেশক:: করোনাকালে বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা এখন কোণঠাসা, শুধু কোণঠাসা বললে কম বলা হবে। জনপ্রতিনিধিরা কার্যত সব জায়গা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। জেলার দায়িত্ব এখন জেলা প্রশাসকদের। জেলার সমস্ত কিছু দেখাশোনা করছেন জেলা প্রশাসকরা। একজন জেলা প্রশাসক উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং রুলস অব বিজনেসে তার অবস্থান একজন সংসদ সদস্যের চেয়ে অন্তত ১০ ধাপ নিচে।

একজন সংসদ সদস্য জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং রুলস অব বিজনেসে তিনি সচিবদেরও উপরে স্থান পান। কিন্তু করোনাকালে এমন অবস্থা হয়েছে যে, এখন ডিসিদেরকেই তোয়াজ করে চলতে হচ্ছে এমপিদের। যারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দিয়ে এমপি হয়েছেন তারা জেলা প্রশাসকদের পাত্তা দিচ্ছেন না। নিজেদের মান-সম্মান বাঁচাতে আলাদাভাবে নিজেদের মতো করে কাজ করছেন। কিন্তু যারা আওয়ামী লীগের ভাষায় ‘হাইব্রিড’, ব্যবসা-বাণিজ্য করে বা ঠিকাদারি করে এমপি হয়েছেন, তারা এখন ডিসিদেরকে তোয়াজ করে চলছেন। কারণ ডিসিদের হাতেই সব ক্ষমতা।

প্রধানমন্ত্রী সবগুলো জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। সেই ভিডিও কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেছেন জেলা প্রশাসকরা। সেখানে সহ-পার্শ্ব অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন এমপিরা। কোথাও কোথাও মন্ত্রীরাও পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে তারা নায়ক না খলনায়ক তা বোঝার উপায় নেই। কারণ এমপি এবং মন্ত্রীদেরকে জেলার কর্তৃত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সুস্পষ্টভাবে দূর্নীতিমুক্ত একটি কর্মপ্রবাহের জন্য। তাহলে ধরেই নিতে হবে যে, এমপি বা মন্ত্রীদেরকে দুর্নীতিবাজ মনে করে সরকার। আর এ কারণে ২০০ পিস শাড়ি বণ্টনের দায়িত্বও এমপিদেরকে দেয়া যায় না। কারণ এমপিরা যদি আবার তা চুরি করে ফেলেন! আর এ কারণেই এখন জেলার সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদেরক। এমপিরা এখন যেন তাদের অধীনস্ত, শুধু ‘স্যার’টা বলাই বাকি। কারণ জনপ্রতিনিধিদের যে কাজগুলো ছিল, তা এখন করছেন জেলা প্রশাসকরা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এ এক বিস্ময় বটে। অবশ্য এই বিস্ময়ের সূত্রপাত এখন থেকে হয়নি।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশে আমলাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু করেছিল। সে সময় অনেক আমলারা প্রকাশ্যেই বিভিন্ন ঘরোয়া আলাপচারিতায় বলতেন যে, ‘অমুককে জিতিয়ে দিলাম, তমুককে জিতিয়ে দিলাম’। নির্বাচন যেন রাজনীতিবিদদের কাজ নয়, আমলারাই এই নির্বাচন করে দিয়েছেন। কান পাতলে এখনো এরকম কথা শোনা যায়।

এরপর থেকে জেলা প্রশাসকরা দুর্দান্ত ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। জেলায় এমপিদের থেকে তারাই যেন বড় আওয়ামী লীগার হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর এ কারণেই প্রশাসনের জবাবদিহিতা এবং চেইন অব কমান্ড পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে জামালপুরের ডিসি বা কুড়িগ্রামের ডিসির মতো ঘটোনাগুলো ঘটেছে। কিন্তু করোনা সঙ্কটের সময় একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসকদের কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দেয়া হলো এবং জানিয়ে দেয়া হলো যে, এমপিদের কোন ভূমিকা নেই, কোন কাজ নেই।

এখন এমপিরা কী করবেন? এখন এমপিরা কি শুধু জেলা প্রশাসকদের পাশে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়বেন? নাকি জেলা প্রশাসক যা করবেন, সে ব্যাপারে নীরব সম্মতি জানাবেন? অথবা জেলা প্রশাসকদেরকে সত্যি সত্যি সহায়তা করবেন? কারণ এমপিদের এখন যে অবস্থা, তাতে জেলা প্রশাসকদের সাথে আপোষ করা ছাড়া তার হাতে কোন পথ নেই। এরকম পরিস্থিতি চললে কদিন পরে জনপ্রতিনিধিদেরকে মানুষ আর পাত্তা দিবে কিনা সেটাও একটা দেখার বিষয়।

এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে হয়তো এমপিদেরকে কিছুদিনের মধ্যেই জেলা প্রশাসকদেরকে ‘স্যার’ বলতে হবে। কারণ একটা সময় ছিল জেলা প্রশাসকদেরকে সকলে স্যার না বললে জেলা প্রশাসকরা গোস্বা করতেন।

অতিরিক্ত সচিবের ভারে ভারাক্রান্ত সচিবালয়ে, যিনি ঢাকায় এসে আলাদা রুমও পান না, সেই জেলা প্রশাসকই যেন একটা জেলায় রাজাধিরাজ। আর সেই রাজাধিরাজ তো সবার কাছে ‘স্যার’ শুনতে চাইবেন। এখন শুধু বাকি থাকলো এমপিরা ডিসিদেরকে ‘স্যার’ বলবেন। সেই সময়টা বোধহয় সমাগত।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন