২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

দাফনের প্রস্তুতিকালে নড়েচড়ে উঠল শিশু! হাসপাতালে স্বজনদের বিক্ষোভ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩২ অপরাহ্ণ, ২০ মে ২০২২

দাফনের প্রস্তুতিকালে নড়েচড়ে উঠল শিশু! হাসপাতালে স্বজনদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় শুক্রবার সকালে পুকুরের পানিতে পড়ে যায় এক শিশু। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্বজনেরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সাইমুন নামের দুই বছর বয়সি ওই শিশুকে নিয়ে স্বজনেরা নিজ গ্রাম আহম্মদাবাদ বেতালে চলে যান এবং সেখানে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছেÑ দাফনপ্রস্তুতির মধ্যে শিশুটি নড়েচড়ে ওঠে এবং মুখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। এতে স্বজনদের ক্ষোভের সৃষ্টি হলে ফের শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ডাক্তারের ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এতে স্থানীয় লোকজনও অংশ নিলে হাসপাতাল চত্ত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ গিয়ে পরিবেশ শান্ত করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছেÑ উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের আহম্মদাবাদ বেতাল গ্রামের রাজমিস্ত্রি মো. সুমনের দুই বছরের শিশু সাইমুন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির উঠানের পাশে পুকুর পাড়ে খেলা করতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। ওই সময় শিশুটির মা উঠানে ধান সিদ্ধ করছিলেন। তাৎক্ষণিক শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় পুকুর থেকে তুলে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুব্রতদেব পাল শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে। তখন সময় সকাল ১০টা ৫ মিনিট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ডাক্তার সাইমুনকে মৃত ঘোষণা করার গ্রামে নিয়ে দাফনপ্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু এরই মধ্যে সে নড়েচড়ে ওঠে এবং মুখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ফলে ধারণা মেলে প্রাণ যাওয়ার আগেই ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেছে। এসময় তাকে স্বজনেরা ফের দ্রুত একই হাসপাতালে নিয়ে যায়। এবং সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুব্রতদেব পালের শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ দেখান। এসময় স্থানীয়রা তাদের সাথে একত্রিত হলে হাসপাতাল চত্ত্বর সরগরম হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সেখানে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করা হয়। এবং দ্বিতীয় দফায় শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তবে শেষাবধি শিশুটি বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

বিয়োগান্তের আগেই মৃত ঘোষণার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে কর্মরত ডা. সুব্রতদেব পাল। এই চিকিৎসকের দাবিÑ প্রথম দফায় শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই মৃত্যু হয়েছে। তারপরেও স্বজনদের আবদারের প্রেক্ষিতে অক্সিজেন দেওয়া ও ইসিজি করাসহ সবধরণের চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে জীবিত আছে দাবি করে স্বজনেরা ফের শিশুটিকে নিয়ে আসলে আবারও অক্সিজেন দেওয়া ও ইসিজি করা হয়। কিন্তু একই রেজাল্ট এসেছে। পরপরেও স্বজনেরা এই ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে শাস্তি দাবি করে হাসপাতাল চত্ত্বরে বিক্ষোভ করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং লাশটি স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়।

বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন জানান, প্রাণ যাওয়ার আগে শিশুকে মৃত ঘোষণা করার অভিযোগে স্বজনেরা হাসপাতালে বিক্ষোভ করে এবং চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করে। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে আইনি আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিলে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আসে। এসময় স্বজনদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, জানান ওসি।’

 

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন