১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

তুমি শোকের ভেলায় ভাসিয়ে দিয়েই গেলে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:২২ পূর্বাহ্ণ, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শাকিব বিপ্লব ও সাইফুল ইসলাম:: জীবন কারও জন্য থেমে থাকে না। আবার একাকী চলা যায় না । কিন্তু বিধির বিধান বা অমোঘ সত্য একদিন একাকী চলে যেতে হয় এই ধরাধাম থেকে। সেই বিদায় যদি হয় অকাল-অস্বাভাবিক তবে নিশ্চিই আপনজনতো আছেই, চেনাজানা অনেকের মনে রেখাপাত করে । যেমন কাজী আনোয়ার পারভেজের পরোপারে চলে যাওয়ার বাস্তবিক ঘটনা কাদিয়েছে বরিশালের এক অঞ্চলের আম জনতাকে। মিডিয়া জগতকে স্তব্ধ করেছে শোকে।

বলা যায় শুধু শহরতলীর কাশিপুরের কাজী পরিবার নয়, বরিশাল মিডিয়া শোকের সাগরে ভাসছে।
টগবগে এই যুবক মাত্র বছর খানিক পূর্বে বরিশালে আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজকের বার্তার নির্বাহী সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তার মধ্যে অতটা সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব না দেখা গেলেও মিডিয়ার গন্ডির মধ্যে ঘুরপাকে অন্যান্য অগ্রজ-অনুজ সংবাদকর্মীদের সাথে তার সক্ষতা অল্পদিনেই গভিরতায় পৌছেছিলো। মানুষ হিসেবে আন্তরিকতার অভাব ছিলো না। না বললেই নয়, বরিশাল মিডিয়ায় বিভাজন থাকলেও রানার সাথে ছিলো সকলের সম্পর্কের সেতুবন্ধন। যে কারনে ঢাকা ফেরত এই যুবক বরিশাল নগরীতে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলো।

ভাবা যায়না ৩৮ বছর বয়সী রানা এভাবে না ফেরার দেশে শুক্রবার রাতে রওনা দিলেন। অথচ সন্ধায় বরিশাল প্রেসক্লাবে সহকর্মীদের সাথে হাসি ঠাট্টা ও পেয়ারা বানানোর স্বাদ নিয়ে তৃপ্ত হয়ে হেসেছিলো অনেকক্ষণ। তখনো বোঝা যায়নি এটাই তার প্রেস ক্লাবে শেষ আসা। সহকর্মীদের কাছেও বলে যেতে পারেনি বরিশাল মিডিয়ায় অবস্থানকালে দু:খ-বেদনা বুকেচেপে কিভাবে চলছিলেন। নেতৃত্বের আগামীর প্রজন্ম হিসেবে তার চিন্তা ধারার ব্যাপকতা কি ছিলো। হয়তো শেষ বিদায় এবং প্রেসক্লাবে পদচারণা ফেলে জীবনের শেষ অধ্যায়ের একটি স্মৃতি রেখে গেলেন। আফসোস মেধাবী এই তরুণ নিজেকে মেলে ধরার বৃহৎ বৃত্ত খুঁজে পেয়েছিলেন পারিবারিক সূত্রে। পিতা সিনিয়র সাংবাদিক কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল মাতা মেহেরুন্নেসা বেগম, বড় ভাই কাজী রাসেল ও মামা কাজী আল মামুন প্রেসক্লাবের দীর্ঘ নেতৃত্বে রয়েছেন। আছে তাদের মালিকানাধীন বরিশালের প্রচার বহুল দৈনিক পত্রিকা আজকের বার্তা। অথচ সাদাসিধে গোছের এই যুবকের চলন-বলনে আত্ব অহমিকাতো ছিলোই না, এমনকি নেতৃত্ব বা সাংবাদিক হিসেবে বড়কোনো স্থানে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার বদলে সাধারন সংবাদকর্মী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন। সেই যুবক আচমকা কাউকে না জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় বেদনার রক্তিম সূর্যে বরিশালে ছড়িয়ে পরে রানার জীবনাসানের খবর।

পারিবারিক সূত্র জানায়, রাত যখন ১২ টা তখন শহর থেকে ঘরে ফিরে রাতের খাবার শেষে বিছানায় যাবার কিছুক্ষণ পরেই তার বুকে ব্যথা অনুভব হয়। প্রিয়তমা স্ত্রীকে পানি আনার অনুরোধ জানিয়ে শেষ শব্দটি উচ্চারন করার পর নিথর হয়ে পরে তার দেহখানি। বাঁচানোর প্রানপন চেস্টায় রাত সাড়ে ১.৩০ মিনিটে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মূহুর্তে পরিবারের সদস্যেদের অজর ধারার কান্নায় রাতের অন্ধকার গভিরতা ভেদ করে রানা মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরে চেনাজানা মহলে। অনেকের কাছে এ খবর আকাশ ভেঙে পরার সমতুল্য মনে হওয়ায় নিশ্চিত হতে ছুটে যায় শেবাচিমে। মৃত্যু যে অমোগ সত্য তা রানার নিস্তব্দ প্রান আবারও জানিয়ে গেলো, বিধাতা ডাক দিলে আর ফেরা যায় না। প্রিয়জনদের শত আকুতিও রক্ষাকরা সম্ভব হয় না এ যত্রাপথে।

শুক্রবার দিনব্যাপি যে রানা মোটরবাইক নিয়ে বরিশাল শহর ঘুরেফিরে আপন নীড়ে আশ্রয় নিয়েছিলো নির্ঘুম রাতের প্রত্যাশায় । কিন্তু সেই ঘুম অধরাই রয়ে গেলো, পরিনত হলো চিরনিদ্রা। শনিবার সকলে রানার মুখখানি দেখতে কাশিপুর কাজীবাড়ি মুখে ঢলনামে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, পরিচিত বন্ধুজনসহ গ্রামবাসির শোকতুর মনখানি। এ দৃশ্য কি সহনীয় হয়, বাবার কাদে বইবে লাশ, মা হারাবে গর্ভের সন্তান, স্ত্রী হবেন অতীত বহনে একাকি জীবনে ঘরকোনে।

কাজীবাড়িতে লাশের সামনে স্বজনদের গগন বিদারিত কান্নায় অনেকে নিজের অশ্রু সংবরন করতে পারেনি। দুপুরে কাজীবাড়ি মাদ্রাসা মাঠে জানাজা পূর্ব পিতা কাজী নাসির উদ্দিন বাবুলের প্রয়াত পুত্র রানাকে নিয়ে অতীত স্মৃতি সম্বলিত আবেগঘন বক্তব্যে সকলের চোখে অশ্রু যেনো স্রোত ধারার মত বইতে শুরু করে। এর পর নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির আঙ্গিনায় সাজানো চিরনিদ্রার কুঠিরে। অথচ খানিক দুরেই প্রসাদসম ভবন হবে রানা শুন্য। কবরে সাহিত করার পর পিতা ও তার দুই ভাইসহ নিকট স্বজনেরা হারানোর বেদনায় যেনো মূর্তির প্রতিছবি ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে মা মেহেরুন্নেছা আফরোজ ও সহধর্মীনি সাবরিনার বুক ভাঙা চিৎকার কেপে ওঠে সেখানে সমবেদনা জানাতে শরিক হওয়া আপামর জনতার। সহধর্মীনির কান্নায় বলে দেয় শোকের ভেলায় শুধু তিনি নয়, ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন আপন ও পরিচিত জন সকলকে।

প্রাণাচ্ছল আবেগি রানার এই বিদায় মনে রাখবে বরিশাল মিডিয়া, যেমনটি অতীতের প্রয়াত সংবাদকর্মীদের মখবয় ও কর্মজীবন। আত্মার শান্তি পাক সকলের। যুবক রানা বেহেস্তের পথেই অগ্রসর হয়েছেন এমন প্রত্যাশাই রইলো আমার মত ক্ষুদ্ধ এক সংবাদকর্মীর সহমমিতার মঞ্চ থেকে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন