২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ৩০ নভেম্বর ২০২২

ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। এমনটি অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই নদীতে ড্রেজার নামিয়ে বালু উত্তোলন শুরু হয়। ঝালকাঠির সুগন্ধা, গাবখান, বাসন্ডা, ধানসিড়ি ও বিষখালী নদীর মোহনায় ২০ থেকে ২৫টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা।

নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামসহ আশপাশের তিন থেকে চারটি গ্রামে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। নদী তীরের বাসিন্দারা জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে সুগন্ধা ও বিষখালী নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রকাশ্যে।

দিনে লুকোচুরি করলেও, রাতে প্রকাশ্যে চলছে ড্রেজার মেশিন। চোখের সামনে মানুষের সহায়-সম্পত্তি সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে বিলীন হতে দেখেও বালু ব্যবসায়ীরা তাদের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকছে না।

বিষখালী নদীর তীরবর্তী দেউরী, ভাটারাকান্দা, সাচিলাপুর, দিয়াকুল, কিস্তাকাঠি, সুগন্ধা নদীতীরের কৃষ্ণকাঠি, কুতুবনগর, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সিকদারপাড়া, ষাইটপাকিয়া, বারইকরণসহ বেশ কয়েকটি গ্রাামের অসংখ্য পরিবার ভিটেবাড়ি হারিয়েছেন ভাঙনে। নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ঝালকাঠি জেলায় সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ভাঙনে স্বাধীনতার পর থেকে বিলিন হয়েছে শতশত একর জমি।

আর সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে অভিযান চালিয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ড্রেজার মালিকদের জেল জরিমানা অব্যাহত রয়েছে। সুগন্ধা নদী তীরবর্তী মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা শাকিউর রহমান সাকিল বলেন, সুগন্ধার তীরে গড়ে ওঠা ঝালকাঠি শহর ও আশেপাশে গ্রাম নদীতেই ভাঙছে।

অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে দিন রাত অবাধে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। তাদের কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন ২০-২৫টি ড্রেজার দিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলন করায় ভেঙে যাচ্ছে নদীর তীর।

অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়েছে। শুধু জরিমানা করেই এদের ঠেকানো যাবে না। ড্রেজার জব্দ করে মালিককে আইনানুযায়ী বেশিদিন কারাদন্ড দিলে বালু উত্তোলন থামানো যেতে পারে।’

কিস্তাকাঠি গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের বাড়ি-ঘর সব নদীতে বিলিন হয়ে গেছে শুধু ড্রেজার দিয়ে বালু কাটায়। নদীতে কোন ঢেউ নেই, স্রোত নেই এরপরেও নদী ভাঙছে। তা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ দেখছেন না কেন? একমাত্র অবৈধভাবে ভাঙন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায়ই নদী ভাঙছে। এটা প্রতিরোধ করা না হলে নদীর তীর ভাঙতেই থাকবে।’

একই এলাকার বাসিন্দা রিপন হোসেন বলেন, ‘বালু উত্তোলনের সঙ্গে প্রভাবশালী একটি চক্র জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না কেউ।

তাদের টাকা আছে, আমরা গরিব মানুষ, কথা বললে বিপদে ফেলবে। আমরা নদী ভাঙন রোধে পদক্ষেপ চাই, পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ‘ড্রেজার দিয়ে দিনের বেলায় নয়, প্রশাসনের নজর এড়াতে রাতেও বালু তোলা হচ্ছে নদী থেকে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নদী থেকে যাতে কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে না পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হাসান বলেন, ‘ইতোমধ্যে নদী ভাঙন রোধে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই ভাঙনকবলিত বেশকিছু এলাকায় কাজ শুরু করা হবে।’

 

10 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন