২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ঝালকাঠি নামকরণের নেপথ্যে…

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪০ অপরাহ্ণ, ০২ নভেম্বর ২০১৮

৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের দেশ বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাথ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।

দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ) ৬৪ জেলা। প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে। তাই বাংলা ট্রিবিউন জার্নিতে ধারাবাহিকভাবে জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

সবুজ মাঠ গাছ-গাছালি, নদী-নালা, খাল-বিল, অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত পরিপাটি জেলা ঝালকাঠি। কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার ধানসিঁড়ি নদী এই জেলায় অবস্থিত। এর আছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। জেলাটি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত হলেও এর কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সুগন্দা, বিষখালি ও ধানসিঁড়ির মতো নদী এই জেলার বুক চিরে প্রবাহিত।

ঝালকাঠি জেলার নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এখানকার জেলে সম্প্রদায়ের ইতিহাস। মধ্যযুগ-পরবর্তী সময়ে সন্ধ্যা, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি ও বিষখালী নদীতীরবর্তী এলাকায় জেলেরা বসতি স্থাপন করে। এর প্রাচীন নাম ছিল ‘মহারাজগঞ্জ’। এখানকার ভূ-স্বামী শ্রী কৈলাশ চন্দ্র জমিদারি বৈঠক সম্পাদন করতেন ও পরবর্তী সময়ে তিনি এই স্থানে একটি বাজার গড়ে তোলেন। এই গঞ্জে জেলেরা জালের কাঠি বিক্রি করতো। এ জালের কাঠি থেকে পর্যায়ক্রমে ‘ঝালকাঠি’ নামকরণ হয় বলে অনেকের ধারণা।

জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে জেলেরা এখানে মাছ শিকারের জন্য এসে যাযাবরের মতো সুগন্ধা নদীর তীরে বাস করতো। এ অঞ্চলের জেলেদের পেশাগত পরিচিতিকে বলা হতো ‘ঝালো’। কবি বিজয়গুপ্ত মনসামঙ্গল কাব্যেও জেলে সম্প্রদায়কে ঝালো নামে উল্লেখ করেছেন। তাদের পাড়াকে বলা হতো ‘ঝালোপাড়া’। জেলেরা বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে এখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। এভাবেই জেলে থেকে ঝালো ও জঙ্গল কেটে বসতি গড়ে তোলার কারণে ‘কাটি’ শব্দের প্রচলন হয়ে দাঁড়ায় ‘ঝালকাটি’। পরবর্তী সময়ে ‘ঝালকাটি’ রূপান্তরিত হয় ‘ঝালকাঠি’তে। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা পায়।

ঝালকাঠি জেলার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে রাজাপুর সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি, কবি জীবনানন্দ দাশের মামা বাড়ি, কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি, সিদ্ধকাঠি জমিদার বাড়ি, শিববাড়ি মন্দির ও ঠাকুরবাড়ি, শেরে বাংলার নানা বাড়ি, মিয়া বাড়ি মসজিদ, গালুয়া পাকা মসজিদ। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো গাবখান সেতু, ধানসিঁড়ি নদী, রূপসা খাল, নেছারাবাদ কমপ্লেক্স, ধর্ম প্রচারক আলহাজ্ব মো. লেহাজ চাঁন চিশতীর (র.) মাজার, হযরত দাউদ শাহের মাজার, পোনাবালিয়া মন্দির, বেশনাই মল্লিকের দীঘি, সিটি পার্ক ইত্যাদি। ঝালকাঠি জেলাকে শিল্পসমৃদ্ধ জেলায় রূপায়িত করেছে শীতল পাটি শিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁত শিল্প ও পান বরজ।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন