২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

তিনি নলছিটির মগড়ের রাজা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, ২৫ আগস্ট ২০১৯

বিশেষ প্রতিনিধি : তিনিই ঝালকাঠির জেলার নলছিটি উপজেলার সর্বেসর্বা। নলছিটি উপজেলার মগড় ইউনিয়নের তিনি যেনো রাজাও। নাম তার এনামুল হক শাহীন। যিনি কুখ্যাত মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। বেশ কয়েক দিন আত্মগোপনে থাকার পর অদৃশ্য শক্তিকে ফিরে এসে ফের স্বরূপে নলছিটির মগড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক বাণিজ্য,অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের অনুঘটক এই কুখ্যাত মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন। সা¤প্রতিক সময়ে বরিশালে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় (প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায়) অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে উঠে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতার কারণে আত্মগোপনে চলে যায় মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন। ২৪ আগস্ট শনিবার মাদক সাম্রাজ্যে ফিরে এসেই আরো যেনো ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করে বিচরন শুরু করে শাহীন। গোটা মগড় ইউনিয়ন ও আশপাশ এলাকায় তার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীকে নতুনরূপে মনোবল চাঙ্গা করে অপরাধ জগতের মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এরফলে জনমনে আবারো আতঙ্কের দানাবাধে। প্রতিবাদের জো নেই, প্রতিবাদ করলে কারো রেহাই নেই। এ কারণে ভুক্তভোগীরা নিরবে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে। বিচারের বাণী নিরবে নিবৃত্তে কাঁদে। আইন কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলে আসলেও এ যেনো দেখার কেউ নেই। জনমনের প্রশ্ন – তবে কী এরকম একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী মাদক সম্রাট হিসেবে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে আখ্যায়িত এই এনামুল হক শাহীন ও তার সহযোগীদের জিম্মিদশায়-ই থাকবে অসহায়,নীরিহ,নিপীড়িত,ভুক্তভোগী সাধারন মানুষ ? এই সন্ত্রাসের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার কী কোন উপায় নেই, নেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা ? তবুও সাধারন মানুষের আস্তা রয়েছে যে- মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন ও তার অস্ত্রধারী বাহিনীর জিম্মিদশা থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হস্থক্ষেপে মুক্তি মিলবে। এরকমই প্রত্যাশা জনমনের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে-ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার মগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই শাহীন আরো আগেই এলাকায় গড়ে তুলেছে সংঘবদ্ধ এক ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্র। চেয়ারম্যান শাহীন এর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাঁর ভয়ে তটস্থ এলাকার সাধারন মানুষ। এরফলে এলাকার শান্তিপ্রয় নারী পুরুষ অতিষ্ঠ, তার অস্ত্রধারী বাহিনীর ভয়ে সাধারন জনগণ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। মাদক বাণিজ্য, অস্ত্র ব্যবসা, ভাড়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, কিলিং মিশনসহ অন্তহীন অভিযোগ রয়েছে মাদক সম্রাট শাহীনের বিরুদ্ধে । এমনকি যৌণ নিপীড়নকারীও এই শাহীন। এবং তার সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের টার্গেট করে যৌণ হয়রানী করার অভিযোগও রয়েছে মাদক সম্রাট শাহীনের বিরুদ্ধে। যৌণ হয়রানীকারীদের অন্যতম শেল্টারদাতাও অস্ত্র ব্যবসায়ী এনামুল হক শাহীন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। অসংখ্য অপকর্মের হোতা এনামুল হক শাহীন বেপরোয়া হয়ে পুরো মগড়সহ আশপাশ এলাকায় মাদক,অস্ত্র ব্যবসাসহ ভাড়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মরিয়া হয়ে উঠে। অন্তহীন অভিযোগ আর অসংখ্য মামলা রয়েছে এনামুল হক শাহীনের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন হচ্ছে-যেখানে সরকার মাদক,যৌণ হয়রানী,অস্ত্র ব্যবসায়ী,সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে অবস্থান করছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করে মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি যৌণ নিপীড়নকারী বা যৌণহয়রানীকারীদের বিরুদ্ধেও সরকার জিরো টলারেন্স। এরপরও একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, যিনি মাদক সম্রাট হিসেবে বহুল পরিচিত। মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন, তার ভাই আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ী সবুজ হাওলাদারের বিরুদ্ধ অসংখ্যবার বিভিন্ন পত্রিকায় মিডিয়ার শিরোনামও বনে গেছেন। তবুও কোন এমন অদৃশ্য শক্তিতে মাদক সম্রাট শাহীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বহাল তবিয়তে থেকে অপরাধের স্বর্গ রাজ্যে টিকিয়ে রাখছেন। জনশ্র“তি রয়েছে-স্থানীয় থানা পুলিশের কয়েক অসাধু পুলিশ সদস্যদের সাথে গোপন বুনিবনায় গভীর সখ্যতায় মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন তার অপরাধ সাম্রাজ্যের পরিধি বেড়েই চলছে। এ যেনো আরেক এরশাদ শিকদার। অসমর্থিত একাধিক সূত্রের ভাষ্য- বর্তমান সরকার যেখানে মাদক ব্যবসায়ী,সন্ত্রাসী, যৌণহয়রানীকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে, এরকম পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের অসাধু পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে গোপন লেনদেনের বুনিবনায় একজন ভয়ঙ্কর অপরাধী কিভাবে কোন শক্তির শেল্টারে অপরাধের ফিরিস্তি রচনা করে চলছেন ।

কে এই মাদক সম্রাট শাহীন : এনামুল হক শাহীন নলছিটির মগড় গ্রামের মোশারেফ হোসেনের ছেলে । ২০১৬ সালের ২২ মার্চ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচন নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে থেকে শাহীন এলাকায় ফেনসিডিলের কারবার করতেন। চেয়ারম্যান হয়ে ফেনসিডিলের কারবার প্রসার করেন। ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর নলছিটির বড়প্রেমহার গ্রামীণফোনের টাওয়ার-সংলগ্ন ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি প্রাইভেট কারে তল­াশি চালিয়ে দুই হাজার দুই বোতল ফেনসিডিলসহ শাহীনকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় শাহীনের সহযোগী প্রাইভেট কারের চালক মাসুম বিল­াহকে আটক করা হয় । এ ঘটনায় বরিশাল র‌্যাব-৮-এর উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) দেলোয়ার হোসেন নলছিটি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন । পরবর্তীতে শাহীন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেড়িয়ে গড়ে তোলেন মাদক আখড়া। এখানে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বাকেরগঞ্জ থেকে ক্রেতারা এসে ফেনসিডিল সেবন করত। ২০১২ সালের ২৭ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম আসামি শাহীন ও মাসুমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ঝালকাঠির পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি পাঠানো হয়। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয় নলছিটি থানায় । অপরদিকে বড় ভাইয়ের দেখানো পথে হাঁটছেন ছোট ভাই সবুজ হাওলাদার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মগড় এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করছেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপপরিদর্শক (এসআই) শামীমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই গ্রামের জামাল হাওলাদারের বাড়িতে অভিযান চালায়। সবুজ ও তাঁর সহযোগী খাইরুল হাসান ঘরের ভেতরে ইয়াবা বিক্রির জন্য প্যাকেট করছিলেন। পুলিশ সবুজকে গ্রেপ্তার করলেও পালিয়ে যান খাইরুল। এ সময় ১০০ পিস ইয়াবা, নগদ ৫০০ টাকা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। মগড় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভাই ও আমি দুজনই ষড়যন্ত্রের শিকার। সমাজে আমাদের হেয় করার জন্য একটি পক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে। আমি ও আমার ভাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই ।’

বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে যৌণ হয়রানী ও হুমকী প্রসঙ্গে বলেন- একটি বিষয়ে ওই কলেজ ছাত্রীর পিতার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাকে ফোনে ধরিয়ে না দিয়ে কলেজ ছাত্রী ফোন ধরলে আমার মাথাটা গরম হয়ে যায়। এ কারণে কিছুটা কলেজ ছাত্রীকে বকাবকি করেছি। নোংরা ভাষায় গালাগাল এবং কলেজ ছাত্রীকে দেখিয়ে দেয়ার হুমকী প্রসঙ্গে বলেন-তখন মাথাটা অনেক গরম ছিলো । দ্বাম্ভিকতার সুরে বলেন-আমি এলাকার চেয়ারম্যান,আমি যা বলবো তাই হবে। এদিকে কলেজ ছাত্রী দুই বোনকে মগড় ইউনিয়নের ডুবিল গ্রামের মুনসুর আলী হাওলাদারের বখাটে পুত্র সবুজ কর্তৃক যৌণহয়রানী করায় নলছিটি থানায় একটি জিডি করা হয়। যার জিডি নং- ৭৯৪, তারিখ : ২১/০৭/২০১৯। বখাটের পক্ষাবলম্বন করে সেই জিডি তুলে নেয়ার জন্য বার বার কলেজ ছাত্রী ও তার পরিবারকে বিভিন্ন কায়দায় চাপ প্রয়োগ করে আসছে চেয়ারম্যান শাহীন ও অপরাধী চক্র। পাশাপাশি এলাকার কয়েক মোড়ল। এক্ষেত্রে স্থানীয় থানা প্রশাসনের ভূমিকা চরম প্রশ্নবিদ্ধ। চেয়ারম্যানের কথামতো জিডি না উঠানোর ফলে ২৮ জুলাই দুপুর ১২ টা ৮ মিনিটে ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজ ছাত্রীর সেল ফোনে চরম অসভ্য,বর্বর ভাষায় গালাগাল করে দেখিয়ে দেয়ার হুমকী প্রদান করেন। পরিশেষে মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন ও তার সহযোগীদের লাগাম টেনে ধরতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন