২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

তহশীলদার আশরাফের চাকরিটা যেন তার টাকা ছাপা মেশিন!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ, ০৬ আগস্ট ২০২০

মো. জসীম উদ্দিন, বাউফল:: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশীলদার) মোঃ আশরাফ আলী খানের ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়ম করে অঢেল সম্পত্তি ও নগদ টাকার মালিক হয়েছেন। তার চাকরিটা যেন টাকা ছাপাবার মেশিন। তহশীলদার আশ্রাফের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দাখিল করেছেন এক ভুক্তভোগী। যদিও দীর্ঘদিন থেকেই সরকারি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের নানান অভিযোগ শোনা যাচ্ছিলো। এবার একেবারে লিখিত আকারেই পাওয়া গেলো।

শনিবার (১৯ জুলাই) পটুয়াখালীর বাউফল সদর ইউনিয়নের ওই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মো: রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে দুদকে ওই অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তা উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামের আব্দুর রহমান খানের ছেলে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত আশরাফ আলী খান ১৯৯৪ সালে ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ওই সময়ে তার বাবা ছিলেন একজন হতদরিদ্র ও ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী। চাকরীতে যোগদানের পূর্বে তাদের একটি খরের ঘর ছাড়া তেমন কিছুই ছিলোনা। ওই সময় তার বাবাও ছিলেন ধার দেনায় জর্জরিত। পরে ১৯৯৪ সালে চাকরিতে যোগদানের পরপরই তিনি পেয়ে বসেন টাকা ছাপাবার মেশিন । যার গুনে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ব্যাপক অর্থের মালিক হয়ে যান।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, চাকরি নেওয়ার দুই বছর পার হলেই ১৯৯৬ সালে বাবার সেই পুরানো খরের ঘর ভেঙ্গে আনুমানিক প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করে গৃহনির্মাণ করেন ভূমি কর্মকর্তা আশরাফ। অথচ তখন তার মাসিক সর্বমোট বেতন ছিলো চার হাজার টাকার কাছাকাছি। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৮ বছরে নামে-বেনামে কমপক্ষ ৫০ লাখ টাকার ধানি জমি ক্রয় করেন এই আশরাফ। এছাড়া ব্যাংকে জমা রাখেন বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ।

এদিকে ২০০৫ সালে পটুয়াখালী সদর থানার (বর্তমানে পৌর শহরে) বনানী হোটেল সংলগ্ন এলাকায় তুষার ভিলা নামক একটি বাড়ী ১৫ লাখ টাকায় আশরাফ তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমের নামে ক্রয় করে। কিন্তু দলিলে প্রকৃত মূল্যকে গোপন করে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। আর দুর্নীতিকে ঢাকতে সুচতুর আশরাফ নিজের আয়কর ফাইল খোলার সময় আয়ের উৎস্য হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন তার শশুর উপহার হিসেবে তাকে টাকা দিয়েছেন এবং সেই টাকা দিয়ে তার স্ত্রী হাঁস-মুরগী পালন করে তার ওই বাড়িটি ক্রয় করেছেন। বর্তমানে সেই তুষার ভিলা নামক বাড়িটি পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে রুপন্তিত হয়েছে। ২০০৬ সালে পটুয়াখালী সদরে রুস্তুম মৃধা ব্রিজ সংলগ্ন রিয়াজুল জান্নাত মসজিদ সড়কের পাশে সাড়ে চার শতক জমি তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমের নামে ক্রয় করেন। ওই জমির দলিলে মূল্য উল্লেখ করেছেন ৮০ হাজার টাকা বাস্তবে ব্যয় ক্রয় মূল্য ২ লক্ষ টাকার ওপরে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, তহশীলদার আশরাফ নিজ গ্রামের বাড়ীতে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে ‘আসাদুজ্জামান তুষার নূরানী এবং হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা’ নির্মাণ করেন। তবে নির্মাণ ব্যয়ের জন্য কোন ধরণের সরকারি-বেসরকারি অনুদান তিনি পাননি। ওই প্রতিষ্ঠানে কোনো আয় না থাকলেও প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয় প্রতিষ্ঠাতা আশরাফকে। এছাড়া ২০১৯ সালে দুর্নীতি থেকে রক্ষা পেতে নিজের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার নাম ব্যবহার করে পটুয়াখালী চৌরাস্তাা সংলগ্ন এলাকায় ৪৫ লাখ টাকায় ৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেন ওই তহশীলদার। যাহার জেএল নং ৩৮, এসএ খতিয়ান নং- ২১২৩, দাগ নম্বর ৭৯৬ ও ৮০৪।

জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কবির হোসেনের মধ্যস্ততায় ৬ লাখ টাকা দিয়ে আশরাফ একটি জমির বায়না চুক্তি করেন। তাছাড়া তার নামে-বেনামে আরো অনেক বাড়ি ও সম্পত্তি রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, তহশীলদার আশরাফ আলী বর্তমানে সর্বসাকুল্যে ২৫ হাজার ৫৯৮ টাকা বেতন পান। তবে এই বেতন দিয়ে কিভাবে তিনি তার মাদ্রাসা ও এতিমখানায় প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা দিয়ে আবার নিজের সংসার পরিচালনা ও সন্তানদের লেখাপড়া খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে কোটি কোটি টাকার জমি ও বাড়ির মালিকও হয়েছেন।

আশরাফের এলাকার লোকজন জানান, খরকুটার ঘর থেকে এখন কোটি কোটি টাকা ও বিস্তর সম্পত্তির মালিক আশরাফ। তার চাকরিটা মেন টাকা ছাপাবার মেশিন। সরকারি ওই চাকুরিতে আশরাফ যোগদান করার পরই টাকা ছাপাবার মেশিন পেয়ে তার ভাগ্যের অসম্ভবনীয় পরিবর্তন ঘটে।

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত তহশীলদার অশরাফ আলী খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বরিশালটাইমসকে জানান, ‘আমার মুদি মোনহারী ও ভূসা মালের ব্যবসা ছিলো। কর্মচারী রেখে সেই দোকান আমার স্ত্রী পরিচালনা করতো। সেখান থেকে যে আয় হতো তা দিয়ে এসব করেছে। তাছাড়া অনেকগুলো অভিযোগ সত্য নয়। আমি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে এসব করেছি’।

বাউফল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনিচুর রহমান বালী বরিশালটাইমসকে জানান, ‘এসব অভিযোগ সম্পর্কে আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।’

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন