ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. ইয়ামিন। রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার বাসিন্দা তিনি। বৃস্পতিবার বিকেলে তার মোবাইলে পর পর দুটি ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) আসে। ডাচ-বাংলা মোবইল ব্যাংকিং থেকে। দুটি বার্তাই ছিল টাকা উত্তোলনের। তবে এই টাকা তুলতে ইয়ামিনের কোনো ভূমিকা ছিল না। তিনি ব্যালেন্স চেক করে দেখেন, তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা উধাও।
কষ্টার্জিত টাকা অন্যের পকেটে যাওয়ার বিষয়টি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের হেল্প লাইনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে জানান ইয়ামিন। বিষয়টি স্বীকার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগী এই গ্রাহককে জানান, ফরিদপুর শহরের একটি বুথ থেকে কোনো এক ব্যক্তি টাকা তুলেছেন। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন বলে ইয়ামিনকে জানান।
টাকা হারিয়ে ইয়ামিন শনিবার মুঠোফোনে বলেন, ‘টাকা সেভ রাখার জন্যই তো মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকে রাখি। কিন্তু এখন দেখতেছি, পুরোটাই অনিরাপদ। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো জোরালো ভূমিকা দরকার। তা নাহলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর গ্রাহকের আস্থা দিন দিন কমে যাবে।’
গত মাসে তিন ব্যাংকের ছয়টি এটিএম বুথ থেকে ২০ লাখেরও বেশি টাকা চুরির ঘটনায় দেশে সাড়া পড়ে যায়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও টাকা চুরির ঘটনাকে ব্যাংকিং খাতের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, এসব ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টির পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ব্যাংক গ্রাহকরা। সবকিছু যখন ম্যানুয়ালে চলছিল তখনও চুরি হয়েছে। এখন ডিজিটাল হয়েছে, ফলে চুরির ধরন পরিবর্তন হয়ে ডিজিটাল চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে আস্থাহীনতার পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘এসব ঘটনায় কার্ডধারীর সঙ্গে কথা বলে দ্রুত কার্ডগুলো নিষ্ক্রিয় করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ব্যবস্থাও নিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কার্ড নিষ্ক্রিয় করে তার বিপরীতে গ্রাহকদের বিকল্প কার্ডও সরবরাহ করা হয়েছে।’
এর আগের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জালিয়াতরা ছয়টি বুথে স্কিমিং ডিভাইস ও ভিডিও ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছিল। এর মাধ্যমে তারা বুথে ঢোকানো কার্ডের তথ্য ও পিন নম্বর জেনে গেছে। এরপর ডুপ্লিকেট কার্ড তৈরি করে তারা টাকা তোলার কাজটি সেরেছে।
এটিএম বুথে এসব জালিয়াতির শিকার গ্রাহকদের ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের তালিকা তৈরি করে গ্রাহকদের অবহিতকরণ, ওসব কার্ড বাতিল এবং এর পরিবর্তে নতুন কার্ড ইস্যুর নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে মো. ইয়ামিনসহ যেসব গ্রাহক নতুন করে জালিয়াতির শিকার হয়েছেন, তারা আশা করছেন, তাদের জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংক এমন নির্দেশনা দেবে।
এটিএম জালিয়াতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রাক্তন গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, ব্যাংকের দুর্বলতার কারণেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে। ফলে তারা দায় এড়াতে পারে না। তাদের দুর্বলতার জন্য সাধারণ গ্রাহক কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে? কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নিলে ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা হারাবে।’
রাস্তার মোড়ে, যেখানে-সেখানে অনিরাপদ স্থানে বুথ স্থাপন করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও আইটি অফিস এবং তদারকি আরো বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি সিকিউরিটি গার্ডদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সিসি ক্যামেরাগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা দরকার।’
জাতীয় খবর