২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

ঝালকাঠির তিন সাংবাদিককে হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:০৯ অপরাহ্ণ, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঝালকাঠির তিন সাংবাদিককে হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি

ঝালকাঠি প্রতিনিধি >> ঝালকাঠির ৩ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে দায়ের করোনো হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমেই এটা সম্ভব হয়েছে। তাই ঝালকাঠি পুলিশ সুপারসহ সকল পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে ঝালকাঠি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানিয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে এ ধরনের মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলটি করা হয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একই সাথে মামলার বাদীর বিরুদ্ধে ১৭ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রার্থনা জানিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা। ঝালকাঠি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের অভিমত এ ধরনের অভিযোগ পেলে ভবিষ্যতে মামলা রেকর্ডের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি মিথ্যা মামলা রেকর্ডের জন্য তদবিরকারীদেরও চিহ্নিত করা উচিত। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পুলিশ বিভাগকে সাধুবাদ মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয় পশ্চিম ঝালকাঠির যুব উন্নয়নের সামনে পাকা রাস্তার মোড়। ঘটনার তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২১। সময় রাত সাড়ে ১০ টা। বাদিনী জেসমিন আক্তার নুপুর। পিতা ইসমাইল মোল্লা। ঠিকানা ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান গ্রাম।

বাদিনীর অভিযোগ খালুর বাড়ি থেকে ভাই শাওন মোল্লার কলেজ মোড়ে বাসায় যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আসিফ মানিক সিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ খান অশ্রু ও বিএমএসএফ জেলা কমিটির সাধার সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইটি সম্পাদক প্রভাষক রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু সাংবাদিক বাদিনীর সাথে যৌন কামনা চরিতার্থ করার চেষ্টা চালায়। এতে বাদিনীর শরীলের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। একপর্যায়ে ডাক চিৎকারে সাক্ষীরা ঘটনাস্থলে এলে আসামী সাংবাদিকরা পালিয়ে যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ২০ এপ্রিল দায়ের করা ১১ নম্বর মামলায় পুলিশের কাছে বাদিনী আলামত হিসাবে তার ছেড়া জামা ও পাজামা দিয়েছে। প্রথমে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পায় এসআই আনছারুল হক। পরবর্তীতে তিনি বদলী হওয়ায় পুনরায় তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মনিরুল ইসলাম। ইতিমধ্যেই বিষয়টি শাওন মোল্লার সাথে সাংবাদিকদের বিরোধের জের ধরে এ মামলার উদ্ভব হয়েছে বলে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়। তাই শাওন মোল্লা তার বোনকে বাদী করে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে সাংবাদিক প্রভাষক রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চুসহ ৩ জনকে আসামী করেছে বলে সঠিক তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল। পুলিশ এই তথ্যের বিষয়টি মাথায় রেখেই সাংবাদিকদের কোন রকম হয়রানী না করেই নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উম্মোচন করে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রিপোর্টে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, বাদী নুপুরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাবার পর এজাহারের ভিন্নরুপ তথ্য প্রকাশ করে। তাই ১৬১ ধারায় তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। বাদিনীর ভাই সাক্ষী শাওন মোল্লাও ভিন্নরুপ তথ্য দেন। ১৬১ ধারায় তার জবানবন্দীও রেকর্ড করা হয়। এরপর বাদিনী ও তার সাক্ষীদের জবানবন্দী অনুযায়ী শুরু হয় মোবাইল কললিস্ট সংগ্রহের কাজ। বের হয়ে আসতে থাকে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং ক্লু। প্রথমে বাদিনীর মোবাইল সিডিআর পর্যালোচনায় দেখা যায় তিনি তার মামলায় উল্লেখিত সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি ওই দিন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ছিলেন পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকায়। আরও জানা যায়- তিনি ঘটনার আগের দিন খালুর বাড়ি থেকে চলে আসেন।। বিবাদী সাংবাদিক প্রভাষক রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চুর মোবাইল সিডিআর পর্যালোচনায় দেখা যায়- তিনি ছিলেন তার বাস ভবনে। অপর বিবাদী দুজনও কেহই ঘটনার উল্লেখিত সময় সেখানে ছিলেন না। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়- বিবাদীরা ৩ জনই রিপোর্টার্স ইউনিটির স্ব-স্ব দায়িত্বে ছিলেন। এ সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও শাওন মোল্লা ঘনিষ্ট বন্ধু। মিজান বন্ধু শাওন মোল্লা (বাদিনীর ভাই) কে সংগঠনের সদস্য পদ দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাই বিবাদীদের মানসম্মান ক্ষুণ্ন ও সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এই কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে শাওন মোল্লা তার বোনকে বাদী করে মামলা রেকর্ড করায়। তাই মামলার তদন্তকালে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রমাণ মিলেনি। সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় চড়ান্ত রিপোর্টের শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১৭ ধারায় বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রার্থনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ইতিপূর্বে এভাবে ঝালকাঠি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করিয়ে হয়রানি করে আসছিল। সাংবাদিকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করিয়ে ফায়দা হাসিল করাই তাদের কাজ। এমনকি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েও সাংবাদিকদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টির পায়তারা করেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়নি। বরং চিহ্নিত হয়েছে বলে সাংবাদিক সমাজের দাবি। তবে যদি কেহ সাংবাদিক পরিচয়ে বা সাংবাদিক হয়ে কোন অপরাধ করে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রশাসন কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আসিফ মানিক সিকদার সাংবাদিকদের জানান, ‘শাওন মোল্লা ও তার বোন বাদীনি জেসমিন আক্তার নুপুর কখনও নিজে আবচারা কখনও তার কন্যাকে দিয়ে ধর্ষণসহ নানা রকম মিথ্যা ফিটিং মামলার জালে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে মামলা আপোষ করে গাঢাকা দেয়। এটা বাদীনীর ও তার ভাইয়ের এক ধরনের অনৈতিক নিয়মিত ব্যবসা। ঝালকাঠি আদালতে এ রকম বেশ কয়েকটি মামলার ঘটনা আছে। বাদীনি নিজের স্বামীর নামেও হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহাল করার অভিযোগ আছে।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন