১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ট্রলার ছিনতাই করতেই পিতা-পুত্রকে খুন: তিন খুনির স্বীকারোক্তি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৫ অপরাহ্ণ, ০৭ জুলাই ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালের বাকেরগঞ্জের আলোচিত জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচনে সফল হয়েছে পুলিশ। ঘাতকদের গ্রেপ্তার পরবর্তী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রকাশ পেয়েছে পিতা-পুত্রকে নৃংশসভাবে হত্যাকান্ডের নেপথ্য কাহিনী। পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে চাঁই বিক্রেতা হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে ইয়ামিন হাওলাদারকে বাকেরগঞ্জের কবাই ইউনিয়নের পান্ডব নদীতীরে গলাকেটে ও কুপিয়ে হত্যা করে তিন ঘাতক মো. বাদশা হাওলাদার (৩৮), শাহীন খাঁ (২৫) এবং মো: সানি হাওলাদার (১৭)। পরে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওই পিতা-পুত্রের নগদ অর্থ ও ট্রলারটি নিয়ে পালিয়ে যায় খুনিরা।

গত ৩ জুলাইয়ের এই আলোচিত খুনের পর তিন হত্যাকারীকে দু’দিনের মাথায় ছিনতাইয়ের ট্রলারটি বিক্রিকালে গ্রেপ্তার করে রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বরিশালের বাকেরগঞ্জে পিতা-পুত্রের খুন করে ট্রলার নিয়ে পালিয়ে আসার বিষয়টি স্বীকার করে। মঙ্গলবার অপরাহ্নে বরিশাল জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য- গত ৩ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাকেরগঞ্জের কবাই ইউনিয়নের চর লক্ষীপাশা পান্ডব নদীর তীরে একটি বাগান থেকে মো. ইয়ামিন হাওলাদারের (২০) গলাকাটা লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে লাশটি উদ্ধার করলেও পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারছিল না। কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে রাত পোহাতেই ৪ জুলাই সকালে খানিকটা দুরত্বে নদী থেকে যুবকের পিতা হেলাল উদ্দিনের (৫৫) লাশটিও উদ্ধার করে পুলিশ। দুটি লাশ উদ্ধারের পরে পুলিশ নিশ্চিত হয় পিতা-পুত্র ৩ জুলাই ট্রলাযোগে চাঁই বিক্রি করতে বাকেরগঞ্জের বাজারে আসেন। এবং সেখান থেকে ফেরার পথে তাদের খুন করে ঘাতকেরা ‘মায়েরপরশ’ ট্রলার নিয়ে পালিয়ে গেছে। পরবর্তীতে জোড়া খুনের এই ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা গ্রহণ করে ঘাতকদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে।

বরিশাল পুলিশ লাইনসে গতকাল আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার তিন ঘাতক প্রথম দফা কেরানীগঞ্জ ও পরবর্তীতে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে খুনের দায় স্বীকার করেছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুবারচর ও গোমা গ্রামের এই তিন ব্যক্তি পূর্ব পরিকল্পনা করে খুনের ৪/৫ দিন আগে পিতা-পুত্রের সাথে সেলফোনে আলাপ করে চাঁই কেনার প্রস্তাব দেয় এবং ৩ জুলাই তা ট্রলারযোগে বাকেরগঞ্জে নিয়ে আসতে বলেন। সেই অনুযায়ী চাঁই নিয়ে আসলে পান্ডব নদী তীরে ওঠার আগেই খুনি বাদশা হাওলাদার, শাহীন খাঁ এবং মো: সানি হাওলাদার ট্রলারে গিয়ে অস্ত্রের মুখে পিতা-পুত্রকে জিম্মি করে।

আজ দুপুর দেড়টার ওই সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, খুনিরা প্রথমে হেলাল উদ্দিনকে পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং নদীতে ফেলে দেয়। পরে তার ছেলে ইয়ামিন হাওলাদারকে কিছুটা দুরত্বে বেড়িবাধের কাছে নিয়ে গলাকেটে খুন করে মোবাইলসহ নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এবং ট্রলারটিসহ পালিয়ে গিয়ে দুদিনের মাথায় কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়- খুনের কারণ জানতে চাইলে তিন ঘাতক বলে করোনা দুর্যোগে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের দাহিদা মেটাতে পূর্ব পরিকল্পনা করে তারা খুন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

খুনিদের এমন দাবির বিষয়টি স্বীকার করে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন- ঘাতকদের আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বিচারক এই আবেদন মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদে আরও বিস্তারিত কিছু জানা যাবে।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন